সেলফি

.
.

‘বেবি...বাবু...হানি...ওঠো না! এই বেবি! আমার এঞ্জেলু!’ আদুরে গলায় কতবার ডাকলাম। অথচ নিশার ওঠার নাম নেই।
সবকিছু ভালোই চলছিল। ঠোঁট গোল, মুখ সরু করে এসব আহ্লাদীপনা আমি বেশ দ্রুত শিখে নিয়েছিলাম। কেমন করে সকালে ফোন করে ‘গুডু গুডু মর্নিং বেবি’ বলতে হয়, কেমন করে প্রতিবার ফোন রাখার আগে ‘লাভ্যু’ বলতে হয়, তার সবই আমার জানা ছিল। লাল গ্যাবার্ডিন প্যান্টের সঙ্গে হলুদ টি-শার্ট আমি পরতে শিখেছিলাম। নিশার বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হলে ভারী গলায় ‘হেই ডিউড, হোয়াটস আপ’ বলাটাও বেশ ভালোই রপ্ত করেছি। ওরা কেউ ধরতেই পারেনি, আমি ওদের মতো না। বিপত্তি বাধাল ওই এক সেলফি।
যেই নিশা ‘উলে মাই নটি ক্যাট! গুলু গুলু গুলু!’ বলে আমার গাল টিপে দিত, সে এখন আমার সামনে চোখ উল্টে চিতপটাং হয়ে পড়ে আছে। দাঁতে দাঁতে বাড়ি খেয়ে কিটকিট কিটকিট শব্দ হচ্ছে। কী মুশকিল!
মেয়েটার সঙ্গে আমার কোনো কিছুই মেলে না। ও রেস্টুরেন্টে গেলে খায় কম, ছবি তোলে বেশি। ওর চলাফেরা ‘হ্যাং আউট, গো আউট, ঞ(ইয়ো) বাডি, সো কুউউউল’ এর দুনিয়ায়। আমার দুনিয়ার কেউই এসব বোঝে না। নিজের কাজ বাদ দিয়ে আমি এই নারীর সঙ্গে তাল মেলাচ্ছি জানলে নিশ্চয়ই আমাদের পাড়ায় ছি ছি পড়ে যাবে। তবু আমি ওসবের পরোয়া করিনি। ভেদাভেদ ভুলে ওর মতো হতে চেয়েছি, কিন্তু ঝামেলা পাকাল ওই যে বললাম...সেলফি!
কদিন ধরেই মনে হচ্ছিল, নিশা বুঝি আমার চেয়ে সেলফি তুলতেই বেশি ভালোবাসে। নইলে সারা দিন মুখ বাঁকিয়ে, ঠোঁট ফুলিয়ে, ভ্রু কুঁচকে, চোখ বড় করে এই কারবার কেন? ভেবেছিলাম, ওর সুন্দর একটা সেলফি তুলে দিলে নিশ্চয়ই ‘ইউ মাই লাভলি গুল্টু মুল্টু পুল্টু’ বলে লাফিয়ে উঠবে। সে আর হলো কই?
আজ নিশা বেশ কিছুক্ষণ ধরেই জুতসই একটা সেলফি তোলার চেষ্টা করছিল। ‘না, এখানে আমার নাকটা মোটা দেখাচ্ছে...ওমা, কানের দুলটা তো দেখাই যাচ্ছে না...ধুত্তরি, ড্রেসটাই তো ঠিকমতো আসল না...’ এসব বলে বলে একের পর এক সেলফি ডিলিট হচ্ছিল। প্রেমিক পুরুষের মতো তখন আমি গেলাম এগিয়ে। বললাম, ‘দাও সুইটু, আমি তুলে দিচ্ছি।’ আর তার পরই ঘটল এই দুর্ঘটনা।
মোবাইলটা হাতে নিয়ে হাত লম্বা করলাম। নিশাও তাঁর ট্রেডমার্ক হাসি নিয়ে প্রস্তুত। এই প্রথম নিশাকে আমার ক্ষমতা দেখালাম। আমার হাত লম্বা হতে শুরু করল। হতেই থাকল। ১০ ফুট, ২০ ফুট, ৩০ ফুট...এত ওপর থেকে এত সুন্দর সেলফি কে কবে তুলেছে শুনি? অথচ নিশা মোটেই খুশি হলো না। ‘ঈঈঈঈ... ও আল্লাগো মাগো’ বলে কাঁপতে কাঁপতে পড়ে গেল!
নাহ্, মনুষ্যজাতির সঙ্গে বুঝি আর থাকা হবে না।
‘বেবি...বাবু...হানি...ওঠো না! এই বেবি...’ আমি শেষবারের মতো ডাকলাম।
রেদোয়ান আহমেদ
কাঁঠালবাগান, ঢাকা।