প্রজাপতির সেরা সাত

 প্রজাপতির ডানা দেখে কাবু হয়েছিলেন অনেক কবি-সাহিত্যিক। তাঁদেরই একজন বিস্ময়ে লিখেছিলেন, ‘...কোথায় পেলে ভাই এমন রঙিন পাখা।’ রংবেরঙের প্রজাপতি দেখলে আসলে ভালো না লেগে উপায় নেই। পৃথিবীতে প্রায় ২০ হাজার প্রজাতির প্রজাপতি আছে। একেকটার সৌন্দর্য একেক রকম। সুন্দরী প্রতিযোগিতা হলে ওদের মধ্যে সেরাজনকে খুঁজে পাওয়া সহজ নয়। তবে সেই তালিকায় নিচের প্রজাপতিগুলো এগিয়ে থাকবে নিশ্চিত।

 . সোয়ালো টেইল বাটারফ্লাই

বেগুনি ফুটকিওলা এ প্রজাপতির আরেক নাম গ্রাফিয়াম ওয়েস্কি। সোয়ালো পাখির মতো এদের পাখার নিচটা বেশ লম্বা আর ঝোলানো। সে জন্য এদের সোয়ালোটেইল (দীর্ঘ লেজবিশিষ্ট) বলা হয়। বিশ্বে প্রায় ৫৫০ প্রজাতির সোয়ালোটেইল প্রজাপতি দেখা যায়। এদের মধ্যে সেরা নিউগিনির বেগুনি ফুটকিওলা সোয়ালোটেইল। বাংলাদেশেও বেশ কয়েক প্রজাতির সোয়ালোটেইল দেখা যায়।

 . লাল লেসউইং

এ প্রজাপতির ডানা সাধারণ লাল বা কমলা হয়। ডানার চারদিক লেস বা ফিতার মতো। সেখান থেকেই এদের নাম হয়ে লেসউইং। এদের বাস ভারত, নেপাল, চীন, ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়ায়।

 . নীল মর্ফো

গ্রিক পুরাণে ট্রয়ের হেলেনের স্বামী ছিলেন স্পার্টার রাজা মেনেলাস। তাঁর নামেই এ প্রজাপতির বৈজ্ঞানিক নাম মর্ফো মেনেলাস ( Morpho menelaus)। বিশ্বে প্রায় ২৯ প্রজাতির মধ্যে নীল মর্ফো দেখতে সবচেয়ে সুন্দর। ডানা ছড়ালে এদের প্রশস্ততা প্রায় ৬ থেকে ৮ ইঞ্চি হয়। দক্ষিণ, মধ্য আমেরিকা ও মেক্সিকোতে এদের বাস।

 . লেপার্ড লেসউইং

লেপার্ড লেসউইংদেরও ডানার চারদিকে লেস বা ফিতার মতো একটি অংশ থাকে। আর লেসের ভেতর থাকে চিতাবাঘের মতো ডোরাকাটা। তাই এ প্রজাপতিদের নাম লেপার্ড বা চিতাবাঘ লেসউইং। ভারত, চীন, সিঙ্গাপুর ও মালয় উপদ্বীপে এদের বাস।

 . ময়ূর প্রজাপতি

কোথায় ময়ূর আর কোথায় প্রজাপতি! কিন্তু সোনার পাথরবাটি না হলেও ময়ূর প্রজাপতি কিন্তু সত্যিই হয়। ইংরেজিতে হলো পিকক বাটারফ্লাই। এদের ডানায় চোখের মতো দুটি ফুটকি দেখে মনে হবে, কেউ বুঝি রাগী চোখে তাকিয়ে আছে। সে ভয়েই শত্রুরা এদের ঘাঁটায় না। এশিয়ার কয়েকটি দেশে এবং ইউরোপে এদের দেখা যায়।

 . অস্ট্রেলিয়ান পেইন্টেড লেডি

অস্ট্রেলিয়া মহাদেশে এ প্রজাপতির দেখতে পাওয়া যায় বলেই এদের নামের সঙ্গে দেশটির নাম জুড়ে আছে। এদের ডানায় রংবেরঙের নানান প্যাটার্নের আঁকিবুঁকি। সে কারণেই এদের দেখলে যে কারও চোখ জুড়িয়ে যাবে।

 . মনার্ক বাটারফ্লাই

প্রজাপতি জগতের বিস্ময় মনার্ক বাটারফ্লাই। এরা মাইগ্রেটরি বা পরিযায়ী প্রজাপতি। শীতকালে অতিথি পাখিদের মতো এরাও ঠান্ডা থেকে বাঁচতে প্রায় চার-পাঁচ হাজার কিলোমিটার পাড়ি দেয়। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা থেকে এরা দলবেঁধে পাড়ি জমায় মেক্সিকোতে।

প্রজাপতি মেলা

প্রজাপতির ছবি দেখে মন না ভরলে একটা সুখবর দিই। ৬ ডিসেম্বর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চতুর্থবারের মতো আয়োজিত হচ্ছে প্রজাপতি মেলা। দিনব্যাপী এ মেলায় সবকিছুই হবে প্রজাপতি নিয়ে। সেখানে থাকবে প্রজাপতি নিয়ে ছবি আঁকা, আলোকচিত্র ও বিতর্ক প্রতিযোগিতা, প্রজাপতির হাট, ঘুড়ি উড়ানো, আলোকচিত্র ও ডকুমেন্টারি প্রদর্শনীসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এ ছাড়া থাকছে প্রজাপতি বিষয়ে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন।

প্রজাপতি পার্ক  

প্রজাপতি মেলায় অংশ নিতে না পারলেও হতাশ হওয়ার কিছু নেই। কয়েক বছর আগে গাজীপুরে গড়ে তোলা হয়েছে প্রজাপতি পার্ক। এ পার্ক সম্পর্কে জানতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগে খোঁজ নিতে পারো। সেখানে রঙিন ডানা মেলে তোমার জন্য অপেক্ষা করছে কয়েক হাজার প্রজাপতি। এ ছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রামেও গড়ে তোলা হচ্ছে প্রজাপতি পার্ক।

প্রজাপতির মজার তথ্য 

১.  সাইবেরিয়ার তীব্র শীতেও বাঁচতে পারে কিছু প্রজাতির প্রজাপতি।

২.  প্রজাপতির জীবনের চার ভাগের এক ভাগ কেটে যায় শুয়াপোকা হিসেবে।

৩.  মেয়ে প্রজাপতির চেয়ে পুরুষ প্রজাপতির ডানার রং অনেক বেশি উজ্জ্বল হয়।

৪.  একটি মেয়ে প্রজাপতি ২৫ থেকে ১০ হাজারটি ডিম দিতে পারে।

৫.  কোনো কোনো প্রজাপতি উড়তে উড়তে ডিম দিতে পারে।

৬.  বেশির ভাগ প্রজাপতির আয়ু এক-দুই মাস। তবে যারা শীতে ঘুমিয়ে কাটায় তারা নয় মাসও বাঁচতে পারে।

৭.  প্রজাপতির ঘ্রাণশক্তি মানুষের চেয়েও অনেক বেশি।