কুনদুজ দখল তালেবানের

আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় কুনদুজ শহর দখল করেছে তালেবান জঙ্গিরা। সেই সঙ্গে অধিকাংশ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে শত শত কারাবন্দীকে মুক্ত করে দিচ্ছে তারা। সূর্যোদয়ের আগেই তারা কুনদুজে আক্রমণ চালিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলো দখল করে। তারপর বিমানবন্দরের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। কুনদুজ দখলের অভিযানকালে সেনা ও পুলিশের সঙ্গে তালেবান জঙ্গিদের ব্যাপক গোলাগুলি হয়। এতে দুই পক্ষেই হতাহতের ঘটনা ঘটে। খবর বিবিসি, রয়টার্স ও এএফপির।
২০০১ সালে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনীর হামলায় ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর কুনদুজই হবে তালেবান জঙ্গিদের দখল করা আফগানিস্তানের প্রথম কোনো প্রাদেশিক শহর। শহরটি এমন কয়েকটি রাস্তার সংযোগস্থলে অবস্থিত, যেগুলোর সঙ্গে আফগানিস্তানের সব অংশের যোগাযোগ রয়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির ক্ষমতা দখলের প্রথম বার্ষিকীর আগের দিন কুনদুজ দখলের এই ঘটনা ঘটল।
আফগানিস্তানের কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই শহরটি একসময় তালেবান জঙ্গিদের শক্ত ঘাঁটি ছিল। সরকার বলছে, তারা শক্তি বাড়াতে কুনদুজে নতুন করে সামরিক রসদ ও সেনা পাঠিয়েছে।
এক টুইটার বার্তায় তালেবান জঙ্গিদের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, ‘পুলিশ কম্পাউন্ড ও কুনদুজের গভর্নরের কার্যালয় দখলের মধ্য দিয়ে সমগ্র প্রদেশ আমাদের মুঠোয় চলে এসেছে। আমাদের সৈন্যরা এখন বিমানবন্দরের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।’
বার্তা সংস্থা জানায়, তালেবান যোদ্ধারা বিভিন্ন ভবনে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং একটি সরকারি হাসপাতালের ভেতরে প্রবেশ করে। এ সময় সরকারি বাহিনী কয়েকটি হেলিকপ্টার থেকে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় জঙ্গিদের অবস্থান লক্ষ্য করে গোলাবর্ষণ করে।
কুনদুজ প্রাদেশিক পুলিশের মুখপাত্র সাইয়েদ সারওয়ার হুসাইনি বলেন, তালেবান কয়েকটি দিক থেকে কুনদুজে হামলা করেছে। বিভিন্ন এলাকায় লড়াইয়ে এ পর্যন্ত ২০ জন বিদ্রোহী নিহত হয়েছে। আর আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর চার সেনা আহত হয়েছে। শহরের মূল তিনটি প্রবেশপথ খানাবাদ, চার দারা ও ইমাম শাহেদ এলাকায় জঙ্গিদের সঙ্গে প্রচণ্ড লড়াই হয়।
তালেবানের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ হামলার দায় স্বীকার করে বলেছেন, তাঁদের যোদ্ধারা বিভিন্ন তল্লাশিচৌকি দখল করেছে এবং অন্তত ১২ জন সেনাকে হত্যা করেছে। তবে নিহত সেনার ওই সংখ্যা যাচাই করা সম্ভব হয়নি। মুজাহিদ আরও বলেন, শহরের সব থানা ও সরকারি দপ্তর দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে তালেবান।
আফগানিস্তানে ২০০১ সালে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক অভিযানে তালেবান সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়। এরপর থেকে তালেবান বিদ্রোহীরা রক্তক্ষয়ী লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। কাবুলের পশ্চিমা-সমর্থিত সরকার গত এপ্রিলে জঙ্গিবিরোধী অভিযান শুরু করার পর থেকে তালেবান হামলা আবার বেড়ে যায়। প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির সরকার শান্তি আলোচনার উদ্যোগ নিয়েও এ পর্যন্ত তেমন সফল হয়নি।
জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আফগানিস্তানে চলতি বছরের প্রথমার্ধে বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যুর সংখ্যা আগের রেকর্ড ছাড়িয়েছে। সেখানে এ বছর ১ হাজার ৫৯২ জন নিহত ও ৩ হাজার ৩২৯ জন আহত হয়েছে।