আব্বাই আয়নাটা ভেঙেছে!

আমার ছোট ভাই, ছোটবেলা থেকেই ভীষণ দুষ্ট। ওর মাথাভর্তি ছিল বিটকেলে সব বুদ্ধি। সেই বুদ্ধি খাটিয়ে সে কী না করেছে! কখনো হয় কাউকে বোকা বানিয়েছে, না হয় কাউকে অবাক করে দিয়েছে। আমাদের বাসায় একটা হ্যান্ডমিরর ছিল। ওটা ছিল আব্বার। গ্রামের বাড়িতে তখন ওই হ্যান্ডমিরর দেখেই মানুষ চুল আঁচড়ানো, শেভ করা ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ কাজ সারত। ওটা ছিল প্লাস্টিক ফ্রেমের। তো একদিন ও খেলতে খেলতে ওটা ভেঙে ফেলল। আমিও দেখে ফেলেছি বলে সেদিন রক্ষা, নইলে আমার নামই বলত ও। আমার আর ওর মধ্যে সম্পর্কটা দা-কুমড়ার। সুতরাং আমি তো বলে দেব! ও আমাকে তখন অনেক কাঁচুমাচু করে বলল কাউকে না বলতে। কিন্তু আয়নাটা যে ভেঙেছে সেটা তো সত্যি। আর ওটা যখন আব্বা জানবে তখন তো মার খেতে হবে। বড় হিসেবে আমাকেই একটু বেশি খেতে হবে। তাহলে কী করা যায়? ও তখন বলল, চল একটা বুদ্ধি করি। আব্বার বালিশের নিচে রেখে দিই। আব্বা যখন শোবে, তখন নিশ্চয় শব্দ হবে। আর বের করে দেখবে আয়না ভাঙা। তখন আমরা বলতে পারব আব্বাই আয়নাটা ভেঙেছে। যদিও আমি খুব ভয়ে ভয়ে ছিলাম, ও কিন্তু খুব স্বাভাবিকভাবে ওটা আব্বার বালিশের নিচে রেখে দিল। যেন কিছুই হয়নি, এই রকম ভাব নিয়ে সুবোধ বালকের মতো পড়তে বসল। যথারীতি আব্বা রেস্ট নিতে যখন শুলো, তখনই কড়াৎ করে আয়নায় শব্দ হলো। লাভের ওপর ডাবল লাভ, আম্মাও ওখানে ছিল তখন। ব্যস আর যায় কই? যথারীতি আম্মা আব্বাকে অনেকগুলো কথা শুনিয়ে দিলেন। আব্বাও মনে করতে পারল না তিনি কখন আয়না বালিশের নিচে রেখেছেন। কিন্তু আয়না না ভেঙেও আয়না ভাঙার পুরো দায়িত্বটা আব্বাকেই সেদিন নিতে হলো। কিন্তু আমরা তখন খুশিতে ফেটে পড়ছি। বাহ! এত সহজে ঝামেলা চুকে গেল!

 মিলটন খন্দকার

 সন্দ্বীপ, চট্টগ্রাম