দ্বিতীয় দিনেও অচল ভারতের সংসদ

ভারতীয় যুব কংগ্রেসের (আইওয়াইসি) কর্মীরা পুলিশি বাধার সামনে দাঁড়িয়ে সরকারবিরোধী স্লোগান দিচ্ছেন। দুর্নীতির অভিযোগে ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) কয়েকজন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে তদন্ত এবং তাঁদের পদত্যাগের দাবিতে নয়াদিল্লিতে পার্লামেন্ট ভবনের কাছে গতকাল ওই বিক্ষোভ হয় l ছবি: এএফপি
ভারতীয় যুব কংগ্রেসের (আইওয়াইসি) কর্মীরা পুলিশি বাধার সামনে দাঁড়িয়ে সরকারবিরোধী স্লোগান দিচ্ছেন। দুর্নীতির অভিযোগে ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) কয়েকজন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে তদন্ত এবং তাঁদের পদত্যাগের দাবিতে নয়াদিল্লিতে পার্লামেন্ট ভবনের কাছে গতকাল ওই বিক্ষোভ হয় l ছবি: এএফপি

ললিত মোদি ও সরকারি চাকরিতে নিয়োগ-সংক্রান্ত ‘ব্যপম’ কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগে ভারতে ক্ষমতাসীন দল বিজেপির তিন শীর্ষ নেতা-নেত্রীর ইস্তফার দাবিতে অটল বিরোধীকুল। সংসদের দ্বিতীয় দিনের অধিবেশনও গতকাল বুধবার তারা ভন্ডুল করে দিল। সরকারপক্ষও অনড়। ললিত কেলেঙ্কারি নিয়ে আলোচনায় প্রস্তুত থাকার কথা জানালেও পদত্যাগের প্রশ্নকে আমল দিতে সরকার রাজি নয়। ফলে অচলাবস্থা অব্যাহত।
বিজেপি দল ও সরকারের দাবি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ এমন কোনো গর্হিত কাজ করেননি যে তাঁকে পদত্যাগ করতে হবে। রাজ্যসভার নেতা অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি গতকাল সংসদে বলেন, রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে এবং ব্যপম ঘটনায় অভিযুক্ত মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান সংসদের আলোচ্য হতে পারেন না। রাজ্য সরকারকে সংসদের আলোচনায় টেনে আনা হলে বিজেপিও কংগ্রেস-শাসিত রাজ্যগুলোর দুর্নীতি সংসদে টেনে আনবে।
সরকার ও বিরোধী পক্ষের এই বিবাদের মীমাংসার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত। ফলে সারা দেশে অভিন্ন কর কাঠামো (জিএসটি) সংক্রান্ত বিলসহ আর্থিক সংস্কারে প্রয়োজনীয় বেশ কয়েকটি বিলের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে।
এই পরিস্থিতিতে সুষমার টুইটার অ্যাকাউন্টের এক পরিবর্তন তাঁর ইস্তফার জল্পনাকে উসকে দিয়েছে। এত দিন তাঁর নামের পাশে ‘ভারত সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী’ কথাটি লেখা থাকত। গতকাল লেখাটি দেখা যায়নি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সূত্রের ব্যাখ্যা, এটি সুষমার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট। সুষমা নিজে কোনো ব্যাখ্যা দেননি।
সুষমা স্বরাজ গতকাল বিজেপির সংসদীয় দলের বৈঠকে ললিত কেলেঙ্কারিতে তাঁর ভূমিকা ব্যাখ্যা করেন। কোন পরিস্থিতিতে এবং কেন তিনি আইপিএলের সাবেক কমিশনার দেশত্যাগী ললিত মোদির বিদেশ সফরের জন্য যুক্তরাজ্য সরকারকে অনুরোধ করেছিলেন তা তুলে ধরেন। অরুণ জেটলির কথায়, সুষমার ব্যাখ্যায় দল ও সরকার সম্পূর্ণভাবে সন্তুষ্ট। তাই তাঁর পদত্যাগের দাবি অযৌক্তিক। রাজ্যসভায় মুলতবি প্রস্তাব মেনে ললিত মোদিকে নিয়ে যেকোনো আলোচনায় তিনি যে প্রস্তুত, জেটলি তা জানিয়েও দেন। কিন্তু কংগ্রেসসহ অন্য বিরোধীরা তাতে সন্তুষ্ট হয় না। তাদের দাবি, আগে ইস্তফা, পরে আলোচনা।
বিরোধীরা গতকাল কালো ব্যাজ পরে হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে সংসদে ঢুকেছিলেন। প্ল্যাকার্ডগুলোতে ছিল সরকারের সমালোচনা করে বিভিন্ন কথা লেখা। প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিরোধীদের সভায় ঘুরতে বারবার বারণ করেন স্পিকার সুমিত্রা মহাজন।
কংগ্রেসের সুরে সুর মিলিয়ে মন্ত্রীদের ইস্তফার দাবি জানান বহুজন সমাজ পার্টির মায়াবতী, সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি এবং সমাজবাদী পার্টিও। সুষমা একটা টুইটে জানান, রাজস্থান থেকে রাজ্যসভায় নির্বাচিত কয়লা কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত সাবেক কংগ্রেসি সন্তোষ বাগড়োডিয়াকে কূটনৈতিক পাসপোর্ট দেওয়ার জন্য এক কংগ্রেস নেতা তাঁকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন। দরকার পড়লে সেই কংগ্রেস নেতার নাম তিনি সংসদে প্রকাশ করবেন। কংগ্রেস সুষমার এ বক্তব্যকে হাস্যকর বলে উড়িয়ে দিয়েছে।
দুই বছর আগে বিজেপি যেভাবে কংগ্রেস-শাসিত সরকারের দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ধরে সংসদ অচল করে রাখত, কংগ্রেস এখন ঠিক সেই ভূমিকাতেই অবতীর্ণ। পার্থক্য একটাই। মনমোহন সিংয়ের সরকার ছিল সংখ্যালঘু, নরেন্দ্র মোদির সরকারের গরিষ্ঠতা প্রশ্নাতীত।