এমওয়াজিই জিহাদি জন?

কুয়েতি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক মোহাম্মদ এমওয়াজি যে ‘জিহাদি জন’, এ ব্যাপারে অনেকটাই নিশ্চিত হয়েছে ব্রিটিশ নিরাপত্তাকর্মী ও পুলিশ। ওয়াশিংটন পোস্ট ও নিউইয়র্ক টাইমসের খবরে একজন ব্রিটিশ নিরাপত্তা কর্মকর্তা এমওয়াজিকেই ‘জিহাদি জন’ বা জল্লাদ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তবে লন্ডন পুলিশ ওই খবরকে ধারণা বা অনুমাননির্ভর বলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ ওই খবরকে প্রত্যাখ্যান করেনি।

এএফপির খবরে লন্ডনের কিংস কলেজের এক সমীক্ষা এবং সেখানকার জ্যেষ্ঠ এক গবেষক সিরাজ মাহের বলেন, আমরা অনেকটাই আশ্বস্ত যে আসল হত্যাকারীকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। তিনি মনে করেন, জিহাদি জনই যে শিরশ্ছেদকারী, তা যুক্তরাষ্ট্রই খুঁজে বের করেছে। তিনি বিশ্বাস করেন, আইএস আর কোনো মার্কিনিকে জিম্মি করবে না।

মার্কিন পণবন্দী জেমস ফলি, ব্রিটিশ নাগরিক অ্যালান হেনিং এবং জাপানের সাংবাদিক কেনজি গোতোর শিরশ্ছেদ করেছে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) জঙ্গিরা। সেই ভিডিও ফুটেজও তারা প্রকাশ করে দেয়। ফুটেজগুলোতে দেখা গেছে, পেছনে হাত বাঁধা অবস্থা হাঁটু গেড়ে একজন বসে আছেন। পাশেই ছুরি হাতে মুখোশ পরে আছে আইএসের জঙ্গি। সেই জিহাদির আসল পরিচয় অবশেষে জানা গেল বলে মনে করা হচ্ছে।

জিহাদি জন বলে যাঁকে ভাবা হচ্ছে, সেই এমওয়াজি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের ওপর তিনি পড়াশোনা করেছেন। লন্ডনে তাঁদের বাড়ি রয়েছে। তবে এমওয়াজির পরিবার মেনে নেয়নি যে তাদের ছেলেই জিহাদি জন।

ওয়েস্টমিনস্টার বিশ্ববিদ্যালয় এক বিবৃতিতে জানায়, এমওয়াজি ছয় বছর আগে কলেজের পড়াশোনা শেষ করেছেন। পরে তিনি একটি দল গঠন করেন। তিনি ওই দলের সদস্য শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন পরামর্শ ও সমর্থন দেন। কিংস কলেজের গবেষণা সহযোগী মাহের মনে করেন, এমওয়াজির মুখমণ্ডল জনসমক্ষে এলে আইএসের মধ্যে একটি মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব পড়বে।

এমওয়াজিকে প্রথম দেখা যায় গত বছরের আগস্ট মাসে। ওই ভিডিও ফুটেজে তাঁকে মার্কিন সাংবাদিক জেমস ফলির হত্যাকারী হিসেবে দেখানো হয়। পরে একে একে আরেক মার্কিন সাংবাদিক স্টিভেন সটলফ, যুক্তরাজ্যের ত্রাণকর্মী ডেভিড হেইন্স এবং ট্যাক্সিচালক অ্যালান হেনিংয়ের মৃতদেহের ফুটেজেও তিনি ছিলেন। ধারণা করা হয়, তাঁদের শিরশ্ছেদ হয়েছে তাঁর হাতেই।

শেষবার তাঁর ফুটেজ দেখা যায় গত জানুয়ারি। আইএসের হাতে আটক দুই জাপানির শিরশ্ছেদের ঘটনার ঠিক আগে। ইন্টারনেটের ভিডিও ফুটেজে যথারীতি তাঁকে দেখা যায় আটক ওই জাপানির সঙ্গে মুখে কালো কাপড় জড়ানো ছুরি হাতে দাঁড়িয়ে।
লন্ডনে একটি সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার ব্যাপারে যে ১৩ জন মুসলিম যুবককে সন্দেহের তালিকায় ঢোকানো হয়েছিল, এমওয়াজিও সেই তালিকায় ছিলেন। ওয়াশিংটন পোস্ট লিখেছে, ২০১২ সালের দিকে সিরিয়ায় গিয়ে আইএসে যোগ দেন মোহাম্মদ এমওয়াজি। তবে তদন্তের স্বার্থে ব্রিটিশ পুলিশ জিহাদি জনের এই আসল পরিচয়ের ব্যাপারে তথ্য নিশ্চিত করতে অস্বীকার করেছে।