নবতিপর বৃদ্ধদের হারিয়ে যাওয়ার রহস্য

বৃদ্ধদের আয়ুষ্কাল-বিষয়ক পরিসংখ্যান যেভাবে তৈরি করা হয়, তা সঠিক নয়। এ কারণে বৃদ্ধদের প্রকৃত সংখ্যা ও পরিসংখ্যানের মধ্যে একটা ফারাক থাকে। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
বৃদ্ধদের আয়ুষ্কাল-বিষয়ক পরিসংখ্যান যেভাবে তৈরি করা হয়, তা সঠিক নয়। এ কারণে বৃদ্ধদের প্রকৃত সংখ্যা ও পরিসংখ্যানের মধ্যে একটা ফারাক থাকে। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

বিশ্বে হাজার হাজার বৃদ্ধের কোনো খোঁজ নেই। যুক্তরাজ্যে সর্বশেষ আদমশুমারিতে দেখা যায়, ৯০ বছর বয়সী বা নবতিপর মানুষ সংখ্যায় যতটা আশা করা হয়েছিল, বাস্তবে সংখ্যাটা অনেক কম। যুক্তরাষ্ট্রে চালানো আদমশুমারিতে শতবর্ষীদের গুনতে গিয়েও একই ঘটনা ঘটে। অনুমিত সংখ্যার চেয়ে এসব বৃদ্ধের সংখ্যা কম হওয়ার কারণটা কী? তাঁদের এই হারিয়ে যাওয়ার রহস্যটা কী? বিশ্বে গত কয়েক দশকে মানুষের আয়ুষ্কালে বিস্ময়কর অগ্রগতি হয়েছে। এতে নবতিপর বা শতবর্ষীদের সংখ্যাও বাড়ছে। কিন্তু আদমশুমারি বলছে ভিন্ন কথা। তবে কি মানুষের আয়ুষ্কালে উল্টো হাওয়া লেগেছে? বৃদ্ধদের হারিয়ে যাওয়ার এই রহস্য নিয়ে বিবিসি অনলাইনের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে জানানো হয়, বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, গত কয়েক দশকে মানুষের আয়ুষ্কাল লক্ষণীয়ভাবে বেড়েছে। শিশুমৃত্যুর হার কমেছে, বিশেষ করে যুক্তরাজ্যে মানুষের অবসর-পরবর্তী আয়ু  বেশ বেড়েছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক পার্টনারশিপ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির দীর্ঘায়ু বিভাগের পরিচালক রিচার্ড উইলেটসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে মাত্র তিন দশকে অবসরপ্রাপ্তদের আয়ুষ্কাল ৫০ শতাংশ বেড়েছে। এ ক্ষেত্রে ২০১১ সালের আদমশুমারির প্রতিবেদন বিস্ময়কর। ওই প্রতিবেদনে দেখা যায়, পূর্ব ধারণার চেয়ে নবতিপর মানুষের সংখ্যা ৩০ হাজার কম। এই সংখ্যা চার লাখ ৫৭ হাজার বলে ধারণা করা হচ্ছিল। কিন্তু আদমশুমারিতে পাওয়া যায় চার লাখ ২৯ হাজার। এর মধ্যে পুরুষ ১৫ শতাংশ ও নারী ৫ শতাংশ কম। আদমশুমারিতে শতবর্ষীদের সংখ্যা প্রত্যাশার চেয়ে আরও অনেক কম পাওয়া গেছে।

একই চিত্র দেখা গেছে যুক্তরাষ্ট্রে। ২০০৪ সালের এক তথ্যে উল্লেখ করা হয়, ২০১০ সালনাগাদ দেশটিতে শত বা তদূর্ধ্ব বয়সী মানুষের সংখ্যা হবে এক লাখ ১৪ হাজার। কিন্তু ২০১০ সালের আদমশুমারিতে দেখা যায়, এই সংখ্যা অর্ধেকেরও কম।

তাহলে বৃদ্ধরা কি হারিয়ে যাচ্ছেন? যাচ্ছেনই বা কোথায়?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোথাও হারাননি না বৃদ্ধরা। দুঃখজনক হলো, তাঁরা আসলে মারা যাচ্ছেন। পরিসংখ্যানবিদেরা যতটা অনুমান করেন, বৃদ্ধরা ততটা বাঁচেন না। বৃদ্ধদের আয়ুষ্কাল-বিষয়ক পরিসংখ্যান যেভাবে তৈরি করা হয়, তা সঠিক নয়। এ কারণে বৃদ্ধদের প্রকৃত সংখ্যা ও পরিসংখ্যানের মধ্যে একটা ফারাক থাকে।

বিমা কর্মকর্তা রিচার্ড উইলেটসের মতে, তথ্য-সংগ্রহে পদ্ধতিগত ভুলের কারণে এমনটা হচ্ছে। আরও সুস্পষ্ট করে বললে, মৃত্যু ও জীবনকালের হিসাবটা একটু বেশিমাত্রায়ই ইতিবাচক।

জীবনকালের হিসাব ইতিবাচক হওয়ার পেছনে বেশ কিছু বাস্তব সত্যও রয়েছে। জার্মানির জনমিতিক বিশেষজ্ঞ জেমস থাউপেলের মতে, অতীতে অনেকে দেশেই প্রতি দশকে আড়াই বছর করে আয়ুষ্কাল বাড়তে দেখা গেছে। বৃদ্ধির এই হার বছরে তিন মাস এবং দিনে ছয় ঘণ্টা।

২০০ বছর ধরে এই প্রবণতা চলছে। এর পেছনে অবদান রেখেছে শিশুমৃত্যু ও মাতৃমৃত্যু হ্রাস। ২০ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ্বে ধূমপানের হার কমে যাওয়া। তবে বয়স্কদের মধ্যে বাড়ছে রক্তচাপ, স্থূলতা, শরীরচর্চার অভাব।