মক্কায় ক্রেন ভেঙে নিহত ৮৭

সৌদি আরবের পবিত্র মক্কা নগরের হারাম শরিফে গতকাল ক্রেন ভেঙে পড়ার পর ধ্বংসস্তূপে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে মুসল্লিদের রক্তাক্ত দেহ। দুর্ঘটনার পর উদ্ধার তৎপরতায় ব্যস্ত কর্মীরা l ছবি: আল-আরাবিয়ার সৌজন্যে
সৌদি আরবের পবিত্র মক্কা নগরের হারাম শরিফে গতকাল ক্রেন ভেঙে পড়ার পর ধ্বংসস্তূপে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে মুসল্লিদের রক্তাক্ত দেহ। দুর্ঘটনার পর উদ্ধার তৎপরতায় ব্যস্ত কর্মীরা l ছবি: আল-আরাবিয়ার সৌজন্যে

সৌদি আরবের পবিত্র মক্কা নগরের হারাম শরিফে ক্রেন ভেঙে অন্তত ৮৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ১৮৪ জন। ধারণা করা হচ্ছে, তাঁদের অধিকাংশই হজ পালনের উদ্দেশ্যে সমবেত হওয়া ব্যক্তি। নিহত ব্যক্তির সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এ ঘটনায় ৪০ জন বাংলাদেশি আহত হয়েছেন। সামুদ্রিক ঝড় এবং সঙ্গে প্রচণ্ড বৃষ্টিপাতের কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা যায়। হতাহত ব্যক্তিদের নাগরিকত্ব ও ক্ষয়ক্ষতির আনুষ্ঠানিক কোনো তথ্য জানাতে পারেনি সৌদি কর্তৃপক্ষ। খবর বিবিসি, এএফপি, রয়টার্স, আল-জাজিরা ও আল-আরাবিয়ার।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মক্কার স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা পৌনে ছয়টায় রক্তাক্ত এ দুর্ঘটনা ঘটে। মাগরিবের নামাজের সামান্য কিছু আগে হারাম শরিফের চতুর্থ তলার ছাদ ভেঙে মার্বেল পাথরের মেঝেতে আছড়ে পড়ে নির্মাণকাজে ব্যবহৃত বিশালাকারের ক্রেনগুলোর একটি।
পবিত্র হজ শুরুর অল্প কয়েক দিন আগে এ দুর্ঘটনা ঘটল। দুর্ঘটনার সময় হারাম শরিফে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আসা লাখো হাজি উপস্থিত ছিলেন। এই দুর্ঘটনার আগে ২০০৬ সালে হজের সময় পদদলিত হয়ে শতাধিক হাজির মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল।
সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ্ গতকাল রাত সাড়ে ১২টায় প্রথম আলোকে বলেন, দুর্ঘটনায় ৪০ জন বাংলাদেশি আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে তিনজনকে হাসপাতালে পাঠানোর পর প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কেউ গুরুতর আহত হননি।

ভেঙে পড়া ক্রেনটির অংশবিশেষ  l ছবি: আল-জাজিরার সৌজন্যে
ভেঙে পড়া ক্রেনটির অংশবিশেষ l ছবি: আল-জাজিরার সৌজন্যে

বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে দেখা যায়, দুর্ঘটনার পর অনেকের রক্তাক্ত দেহ হারাম শরিফের মেঝেতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। কারও কারও দেহ চাপা পড়ে আছে ধ্বংসস্তূপের নিচে। কিছু ছবিতে বজ্রপাতের দৃশ্যও দেখা যায়। ইউটিউবে পোস্ট করা এক ছবিতে দুর্ঘটনার পর আতঙ্কিত মুসল্লিদের কাউকে কাউকে কান্না ও ইতস্তত ছোটাছুটি করতে দেখা যায়।
দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থলে পড়ে থাকতে দেখা যায় বিশাল ক্রেনের কিছু অংশ। ক্রেনটি ভেঙে পড়েছে, নাকি ছিঁড়ে পড়েছে, তা স্পষ্ট জানা যায়নি। সৌদির বেসামরিক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা জানান, দুর্ঘটনার কিছু আগে তাঁরা ভারী বৃষ্টি, তীব্র বাতাস ও ঝড়ের পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। দুর্ঘটনার পরপরই উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করেন সৌদি রেড ক্রিসেন্টের কর্মীরা।
ঘটনাস্থল থেকে সংবাদদাতারা জানান, দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে আহত ব্যক্তিদের উদ্ধারে হারাম শরিফ অভিমুখে ছুটে যায় অনেক অ্যাম্বুলেন্স। আর কর্তৃপক্ষ ঘটনাস্থল ঘিরে ফেলে। মক্কার গভর্নর প্রিন্স খালেদ আল-ফয়সাল দুর্ঘটনা তদন্তে তাৎক্ষণিকভাবে কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান তিনি।
এদিকে সামাজিক গণমাধ্যমকর্মীরা দুর্ঘটনার পর টুইটারে একটি হ্যাশট্যাগ খোলেন, যেখানে মক্কার হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হওয়া আহত ব্যক্তিদের রক্ত দিতে নগরের বাসিন্দাদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
গতকাল জুমার দিন হওয়ায় হারাম শরিফে মুসল্লিদের ভিড় স্বাভাবিকভাবেই অন্য দিনের তুলনায় বেশি ছিল। হজের উদ্দেশ্যে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে লাখো হাজিও এরই মধ্যে উপস্থিত হয়েছেন সেখানে। মুসল্লিদের চাপ বেড়ে যাওয়ায় হতাহতের সংখ্যা বেশি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
হতাহত ব্যক্তিদের নাগরিকত্বের ব্যাপারে তাৎক্ষণিকভাবে জানা না গেলেও ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইরনা বলেছে, আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১৫ জন ইরানি।
হারাম শরিফ কমপ্লেক্স ৮৮ দশমিক ২ একর স্থানজুড়ে অবস্থিত। এই আয়তন আরও বৃদ্ধির পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কয়েক বছর ধরেই কাজ চলছে, যাতে একসঙ্গে ২২ লাখ হাজি পবিত্র হজ সম্পাদন করতে পারবেন। নির্মাণকাজের জন্য হারাম শরিফের চারপাশে অনেক ক্রেন বসানো হয়েছে।