ইয়েমেনে বেসামরিক মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে: জাতিসংঘ

ইয়েমেনে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনী বেসামরিক লোকজনের ওপর বোমাবর্ষণ করছে বলে অভিযোগ করেছে জাতিসংঘ। ইয়েমেনে নিযুক্ত জাতিসংঘের প্রতিনিধি এ অভিযোগ করে বলেন, জনবহুল এলাকায় নির্বিচারে বোমাবর্ষণ আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।
এদিকে ইয়েমেনে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার সুবিধার্থে সৌদি জোট বাহিনী পাঁচ দিনের যুদ্ধবিরতির যে প্রস্তাব দিয়েছে, তা গতকাল রোববার মেনে নিয়েছে ইরান-সমর্থিত শিয়া হুতি বিদ্রোহীরা। খবর বিবিসি, এএফপি ও রয়টার্সের।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন ও সহায়তাকর্মীদের সূত্র জানায়, ইয়েমেনের উত্তরাঞ্চলীয় সাদা শহরের বেসামরিক মানুষ সেখানকার হুতি বিদ্রোহীদের লক্ষ্য করে চালানো জোট বাহিনীর বিমান হামলা থেকে বাঁচার চেষ্টা করছে।
ইয়েমেনে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক সমন্বয়কারী জোহানেস ভন ডার ক্লাউ দেশটির উত্তরাঞ্চলে সাম্প্রতিকতম বিমান হামলার সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছেন। সাদা শহরে বহু লোক আটকা পড়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। সৌদি জোট বাহিনী সাদাকে ‘সামরিক অঞ্চল’ ঘোষণা দিয়েছে। তারা গত শুক্রবার সেখানে বিমান থেকে প্রচারপত্র ছড়িয়ে বেসামরিক লোকজনকে সরে যেতে বলেছে।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ইয়েমেনে জোটের বিমান হামলায় এ পর্যন্ত অন্তত ১ হাজার ৪০০ জন নিহত হয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের অধিকাংশই বেসামরিক মানুষ।
যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সম্মতি: এদিকে মানবিক সহায়তার স্বার্থে জোট বাহিনীর যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে মেনে নিয়েছে হুতি বিদ্রোহীরা। তবে যুদ্ধবিরতির কোনো ধরনের লঙ্ঘন হলে তারা পাল্টা জবাব দেবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে। সৌদি আরব বলেছে, হুতি মিলিশিয়ারা রাজি হলে আগামীকাল মঙ্গলবার থেকেই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে।
গতকাল রোববার হুতি বাহিনী নিয়ন্ত্রিত আল-মাসিরাহ টেলিভিশন চ্যানেলে বলা হয়, ‘জনদুর্ভোগের ইতি টানার’ প্রচেষ্টায় বিদ্রোহীদের শীর্ষ পরিষদ যেকোনো উদ্যোগে ইতিবাচক সাড়া দিতে প্রস্তুত রয়েছে।
সালেহর বাড়িতে বোমা: রাজধানী সানা শহরে সাবেক প্রেসিডেন্ট আলী আবদুল্লাহ সালেহর বাড়িতে বিমান হামলা চালানো হয়েছে। তবে তিনি পরিবারসহ অক্ষত রয়েছেন বলে জানানো হয়েছে। দেশের বেশির ভাগ অংশের নিয়ন্ত্রণকারী হুতি বিদ্রোহীদের সঙ্গে সালেহর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।
ইরানি জাহাজের যাত্রা: ইরানের পণ্যবাহী একটি জাহাজ গতকাল সন্ধ্যায় ইয়েমেনের বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত হোদেইদা বন্দরের উদ্দেশে যাত্রা করে বলে ইরানি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে। ইরানের এ পদক্ষেপে দেশটির সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। ওই জাহাজে খাবার ও ওষুধসহ ২ হাজার ৫০০ টন ত্রাণসামগ্রী রয়েছে বলে খবরে উল্লেখ করা হয়। ইরানি বিমানের অবতরণ ঠেকাতে সানা বিমানবন্দরের রানওয়ে গত মাসে ধ্বংস করে দিয়েছে সৌদি জোট বাহিনী।
যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত সৌদি জোট বাহিনী গত ২৬ মার্চ থেকে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের দমনের লক্ষ্যে বিমান হামলা শুরু করে। সাবেক প্রেসিডেন্ট সালেহর অনুগত শিয়া হুতিদের হটিয়ে প্রেসিডেন্ট আবেদরাব্বো মানসুর হাদিকে ক্ষমতায় পুনর্বহাল করতে চায় সুন্নি মুসলিম অধ্যুষিত দেশ সৌদি আরব। হুতিদের অগ্রাভিযানের মুখে মানসুর হাদি গত ফেব্রুয়ারিতে সানা ছেড়ে যান এবং পরে সৌদি আরবে আশ্রয় নেন। শিয়া অধ্যুষিত দেশ ইরান হুতি বিদ্রোহীদের অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করছে বলে সৌদি আরবের অভিযোগ। তবে ইরান ও হুতিরা তা অস্বীকার করে।