চিলড্রেন অব হেভেন - মাজিদ মাজিদি

চিলড্রেন অব হেভেন

লেখক ও পরিচালক: মাজিদ মাজিদি

প্রথম প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ১৯৯৮, ইরান

ধরন: ড্রামা

ভাষা: ফার্সি

ব্যাপ্তি: ৮৯ মিনিট

 কাহিনি:  রূপকথার গল্পে রত্নখচিত এক জোড়া জুতা বদলে দিয়েছিল হতভাগা  সিন্ডারেলার?????????????  জীবন। চাকরানি থেকে সে হয়ে গিয়েছিল রাজরানি। সে কাহিনি নিশ্চয়ই মনে আছে। তাহলে এবার রত্নখচিত নয়, ছেঁড়াখোঁড়া এক জোড়া জুতার গল্প শোনো: ইরানের রাজধানী তেহরানের শহরতলির দরিদ্রপাড়ায় পরিবারের সঙ্গে থাকত ছোট্ট আলী। একদিন ছোট বোন জোহরার ছেঁড়া জুতা সারাতে বাজারে যায় আলী। কিন্তু ঘটনাক্রমে জুতোজোড়া হারিয়ে ফেলে আলী। তন্নতন্ন করে খুঁজেও সেটির খোঁজ মেলে না। বাবা-মায়ের বকুনির ভয়ে বাড়িতে কিছু বলে না আলী। তবে জুতার মালিক মানে জোহরাকে তো বলতেই হয়। শোকে-দুঃখে কাঁদতে শুরু করে জোহরা। কারণ ওই এক জোড়াই জুতা তার। এখন স্কুলে যাবে সে কীভাবে? জোহরা তখনই বাবা-মাকে ঘটনা বলতে ছুটে যায়! অনেক অনুনয় আর ঘুষের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাকে ঠেকায় আলী। সেই সঙ্গে স্কুলের জন্য নিজের জুতোজোড়া জোহরাকে ধার দিতে রাজি হয় আলী। বাধ্য হয়ে মেনে নেয় জোহরা।

 চুক্তিমতো পরদিন শুরু হয় ভাইবোনের গোপন অভিযান। ভোরে আলীর জুতা পায়ে স্কুলে যায় জোহরা। সে স্কুল থেকে ফিরলেই সেই জুতা পরে আবার স্কুলে যাবে আলী। তাই স্কুল ছুটির পরপরই রুদ্ধশ্বাসে দৌড়ে ভাইয়ের কাছে আসতে হয় জোহরাকে। তড়িঘড়ি করে সেই জুতো পায়ে স্কুলের দিকে পড়িমরি করে দৌড়ায় আলী। কিন্তু এভাবে প্রতিদিনই স্কুলে পৌঁছাতে দেরি হয়ে যায় আলীর। ক্লাসের ভালো ছাত্র হওয়ায় প্রথম প্রথম মাফ পেলেও, একদিন তার বাড়িতে জানানোর হুমকি দেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক। কিন্তু সামনে আর কোনো উপায় খোলা নেই আলী আর জোহরার!

একদিন স্কুলে এক দৌড় প্রতিযোগিতার ঘোষণা দেওয়া হয়। তাতে তৃতীয় হলে পুরস্কার হিসেবে পাওয়া যাবে এক জোড়া নতুন জুতা। সুযোগটা কাজে লাগাতে চাইল আলী। পুরস্কারটা পেলেই সব সমস্যার সমাধান। তৃতীয় পুরস্কার পাওয়ার জন্য একদল ছেলের সঙ্গে মরিয়া হয়ে দৌড়াতে শুরু করে সে। কিন্তু দৌড় শেষে ভীষণ এক অবুঝ কান্নায় ভেঙে পড়ে আলী। কারণ তৃতীয় নয়, প্রথম হয়েছে আলী। এ দৃশ্যে সবাই হতবাক। কিন্তু তারা তো জানে না, সে পুরস্কার হিসেবে শুধু জুতোই চেয়েছে, অন্য কিছু নয়! এরপর... এরপরের ঘটনা নাহয় নিজেই দেখে নিয়ো।

জনৈক মনীষী বলেছিলেন, শিশুরা স্বর্গ থেকে আসা ঈশ্বরের দূত। আলী আর জোহরার কাণ্ডকীর্তি যেন তারই প্রমাণ। সামান্য এক জোড়া জুতার কাহিনি বলতে গিয়ে পরিচালক মাজিদ মাজিদি শুনিয়েছেন, অম্লমধুর শৈশবের পাওয়া না-পাওয়ার গল্প। দরিদ্র ভাইবোনের দুরন্ত কিন্তু মানবিক ভালোবাসার গল্প। পাশাপাশি পুরো ছবিতেই ছড়িয়ে আছে হাসি, কান্না, মজা, রোমাঞ্চ আর টান টান উত্তেজনা। গল্পের জাদুতে মলিন জুতো হয়ে উঠেছে রঙে রঙিন, দেশ-কালের সীমানা পেরিয়ে হয়ে উঠেছে সব মানুষের কাহিনি। ১৯৯৮ সালে ইরানে মুক্তি পায় ছবিটি। পরের বছর মুক্তি পায় যুক্তরাষ্ট্রে। তবে তার আগেই ইতালির বিখ্যাত লাইফ ইজ বিউটিফুল কে হটিয়ে বিদেশি ভাষায় অস্কার জিতে নেয়  চিলড্রেন অব হেভেন।