ইয়েমেনে আল-কায়েদার হামলার ষড়যন্ত্র নস্যাৎ

ইয়েমেন সরকার আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী সংগঠন আল-কায়েদার হামলার ষড়যন্ত্র নাকচ করে দিয়েছে বলে দাবি করেছে। দেশটির প্রধান বন্দরগুলো নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে সরকার।

এদিকে সন্ত্রাসী হামলা নিয়ে ইয়েমেনসহ বিশ্বের অনেক স্থানে মার্কিন সতর্কতার প্রেক্ষাপটে গতকাল বুধবার দেশটিতে আবার ড্রোন (মানুষবিহীন বিমান) হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এতে আল-কায়েদার সদস্য বলে সন্দেহভাজন ছয়জন নিহত হয়েছেন।

জঙ্গি হামলার আশঙ্কায় ইয়েমেনের মার্কিন ও ব্রিটিশ দূতাবাস থেকে কিছু কর্মী প্রত্যাহার করার এক দিন পরই ইয়েমেন সরকার আল-কায়েদার হামলার ষড়যন্ত্র ভন্ডুল করার কথা জানাল।

ইয়েমেন সরকারের মুখপাত্র রাজেশ বাদি জানান, আল-কায়েদা তেলের পাইপলাইন উড়িয়ে দেওয়া ও কয়েকটি শহর দখলে নেওয়ার ষড়যন্ত্র করেছিল। এর মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের দুটি বন্দরও ছিল। বাদি বলেন, মুকালা ও বাজির মতো গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলো দখলে নেওয়ার ষড়যন্ত্র করেছিল আল-কায়েদা। এ ছাড়া সেবা ও বিহাফ শহরের গ্যাস পাইপলাইনে বিস্ফোরণ ঘটানোর পরিকল্পনাও ছিল তাদের। মুখপাত্র বাদি আরও জানান, সেনাসদস্যদের পোশাক পরে হামলার পরিকল্পনা ছিল আল-কায়েদার। সেই পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দেওয়া হয়েছে।

ইয়েমেনের কর্মকর্তারা বলছেন, গত নভেম্বরে হামলায় আল-কায়েদার শীর্ষস্থানীয় নেতা সাইদ আল-শিহরি নিহত হন। এর প্রতিশোধ নিতেই এই হামলার ষড়যন্ত্র করেছিল আল-কায়েদা।

সম্প্রতি জঙ্গি হামলার আশঙ্কায় আরব বিশ্বসহ বিশ্বের ২১টি দেশে মার্কিন দূতাবাস ও কনস্যুলেট বন্ধ রাখে যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি বন্ধ রাখার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এ ব্যাপারে মার্কিন গণমাধ্যমে বলা হয়, আল-কায়েদার প্রধান নেতা আয়মান আল-জাওয়াহিরির সঙ্গে সংগঠনটির ইয়েমেন শাখার প্রধান নাসের আল ওয়াহেসির কথোপকথন মার্কিন গোয়েন্দাদের নজরে আসার পরই দূতাবাসগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। ওই দুই নেতার কথোপকথনে বড় ধরনের হামলা চালানোর ইঙ্গিত ছিল। হামলার আশঙ্কা থেকে যুক্তরাষ্ট্র অবিলম্বে সব মার্কিন নাগরিককে ইয়েমেন ত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছে। মার্কিন ও ব্রিটিশ দূতাবাস থেকে কিছু কর্মীও প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।

ইয়েমেনে গতকাল ড্রোন হামলা চালানো হয় সাবা প্রদেশের রাজধানী থেকে ৭০ কিলোমিটার উত্তরে প্রত্যন্ত আতাক এলাকায়। প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় কর্মকর্তারা জানান, দুটি গাড়ি লক্ষ্য করে অন্তত ছয়টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে। এতে গাড়ি দুটি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়। ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁরা শুধু ছিন্নভিন্ন মরদেহ দেখতে পান।

 দুই সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে ইয়েমেনে এটি পঞ্চম ড্রোন হামলা। আল-কায়েদার আরব উপদ্বীপ শাখার (একিউএপি) মূল ঘাঁটি বলে বিবেচনা করা হয় ইয়েমেনকে। ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। ইয়েমেনের সঙ্গে বিশ্বের শীর্ষ তেল উৎপাদনকারী দেশ ও মার্কিন মিত্র সৌদি আরবের দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। তাই ইয়েমেনের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত না হলে এর প্রভাব পড়তে পারে সৌদিতেও। এ ছাড়া ইয়েমেনের বন্দরগুলো বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তেল রপ্তানির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই বিশেষ করে পাশ্চাত্যের আশঙ্কা, সার্বিকভাবে ইয়েমেনে আল-কায়েদা শক্তিশালী হলে এর প্রভাব পড়বে বিশ্বজুড়েই।

ইয়েমেনে ২৮ জুলাই থেকে এ পর্যন্ত মার্কিন ড্রোন হামলায় অন্তত ২০ জন সন্দেহভাজন জঙ্গি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে চারজন ছিলেন একিউএপির সঙ্গে সম্পৃক্ত কট্টরপন্থী গোষ্ঠী আনসার আল-শরিয়ার সদস্য। বিবিসি ও রয়টার্স।