বিদেশি হত্যায় আইএস নয়, জামায়াত থাকতে পারে

.
.

বাংলাদেশে দুই বিদেশি হত্যাকাণ্ডে আইএসের সম্পৃক্ততার আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছেন ভারতের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। তাঁরা বলেছেন, এর মধ্যে আইএস থাকার কোনো সূত্র তাঁরা পাননি। তাঁরা মনে করছেন, সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে জামায়াতে ইসলামীর লোকজন এই কাণ্ড ঘটিয়ে থাকতে পারে।
ভারতের টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক খবরে আজ মঙ্গলবার এ কথা বলা হয়েছে। প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন সাংবাদিক ভারতী জৈন।
গত মাসে শেষের দিকে রাজধানী ঢাকায় কূটনৈতিক এলাকায় ইতালির নাগরিক সিজার তাবেলা ও গত শনিবার বিভাগীয় শহর রংপুরে জাপানি নাগরিক হোমিও কুনিওকে গুলি করে হত্যা করা হয়। দুটি হত্যাকাণ্ডেই তিন যুবক মোটরসাইকেলে করে এসে গুলি করে পালিয়ে যায়। জঙ্গি সংগঠন আইএসের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে এমন একটি মার্কিন ওয়েবসাইট জানায়, এ হত্যাকাণ্ডে ইসলামিক স্টেট বা আইএস জড়িত। তবে বাংলাদেশের সরকার এ দাবি মানতে নারাজ। 

ভারতের গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে ভারতী জৈন ওই প্রতিবেদনে লিখেছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর কয়েকজন নেতাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদণ্ডের সাজা দিয়েছেন। জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ কয়েকজন নেতার রায় কার্যকরের অপেক্ষায় আছে। সুপ্রিম কোর্টে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর আপিলের শুনানি চলছে। এ অবস্থায় সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই জামায়াতে ইসলামী বিদেশিদের হত্যা করতে পারে।
ভারতের জ্যেষ্ঠ গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলেন, ‘জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের কার্যক্রম সারা বিশ্বেই আছে। দুই বিদেশি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে চরমপন্থীদের সম্পৃক্ততা আছে—এমনভাবে প্রচার চালাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী; যেন কাজটি করেছে আইএস। এটি করা হচ্ছে তাৎক্ষণিকভাবে পশ্চিমা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য। জামায়াতে ইসলামীর এর পরের পরিকল্পনা হতে পারে, এটা দেখানো যে ‘হাসিনা সরকার বাংলাদেশে বিদেশিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ।’
বাংলাদেশে দুই বিদেশি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জঙ্গি আইএসের কর্মকাণ্ড মেলে না। কারণ আইএস সচরাচর কাউকে হত্যা করে শিরশ্ছেদের মাধ্যমে এবং ওই হত্যার ভিডিও করে। কিন্তু বাংলাদেশের ঘটনায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে পুলিশ কয়েকজনকে আটক করেছে। তবে আইএসের সঙ্গে তাঁদের কোনো সম্পৃক্ততা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখনো পর্যন্ত পায়নি। বাংলাদেশের ঘটনাপ্রবাহে নজর রাখেন এমন একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘যাঁরা আটক হয়েছেন তাঁরা হয়তো প্রকৃত অপরাধী নয়। কিন্তু প্রকৃত অপরাধীদের ধরতে তদন্তকাজ জোরে এগিয়ে চলছে। এখন পর্যন্ত কোনো তথ্যসূত্র পাওয়া যায়নি যে এসব হত্যাকাণ্ডে আইএসের জড়িত থাকার দাবিকে জোরালো করে।’
এ পর্যায়ে এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের একমাত্র যে কারণটি পাওয়া যায় তা হলো, জামায়াতে ইসলামীর সংশ্লিষ্টতা। দলটির দুই নেতা কাদের মোল্লা (প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ) ও কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে। তাই নিজ দেশে বিদেশি নাগরিক হত্যার মধ্য দিয়ে দলটি শেখ হাসিনার সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চায়। এর কারণ হতে পারে হাসিনা সরকারকে বিপদে ফেলা। জামায়াতে ইসলামী আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ার লক্ষ্যে কয়েক বছর ধরে নিয়ন্ত্রণে রেখে নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে।’