একে ফরটি সেভেনের জনক!

নিজের হাতে তৈরি অস্ত্র একে ফরটি সেভেন (একে-৪৭) হাতে মিখাইল কালাশনিকভ
নিজের হাতে তৈরি অস্ত্র একে ফরটি সেভেন (একে-৪৭) হাতে মিখাইল কালাশনিকভ

হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে লোকটা কী যেন আঁকিবুঁকি করেন। নাম মিখাইল কালাশনিকভ। একজন রাশিয়ান যোদ্ধা, একজন ‘ট্যাংক গানার’ তিনি। জার্মান নাৎসিদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে গিয়ে আহত হয়েছেন। ট্যাংকের মাথায় বসে দুড়ুম দুড়ুম গোলা ছোড়া যাঁর কাজ, হাসপাতালে আশপাশের লোকজন তাঁকে ঘাঁটানোর সাহস পায় না। তিনি একমনে আঁকেন। তরুণ বয়সে তাঁর কবি হওয়ার শখ ছিল—এ কথা অনেকেই জানতেন। কাছের মানুষেরা তাই ভাবে, কালাশনিকভ হয়তো কবিতাটবিতা লিখছেন। হ্যাঁ, কবিতাই তো। কবিতার নাম ‘একে ৪৭!’

বিধ্বংসী অস্ত্র হলেও একে ৪৭ কালাশনিকভের কাছে কবিতার মতোই। একজন কবির মতোই মাথা খাটিয়ে, পরম যত্নে তিনি অস্ত্রের একেকটি অংশ তৈরি করেন। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে তিনি সেসব নকশাই আঁকতেন।

একে ৪৭ তৈরির ধারণাটি মিখাইল কালাশনিকভের মাথা থেকেই এসেছিল। Avtomat Kalashnikov -এর সংক্ষিপ্ত রূপ  AK, ১৯৪৭ সালে প্রথম তৈরি হয়েছিল বলে সঙ্গে যোগ করা হয় ৪৭। আরও বেশ কিছু অস্ত্রের নকশাকার হলেও একে ৪৭-এর জনক হিসেবেই তিনি বেশি পরিচিত। ২০০৪ সালে তাঁর সম্মানে একটা আস্ত মিউজিয়াম চালু করা হয়, যেখানে প্রদর্শিত হয় কালাশনিকভের তৈরি যাবতীয় অস্ত্র। কখনো রাশিয়ায় বেড়াতে গেলে ইঝেভ্স্ক শহরের এই মিউজিয়াম ঘুরে আসতে পারো।

কালাশনিকভ সব সময় বলতেন, ‘আমার অস্ত্র তৈরির মূল লক্ষ্য হলো দেশমাতার নিরাপত্তা রক্ষা করা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা। কিন্তু অস্ত্রের যে অপব্যবহার চলছে, এর পেছনে আমি নই, নষ্ট রাজনীতিবিদেরা দায়ী।’ ১৯১৯ সালে জন্ম নেওয়া এই অস্ত্রশিল্পী গত বছর ২৩ ডিসেম্বর বিদায় নিয়েছেন। জীবনের শেষ সময়টা খুব ভালো কাটেনি তাঁর। মন খারাপ করে বলতেন, ‘আমার আবিষ্কার নিয়ে আমি গর্বিত। কিন্তু খারাপ লাগে, যখন দেখি সন্ত্রাসীরা আমার তৈরি অস্ত্র ব্যবহার করছে।’

ভালো কথা, কালাশনিকভের গল্প শুনতে শুনতে তোমাদের কি ‘আয়রন ম্যান’-এর কথা মনে পড়ে যাচ্ছে? অস্ত্র নির্মাণপ্রতিষ্ঠান স্টার্ক ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক ছিলেন টনি স্টার্ক। যখন দেখলেন, তাঁর বানানো অস্ত্রশস্ত্র চলে যাচ্ছে সন্ত্রাসীদের হাতে, তখনই তিনি হয়ে উঠেছিলেন ‘আয়রন ম্যান’। অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে শুরু করেছিলেন। কালাশনিকভেরও মনে মনে ‘আয়রন ম্যান’ হওয়ার পরিকল্পনা ছিল কি না, কে জানে!

সূত্র: টাইম ম্যাগাজিন