ট্রাম্প আইএসের বড় সদস্য সংগ্রাহক

ডেমোক্রেটিক প্রার্থীদের তৃতীয় বিতর্কে স্যান্ডার্স ও হিলারি l রয়টার্স
ডেমোক্রেটিক প্রার্থীদের তৃতীয় বিতর্কে স্যান্ডার্স ও হিলারি l রয়টার্স

হিলারি ক্লিনটনের প্রচারণা ব্যবস্থাপকদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত হাতিয়ে নেওয়ার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। শনিবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ হ্যাম্পশায়ার অঙ্গরাজ্যের বৃহত্তম শহর ম্যানচেস্টারে অনুষ্ঠিত ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীদের তৃতীয় বিতর্কে স্যান্ডার্স বলেন, ‘এ ধরনের প্রচারণা আমরা চালাতে চাই না।’
সেইন্ট এনস্লেম কলেজে অনুষ্ঠিত এই বিতর্কে সন্ত্রাস ও জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) দমন নিয়ে কথা চালাচালি হয়। দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি ও স্যান্ডার্স উভয়েই মুসলিমবিরোধী বক্তব্যের জন্য রিপাবলিকান দলের সম্ভাব্য প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিন্দা করেন। তবে তাঁরা নিজেরা সিরিয়া বিষয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। অবশ্য মোটের ওপর হিলারি, স্যান্ডার্স এবং ‘সান্ত্বনা প্রার্থী’ ম্যারিল্যান্ডের প্রাক্তন গভর্নর মার্টিন ও’ম্যালে একে অপরের প্রতি এতটাই সম্মান প্রদর্শন করে কথা বলেন যে আড়াই ঘণ্টা স্থায়ী এই বিতর্ক শেষ হওয়ার আগেই অনেকে টেলিভিশন সেট বন্ধ করে দেন।
এক সপ্তাহ আগে লাস ভেগাসে অনুষ্ঠিত রিপাবলিকান পার্টির বিতর্কে অংশগ্রহণকারী নয় প্রার্থী আইএস দমনে কে কত আগ্রাসী ও নিষ্ঠুর হতে পারেন, তার মল্লযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। শনিবার ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থীদের অবস্থান ছিল ভিন্ন। তাঁরা সহনশীলতার পক্ষে কথা বলেন ও বাস্তবসম্মত আন্তর্জাতিক জোট গঠনের ওপর জোর দেন।
ক্যাসিনো ব্যবসায়ী ডোনাল্ড ট্রাম্প মুসলিমদের বিরুদ্ধে যে বিদ্বেষপূর্ণ অবস্থান নিয়েছেন, হিলারি তীব্র ভাষায় তার সমালোচনা করেন। হিলারি মন্তব্য করেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পই আইএসের পক্ষে নতুন সদস্য সংগ্রহের সবচেয়ে বড় অস্ত্র। তিনি আরও বলেন, মার্কিন মুসলিম সম্প্রদায়ই অভ্যন্তরীণ জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অস্ত্র।
প্রতিরক্ষা প্রশ্নে রিপাবলিকানদের তুলনায় তিনি মোটেই নমনীয় নন, এ কথা প্রমাণে হিলারি তাঁর দলেরই প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার তুলনায় অনেক বেশি আক্রমণাত্মক রণনীতি তুলে ধরেন। হিলারি বলেন, আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকায় তিনি আরও বেশি সংখ্যায় বিশেষজ্ঞ সেনা পাঠাবেন, কুর্দি সেনাদের আধুনিক অস্ত্রে সুসজ্জিত করবেন এবং যেকোনো দেশের বিমান প্রবেশ নিষিদ্ধ করে ‘নো-ফ্লাই-জোন’ প্রতিষ্ঠা করবেন। ওবামা নো-ফ্লাই-জোনের বিপক্ষে, সে কথা জেনেই এই প্রস্তাব দেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি।
অন্যদিকে ভারমন্ট থেকে নির্বাচিত স্বতন্ত্র সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স মধ্যপ্রাচ্যে নতুন সামরিক অভিযানের বিপক্ষে জোরালো যুক্তি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের একক পদক্ষেপে আমি বিশ্বাস করি না। আমি চাই এমন এক শক্তিশালী জোট গঠন করতে, যেখানে প্রধান শক্তিগুলোর পাশাপাশি মুসলিম দেশগুলোও সমানভাবে অংশ নেবে।’
মার্টিন ও’ম্যালে মুসলমানদের প্রতি সহনশীলতার পক্ষে জোর যুক্তি দেখান। একটি মসজিদে তাঁর সাম্প্রতিক সফরের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে তিনি বলেন, ‘এসব মুসলিম আমেরিকান আমাদের প্রতিবেশী। তাদের চোখের দিকে তাকিয়ে আমি এই স্থির বিশ্বাসে পৌঁছেছি যে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও এর মূল্যবোধ রক্ষায় সম্ভাব্য সবকিছু করতেই তারা প্রস্তুত।’
আগের বিতর্কের মতো এবারেও হিলারি ও স্যান্ডার্স আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ প্রশ্নে তাদের ভিন্নতা তুলে ধরেন। অর্থনৈতিক অসাম্য নিয়েও বিস্তর কথা হয়। তবে সেখানে ভিন্নতার চেয়ে মতৈক্যই ছিল অধিক লক্ষণীয়।
তিন ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থীই মধ্যবিত্তদের স্বার্থরক্ষার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
ইতিপূর্বে স্যান্ডার্স হিলারিকে মার্কিন বাণিজ্যকেন্দ্র ওয়াল স্ট্রিটের সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠ বলে সমালোচনা করেছেন। বিতর্কে হিলারিকে জিজ্ঞেস করা হয়, করপোরেট আমেরিকা কি তাঁকে ভালোবাসে? জবাবে, প্রবল হাস্যরোলের মধ্যে হিলারি বলেন, শুধু করপোরেট আমেরিকা কেন, সবারই উচিত হিলারিকে ভালোবাসা।
একই প্রশ্ন স্যান্ডার্সকে করা হলে গম্ভীর মুখে তিনি উত্তর দেন, আমার মনে হয় না, তারা প্রেসিডেন্ট স্যান্ডার্সকে খুব একটা ভালোবাসবে।
সর্বশেষ জনমত জরিপ অনুযায়ী স্যান্ডার্সের তুলনায় অনেক বেশি ব্যবধান—প্রায় ৩০ শতাংশ ভোটে এগিয়ে আছেন হিলারি। মূলত সে কারণে এই বিতর্ক তেমন আগ্রহের সঞ্চার করেনি। তবে, বিতর্ক শেষে সব ভাষ্যকারই একমত—এবারও হিলারিই বিজয়ী।