'চাঁদের পাহাড়' - বিভূতিভূষণ বন্দ্যােপাধ্যায়

চাঁদের পাহাড়

বিভূতিভূষণ বন্দ্যােপাধ্যায়

প্রথম প্রকাশ: ১৯৩৭

ভাষা: বাংলা

 কাহিনি:  ফরাসি লেখক জুলভার্নের লেখা পড়লে মনে হয়, না জানি তিনি কত কত দেশ ভ্রমণ করেছেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, নিজের বাড়ির ছোট্ট এক চিলেকোঠায় কাটত তাঁর অধিকাংশ সময়। তবে সেখানে থরেথরে সাজানো ছিল হাজারো বই, পত্রিকা আর নানা দেশের মানচিত্র। আর মনের ভেতর ছিল অদম্য অ্যাডভেঞ্চারের নেশা। বই আর মানচিত্রে মুখ ডুবিয়ে তিনি কল্পনায় পাড়ি দিতেন বিশ্বের নানা দেশ। কল্পনাতে ভর করেই তিনি লিখেছিলেন বিখ্যাত  আশিদিনেবিশ্বভ্রমণসহ অন্যান্য জনপ্রিয় অ্যাডভেঞ্চার কাহিনি। বাঙালি লেখক বিভূতিভূষণ বন্দ্যােপাধ্যায়ের মধ্যেও ছিল প্রকৃতির প্রতি আজন্ম টান আর জুলের মতোই অ্যাডভেঞ্চারের নেশা। কিন্তু দুর্জনেরা বলে, বিভূতিভূষণ ছিলেন ঘরকুনো টাইপের। কিন্তু এই মানুষটাই স্রেফ কল্পনার ডানায় ভর দিয়ে চলে গিয়েছিলেন দুর্গম আফ্রিকার ঘন জঙ্গল আর পাহাড়ের দেশে। সেই কাল্পনিক অভিজ্ঞতা দিয়ে লিখেছিলেন অ্যাডভেঞ্চার আর টান টান উত্তেজনায় ভরপুর  চাঁদেরপাহাড় উপন্যাসটি।

 বইটিতে একেবারে অজপাড়াগাঁয়ের ছেলে শঙ্করের কাহিনি শুনিয়েছেন লেখক। এফএ (এখনকার এইচএসসি) পাস করে ঘরেই বসে ছিল শঙ্কর। এর বেশি পড়ালেখা করার সামর্থ্য নেই। তবে প্রখর বুদ্ধিমান আর সাহসী ছিল সে। এক আত্মীয়ের কল্যাণে চাকরি পায় শঙ্কর। তবে সে চাকরি দেশে নয়, একেবারে গহিন জঙ্গলে ঢাকা সুদূর আফ্রিকায়। সেখানে নতুন রেললাইন বসানোর কাজ পায় সে। স্টেশনের পাশেই এক ঘরে একা একা রাত কাটাতে হয় তাকে। একদিন হঠাৎ অ্যালভারেজ নামের এক পতু‌র্গিজ ভদ্রলোক ভীষণ অসুস্থ অবস্থায় সেখানে উপস্থিত হয়ে শঙ্করের হাতে একটা ম্যাপ ধরিয়ে দেন। তাতে গহিন বনের ভেতর এক পাহাড়ের ঠিকানা আঁকা। সেখানে পৌঁছালেই পাওয়া যাবে হীরার খনি। শঙ্করের সেবা-শুশ্রূষায় অ্যালভারেজ সুস্থ হয়ে উঠলে তাঁর সঙ্গে হীরার খনির সন্ধানে অজানার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে শঙ্কর। তারপর? শুরু হয় রোমাঞ্চকর এক অভিযান। পথে পথে মৃত্যুর হাতছানি। সেই সঙ্গে বিস্তীর্ণ মরুভূমিতে ক্ষুধা, তৃষ্ণা, ভয়। সব কিছু মিলে দারুণ এক কাহিনি।

 মজার ব্যাপার হচ্ছে, যারা বিদেশি অ্যাডভেঞ্চার পড়ে অভ্যস্ত, তাদের কাছে বইটি অনুবাদ বা বিদেশি কাহিনি অবলম্বনে লেখা বলে মনে হতে পারে। পাঠকের এ রকম সন্দেহের কথা আঁচ করেই বিভূতিভূষণ লিখেছিলেন: ‘চাঁদের পাহাড় কোন ইংরেজি উপন্যাসের অনুবাদ নয়... আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলের ভৌগোলিক সংস্থান ও প্রাকৃতিক দৃশ্যের বর্ণনাকে প্রকৃত অবস্থার অনুযায়ী করবার জন্য আমি এইচ. এইচ. জনস্টন, রোসিটা ফরবস প্রভৃতি কয়েকজন বিখ্যাত ভ্রমণকারীর গ্রন্েথর সাহায্য গ্রহণ করেছি।’ শিশু-কিশোরদের জন্য লেখা বিভূতিভূষণের এ বইটি ১৯৩৫ সালে সুধীরচন্দ্র সরকার সম্পাদিত মাসিক  মৌচাক পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। তারপর বই হিসেবে প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৩৭ সালে। কিন্তু এত দিন পরও  চাঁদেরপাহাড়-এর আবেদন কমেনি এতটুকুও।

ঢাকার বাংলামোটরের বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র থেকে  চাঁদেরপাহাড়-এর একটি সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে বেশ আগে। ইচ্ছে করলে সেখান থেকে বইটি সংগ্রহ করতে পারো। বইটির কাহিনি নিয়ে সম্প্রতি একটি চলচ্চিত্রও তৈরি হয়েছে কলকাতায়। এ মাসের মাঝামাঝি সেটা মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে। বইটি পড়ার পর ছবিটিও দেখে নিতে পারো।