পাকিস্তানে দুই কূটনীতিকসহ ৬ জন নিহত

পাকিস্তানে বিদেশি কূটনীতিকদের বহন করা একটি সামরিক হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে দেশটিতে নিযুক্ত নরওয়ে, ফিলিপাইনের রাষ্ট্রদূতসহ ছয়জন নিহত হয়েছেন। একটি প্রকল্প পরিদর্শন করতে তিনটি হেলিকপ্টারে করে কূটনীতিকদের একটি দল গতকাল শুক্রবার গিলগিট-বালতিস্তান অঞ্চলে তিন দিনের সফরে যাওয়ার পথে একটি হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়।

পাকিস্তানি তালেবান (টিটিপি) দাবি করেছে, তারা ওই হামলার সঙ্গে জড়িত। তবে তাদের ওই দাবির সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।খবর বিবিসি, এএফপি ও আল-জাজিরার।

সেনাবাহিনীর টুইটার বার্তায় বলা হয়, দুর্ঘটনায় নরওয়ের রাষ্ট্রদূত লেইফএইচ লারসেন ও ফিলিপাইনের রাষ্ট্রদূত ডমিঙ্গো ডি লুসেনারিওসহ মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রদূতের স্ত্রী এবং হেলিকপ্টারটির দুজন পাকিস্তানি চালক নিহত হন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন পোল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত আন্দ্রেজ অ্যানানিকজোলিশও ডাচ রাষ্ট্রদূত মারসেল ডি ভিঙ্ক।

ইসলামাবাদ থেকে ৩০০ কিলোমিটার উত্তরে হেলিকপ্টারটি গিলগিট-বালতিস্তানের নালতার উপত্যকায় একটি স্কুলের ওপর বিধ্বস্ত হয়। সীমান্তবর্তী তিন বড় পর্বতমালা হিমালয়, কারাকোরাম ও হিন্দুকুশের সংযোগস্থলে গিলগিট-বালতিস্তানের অবস্থান। এই অঞ্চলে শতাধিক পর্বত রয়েছে, যেগুলোর উচ্চতা সাত হাজার মিটারের বেশি।

প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের কার্যালয় থেকে দেওয়া বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, নওয়াজ শরিফ গিলগিট-বালতিস্তান অঞ্চলে যাওয়ার পথে ছিলেন। সেখানে তাঁর সঙ্গে ওই কূটনীতিকদের সাক্ষাৎ করার কথা ছিল। হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হওয়ার খবর শোনার পর তাঁর বিমানটি ইসলামাবাদে ফিরে যায়।

দুর্ঘটনার পরপরই এক বিবৃতিতে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র মেজর জেনারেল অসীম বাজওয়া বলেন, বিধ্বস্ত এমআই-১৭ হেলিকপ্টারটিতে ১১ জন বিদেশিসহ ১৭ জন ছিলেন। বেঁচে যাওয়া যাত্রীরা বিভিন্ন মাত্রায় আহত হয়েছেন। তাৎক্ষণিকভাবে দুর্ঘটনার কারণ নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ওই দুর্ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শী আল-জাজিরাকে বলেছেন, বিধ্বস্ত হওয়ার ধরন দেখে মনে হয়েছে, এর পেছনে যান্ত্রিক ইস্যু কাজ করেছে। মেজর জেনারেল অসীম বাজওয়া এক বিবৃতিতে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে যান্ত্রিক ত্রুটির কথা উল্লেখ করেছেন।

তবে টিটিপির মুখপাত্র মুহম্মদ খোরোশানি ই-মেইলে পাঠানো এক বিবৃতিতে দাবি করেন, ‘বিমানবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে হেলিকপ্টারটি ভূপাতিত করা হয়।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি হেলিকপ্টারের যাত্রী জানান, এটা ছিল মোট ৩৭টি দেশের কূটনীতিকদের একটি সফর। ওই বহরে চারটি হেলিকপ্টার থাকার কথা ছিল। পরবর্তী সময়ে একটি হেলিকপ্টার কমিয়ে তিনটি করা হয়। হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হওয়ার পর স্কুলটিতে আগুন ধরে যায়।

এই দুর্ঘটনাটি ১৯৮৮ সালের একটি উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। ওই দুর্ঘটনায় পাকিস্তানের সামরিক শাসক জেনারেল জিয়াউল হকসহ তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিহত হন। আর ২০১২ সালের পর দেশটিতে আকাশপথে এটাই সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। ওই বছর ইসলামাবাদে বেসরকারি একটি উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে ১৩০ জন নিহত হন।