সাত সেনাসদস্যের যাবজ্জীবন

ভুয়া ‘এনকাউন্টারের’ ঘটনা দেখিয়ে নিরীহ তিন কাশ্মীরি যুবককে মেরে ফেলার অপরাধে দুই কর্মকর্তাসহ ভারতের সেনাবাহিনীর সাত সদস্যের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। ২০১০ সালে ওই তিন যুবককে সীমান্তের নিয়ন্ত্রণরেখায় নিয়ে গিয়ে ঠান্ডা মাথায় খুন করা হয়েছিল। গতকাল বৃহস্পতিবার দেওয়া সামরিক আদালতের রায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের অবসরকালীন সুবিধাও স্থগিত রাখা হয়েছে।
জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাঁর আশা, এমন ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে আর ঘটবে না।
যাঁদের শাস্তি হয়েছে তাঁরা সবাই ৪ রাজপুত রেজিমেন্টের সেনাসদস্য। দণ্ডপ্রাপ্ত দুই কর্মকর্তা হলেন রেজিমেন্টের কমান্ডিং অফিসার কর্নেল ডি কে পাঠানিয়া ও মেজর উপেন্দ্র সিং। অপরাধী সেনাদের দাবি ছিল, নিহত ব্যক্তিরা সবাই পাকিস্তানি জঙ্গি। অবৈধভাবে তাঁরা ভারতে ঢুকছিলেন। কিন্তু সেনাবাহিনীর এই দাবি উপত্যকার মানুষ মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানান। তাঁদের দাবি, সেনাবাহিনীতে কাজ দেওয়ার নাম করে বারামুল্লার নাদিহাল এলাকার ওই তিন যুবককে কুপওয়ারায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পরে তাঁদের রাজ্যের উত্তরে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর মছিল এলাকায় নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার পর উপত্যকাজুড়ে ভারতীয় বাহিনীগুলোর বিরুদ্ধে তীব্র জনরোষ দেখা দেয়। গণবিক্ষোভে মৃত্যু হয় শতাধিক মানুষের।
জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের পক্ষ থেকে মোট ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছিল। সেনাবাহিনীও তদন্তের নির্দেশ দেয় এবং কোর্ট মার্শাল শেষ হওয়ার আগেই দুই কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে। শেষ পর্যন্ত ওই দুই কর্মকর্তাসহ সাতজনই দোষী সাব্যস্ত হন।
কাশ্মীরে ভুয়া সংঘর্ষের ঘটনা নতুন নয়। কিন্তু সেনাবাহিনীর দুই কর্মকর্তাসহ সাতজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের মতো শাস্তির ঘটনা আগে ঘটেনি।
কয়েক দিন আগে জঙ্গি সন্দেহে চার নিরীহ যুবককে বহনকারী গাড়িতে সেনাবাহিনী গুলি চালালে দুজনের মৃত্যু হয়। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে পরে দুঃখ প্রকাশ করে ভুল স্বীকার করা হয়। তবে এটিকে ঠান্ডা মাথায় খুন বলা হয়নি। ওই যুবকদের গাড়ি থামাতে বলা সত্ত্বেও তারা না থামালে সেনারা জঙ্গি ভেবে গুলি চালায়।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, কাশ্মীরে সেনাবাহিনী অথবা অন্য নিরাপত্তা বাহিনীকে খুবই কঠিন অবস্থায় কাজ করতে হয়। ভুল হওয়া তাই অস্বাভাবিক নয়। তবে ভুয়া সংঘর্ষের ঘটনা অনভিপ্রেত।