আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ নিয়ে উত্তপ্ত যুক্তরাষ্ট্র

মার্কিন সিনেটে গতকাল বৃহস্পতিবার নাগরিকদের আগ্নেয়াস্ত্র রাখার ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের জন্য নতুন আইন করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তবে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মার্কিন সমাজে বিতর্ক তুঙ্গে উঠেছে। ডেমোক্র্যাটরা এর পক্ষে থাকলেও জোর আপত্তি তুলেছেন রিপাবলিকানরা। আসছে নির্বাচনে প্রার্থীদের জন্য এটিও একটি ইস্যু হয়ে উঠছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য আগ্নেয়াস্ত্র রাখার অধিকার দেওয়া হয়েছে। কিন্তু একের পর এক হত্যাকাণ্ডের পর এই অধিকার নিয়ে নতুন ভাবনা শুরু হয়েছে। বিতর্ক শুরু হয়েছে সমাজে, সংবাদমাধ্যমে। গত সপ্তাহে অরাগনে স্কুলে ঢুকে যুবকের গুলিতে নয়জন নিহত হওয়ার পর নড়েচড়ে বসেছেন আইনপ্রণেতারা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আবারও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণের কথা বলেছেন। তবে রক্ষণশীলরা নাগরিকদের আগ্নেয়াস্ত্র রাখার ব্যাপারে কড়াকড়ি না করার পক্ষে।

এই বিতর্কের মধ্যেই নিউইয়র্ক থেকে নির্বাচিত ডেমোক্র্যাট সিনেটর চার্লস শুমার এবং একই দলের মিশিগান থেকে নির্বাচিত সিনেটর ডেবি স্টাবেনো আমেরিকার নাগরিকদের আগ্নেয়াস্ত্র সংগ্রহ এবং বহনের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের জন্য আইন প্রস্তাব খসড়া করেছেন। তাঁরা আশা করছেন, নাগরিকদের জন্য কল্যাণকর একটি আইন প্রণয়ন করতে পারবেন। এতে পুরোনো আইনের ফাঁক ফোঁকর বন্ধ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এর আগেই অভ্যন্তরীণ আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণের জন্য আইনপ্রণেতাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে ওয়াশিংটনের রাজনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যে ডেমোক্র্যাট প্রস্তাবিত আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন কতটা এগিয়ে নেওয়া সম্ভব সে ব্যাপারে নিশ্চিত নন দেশটির সাধারণ নাগরিকেরা। নিউজার্সিতে বসবাসরত লেখিকা এন ফেরার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে যারা ব্যবসা করে, যারা যুগের পর যুগ ধরে আমেরিকার রাজনীতিকে কার্যত নিয়ন্ত্রণ করছে তাদের স্বার্থের বাইরে কোনো আইন পাস হলে আমি অবাকই হব।’

প্রায় ৩০ কোটিরও বেশি জনসংখ্যার দেশ আমেরিকায় বৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের সংখ্যা দুই কোটিরও বেশি। গড়ে প্রতি বছর এসব আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে ১৫ হাজারের বেশি দুর্ঘটনা হয়। তার পরও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিতর্ক চলছে। এনবিসি নিউজ সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলেছে, আবেগ, দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন এবং রাজনৈতিক বিতর্ক এর কারণ।

যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা (এফবিআই) বলছে, ৯০ দশকে সে দেশে প্রতি এক লাখ জনসংখ্যার মধ্যে সহিংস অপরাধের সংখ্যা ছিল ৭২৯। ২০১২ সালে একই জনগোষ্ঠীর মধ্য সহিংস অপরাধ ৩৮৬তে নেমে এসেছে। প্রতিবছরই অপরাধের মাত্রা কমছে। তবে অন্যান্য উন্নত দেশের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রে অপরাধের মাত্রা বেশি।

১৯৯৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণের পক্ষে রিপাবলিকান দলের ৪৭ শতাংশ এবং ডেমোক্র্যাট দলের ৬৫ শতাংশের সমর্থন ছিল। ২০১৫ সালে নিয়ন্ত্রণের পক্ষে রিপাবলিকান দলের মাত্র ২৬ শতাংশের সমর্থন রয়েছে। আর ডেমোক্রেটিক দলের ৭৩ শতাংশের সমর্থন আছে।

রিপাবলিকানরা বলছেন, সঠিক তদন্ত না করার কারণে ভুল লোকের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র চলে যাচ্ছে। অস্ত্র রাখার সাংবিধানিক অধিকারে কোনো আপস না করে তাঁরা আরও তল্লাশি করার পক্ষে। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে রাইফেল অ্যাসোসিয়েশনের অনেক প্রভাব। সংগঠনটি অর্থ তহবিলে শক্তিশালী। তাঁরা কখনোই অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের পক্ষে নয়। তাঁদের যুক্তি, গাড়ি দুর্ঘটনায় মানুষ মরে দেখে গাড়ি বিক্রি তো বন্ধ হয়ে যায়নি। তথ্যউপাত্ত দিয়ে অবাধ অস্ত্র রাখার পক্ষে তাঁদের যুক্তির কোনো শেষ নেই। এমনকি স্কুলে শিক্ষকদের কাছে অস্ত্র রাখারও দাবি জানায় তাঁরা। কারণ তাঁরা মনে করে সবার কাছে অস্ত্র থাকলে এমন ঘটনা হতো না।