শীতের সন্ধে রাতে

পৌষের এই শীতের বেলা বিকেলবেলাতেই

    তাকিয়ে দেখি আকাশে আর সূর্যটা যে নেই।

কালো চাদর পরল আকাশ শীত কাতুরে ও—

    সূর্য ডোবে যতই সাধা একটু থেকে যেও।

আমিও খেলা সাঙ্গ করে দৌড়ে এলাম বাড়ি,

    আলোয়ানটা গায়ে দিয়েই মাফলারটা পাড়ি,

লন্ঠনটার আলো মিটমিট, বই খুলে বই পড়া—

    শীতে হি হি, এমন সময় দুয়োরে শুনি কড়া।

কড়া নাড়ছে দুয়োরে কেউ—কে সন্ধে রাতে?

    উঁকি দিয়েই দেখি একজন বল্লম তার হাতে।

ওরে বাবা এ কোন বিপদ এ কোন মূর্তিমান?

    ঘাম ঝরতে লাগল আমার থাকলেও আলোয়ান।

শীর্ণ শরীর, লাল দুটি চোখ, পাকানো তার গোঁফ।

    দেখেই আমার বুদ্ধিশুদ্ধি বেবাক হলো লোপ।

আমতা-আমতা করছি দেখে দস্যুর হলো দয়া।

    বলে, বালক ভয় পেয়ো না, চাঁদটা ক্ষয়া ক্ষয়া।

তার মানে কী? অদ্ভুত এই তথ্য কেন দিচ্ছে?

    আকাশ পানে তাকিয়ে বলি, চাঁদের সেটা ইচ্ছে!

ক্ষয়া যদি তো পাঁজি দেখলেই উত্তরটা পাবে—

    কৃষ্ণপক্ষের চাঁদে কী আর জোছনা উছলাবে?

সাহস করে প্রশ্ন করি, সড়কি হাতে নিয়ে

    জাগিয়ে দিতে চাও চাঁদকে একটা খোঁচা দিয়ে,

যেন তার বুকের থেকে জোছনা ফেটে পড়ে?

    লোকটা তখন বলে উঠল ভীষণ ক্রুদ্ধ স্বরে—

ঠিক ধরেছ! সূর্য যদি সরিয়ে নেয় তাপ—

    গরিব মানুষ বাঁচে কী করে বলো দেখিনি বাপ?

সূর্য না হয় ডুবেই গেছে, তুমি উঠেছ বাপু,

    দেখছ নাকি আমরা গরিব শীতে থরথর কাবু!

তুমিই না হয় তাপ ছড়াতে শীতের রাত্রিবেলা!

    হেসে বললাম, দেখছি তোমার পড়ায় অবহেলা।

বই পড়লেই জানতে পেতে চাঁদের ব্যাপার কী!

    সূর্য থেকেই ধার করা তার আলো এই আর কি!

ধার করাতে আপত্তি নেই, করুক যতই ধার—

    সূর্য এমন কড়া মহাজন—জানবে চমৎকার।

ধার দেয় সে আলোটুকুই, তাপটা হাতে রাখে—

    চাঁদের তাই ঠান্ডা আলো বলছি তোমাকে।

চাঁদ খঁুচিয়ে লাভ নেই গো, তাপ নেই তার কাছে।

    বলল তবে ওম পোহাবার উপায় কী আর আছে?

তখন তাকে খুলে দিলাম গায়ের আলোয়ান।

    দেখছি শীতে আপনি কাতর এইটে নিয়ে যান।

লোকটা তখন সড়কি ফেলে বলল করুণ স্বরে—

    তোমার মতো পুত্র যদি থাকত ঘরে ঘরে

তবে কি আর গরিব মানুষ মরত প্রতি শীতে?

    পারত আমার মাথা এমন খারাপ করে দিতে!

সড়কি হাতে বেরিয়েছিলাম রেগে চাঁদের ওপর,

    তোমার কাছে জ্ঞান পেলাম আর পেলাম এ চাদর।

এই বলে সে টুকুস করে মিলিয়ে গেল কোথায়?

    কেবল তার সড়কি পড়ে থাকল বারান্দায়।

সেই সড়কি হাতে নিতেই হলো পাখির পালক।

    এবং শুনে উঠলাম স্বর—বালক ওরে বালক!

মিলিয়ে গেছে লোকটা তবু শুনলাম তার স্বরে—

    এমন পুত্র হয় যেন গো বাংলার ঘরে ঘরে—

যে খুলে দেয় গরিবকে তার গায়ের আলোয়ান—

    যেমন খুলে দিয়েছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান

যখন তিনি বালক ছিলেন সেই টুঙ্গিপাড়ায়।

    মনে পড়তেই ভরে উঠল আকাশ লক্ষ তারায় \