দেশের জন্য শিক্ষা

বিজ্ঞানের জটিল বিষয়গুলো হাতে-কলমে করতে গেলেই দেখা যায় সেগুলো মোটেও খটমট নয়, অনেক আনন্দের
বিজ্ঞানের জটিল বিষয়গুলো হাতে-কলমে করতে গেলেই দেখা যায় সেগুলো মোটেও খটমট নয়, অনেক আনন্দের

আচ্ছা, তোমরা যারা বিজ্ঞানে পড়ো, তারা সবাই কি বিজ্ঞান বইয়ের পরীক্ষা-নিরীক্ষাগুলো নিজে হাতে করে দেখো? অথবা সমাজ বইয়ে পড়া ইউরোপের দেশগুলোকে মানচিত্রে খুঁজে বের করো? অনেকে নিশ্চয়ই করো আর মাঝেমধ্যে ছোটখাটো অঘটন ঘটিয়ে ফেলার জন্য মায়ের কাছে বকুনিও খাও, তাই না? ঠিক তোমাদেরই মতো, কিন্তু বয়সে তোমাদের চেয়ে একটু বড় বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া একদল ছেলেমেয়ে আছে, যারা সারা দেশের স্কুল-কলেজে ঘুরে বেড়ায় আর ঘটিয়ে বেড়ায় নানা ‘অঘটন’! না, ভয় পাওয়ার কিছু নেই। ওদের এই অঘটনগুলো সব আমাদের পড়ার বইয়ের পড়াগুলোকেই আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য, বোঝানোর জন্য। ওদের সংগঠনের নামও তাই ‘শিক্ষা দেশের জন্য’। এখন হয়তো কেউ কেউ চিনে ফেলেছ, হয়তো তোমার স্কুলেই ওরা ইতিমধ্যে ঘুরে এসেছে।

শিক্ষা দেশের জন্যর শুরুটা কিন্তু হয়েছিল খুব সাধারণ একটা ঘটনা থেকে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নাম অনেকেই শুনেছ। বুয়েটপড়ুয়া কজন ছেলেমেয়ে একবার ছুটির অবসরে গ্রামের এক স্কুলে গিয়ে আবিষ্কার করল, গ্রামের ছেলেমেয়েরা তাদের চারপাশ সম্পর্কে অনেক কিছু জানে। ওরা ঠিক জানে দূর্বা ঘাস লাগালে ক্ষতস্থানে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যায় বা কীভাবে পানিতে সহজেই ভেসে থাকা যায়। ওদের যদি আরেকটু ভালো করে জানানো যায় যে চারপাশের কোন ঘটনা কেন ঘটছে, তাহলে ওরা নিজেরাই আরও অনেক মজার জিনিস বের করে ফেলতে পারবে। সেই সঙ্গে স্কুল-কলেজপড়ুয়া সব ছেলেমেয়েই যদি এভাবে ভাবতে শেখে, তাহলে তো সেটা একটা দারুণ ব্যাপার হবে! এই ভাবনা থেকেই ২০১২ সালের মার্চে পথচলা শুরু করল শিক্ষা দেশের জন্য। সঙ্গে জুটে গেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেলে পড়া অসম্ভব পরিশ্রমী এক কর্মীবাহিনী। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এগোতে থাকে কাজ।

দুই বছর ধরে কাজ করে বাংলা মাধ্যমের ষষ্ঠ থেকে নবম-দশম শ্রেণীর বইয়ের যত পরীক্ষা-নিরীক্ষা আছে, সেসব নিজে নিজে করার জন্য ওরা বানিয়ে ফেলেছে একটা টুলবক্স। তার নাম দিয়েছে ‘এক বাকশো বিজ্ঞান’। এই বাকশো নিয়ে ওরা ঘুরে বেড়ায় স্কুল-কলেজে আর ঘটিয়ে বেড়ায় নানা ‘অঘটন’। যারা দেখোনি, তারা হয়তো ভাবছ কী আছে এতে? তোমাদের বলে রাখি, বইয়ে পড়া ল্যাবরেটরির খটমট নামের যন্ত্রগুলোর প্রায় কিছুই নেই এতে। একদম এই মুহূর্তে তোমার হাতের কাছে যা যা আছে, সে রকম জিনিসপত্র দিয়েই বানানো হয়েছে এই টুলবক্সের সব যন্ত্রপাতি। যেমন কাগজ আর রংপেনসিল দিয়ে বর্ণচাকতি; কার্ডবোর্ড আর পেনসিল দিয়ে পেরিস্কোপ; বেলুন, কলম আর সুতা দিয়ে বেলুন রকেট। এর মূল উদ্দেশ্যই হলো, তোমাদের দেখানো যে শুধু বিজ্ঞানীরাই ল্যাবরেটরিতে বিজ্ঞান নিয়ে কাজ করতে পারেন না, বিজ্ঞান জানতে অনেক দামি ল্যাবরেটরি দরকারও নেই, বরং আমাদের চারপাশে প্রতিনিয়ত যা ঘটে চলেছে, তার সবকিছু থেকেই বিজ্ঞান শেখা যায়, বিজ্ঞান নিয়ে কাজ করা যায়। তুমিও তোমার চারপাশের পরিবেশ থেকেই বিজ্ঞান শিখতে পারো। মাঠের অভাবে বিকেলে যদি খেলতে যেতে না-ই পারো, ঘরে বসে ছোটখাটো জিনিস নিয়ে বিজ্ঞানের খেলা কিন্তু তুমি খেলতেই পারো। এই খেলা কোনো অংশে কম আনন্দদায়ক নয়। আর খেলতে খেলতেই তোমরা শিখে নিতে পারো বিজ্ঞানের জটিল তত্ত্বের ব্যাখ্যা, কোনো সূত্র কীভাবে কাজ করে আর পরিবেশের প্রতিটি ঘটনায় কীভাবে বিজ্ঞান জড়িয়ে আছে। খুলনা, আশুগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর ও হবিগঞ্জ থেকে শুরু করে এই বাকশো ঘুরে ফেলেছে ১০টিরও বেশি জেলা এবং স্কুলের বাচ্চাদের কাছ থেকে পেয়েছে অভূতপূর্ব সাড়া। কখনো সলিনয়েডের কারসাজি দেখে হাততালিতে ক্লাস মাতিয়ে ফেলেছে সবাই, আবার কখনো ঢাকনাসহ পানির গ্লাস মাথার ওপর উল্টিয়ে ধরার পরেও কেন সে ভিজে গেল না, তা দেখে অবাক হয়েছে। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে এই টুলবক্স ১০০টি এক্সপেরিমেন্টের মাইলফলক স্পর্শ করে। এখনো বেড়ে চলেছে এটির কলেবর। শিক্ষা দেশের জন্যর ইচ্ছা দেশের প্রতিটা প্রান্তে তাদের এই টুলবক্স পৌঁছে দেওয়া।

শিক্ষা দেশের জন্য তাদের মজার এক বাকশো বিজ্ঞান নিয়ে হাজির হয়ে যায় বিভিন্ন স্কুলে
শিক্ষা দেশের জন্য তাদের মজার এক বাকশো বিজ্ঞান নিয়ে হাজির হয়ে যায় বিভিন্ন স্কুলে

স্কুল-কলেজে বিজ্ঞানের টুলবক্স প্রদর্শনীর পাশাপাশি এই সংগঠনের নিয়মিত কাজের মধ্যে রয়েছে স্কুল-কলেজে নিয়মিত কর্মশালার আয়োজন করা, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ক্যানটিনগুলোতে যে বাচ্চারা কাজ করে, তাদের জন্য নৈশস্কুল কার্যক্রম। এ ছাড়া এই সংগঠন কাজ করছে প্যারালাল টেক্সট তৈরির। শিক্ষা দেশের জন্য স্বপ্ন দেখে, একদিন আমাদের দেশের স্কুলপড়ুয়া ছাত্রদের ঘরে ঘরে গড়ে উঠবে একেকটি ল্যাবরেটরি। পড়ালেখা নিয়ে ছেলেমেয়েদের আর কোনো অনীহা থাকবে না, স্কুলের পড়াও সবাই পড়বে চোখে-মুখে অসীম আগ্রহের ছাপ নিয়ে। ‘শিক্ষা দেশের জন্য’ সম্পর্কে আরও জানতে চাইলে ঘুরে আসতে পার  www.eshikkha.org এই ওয়েব ঠিকানায়। মেইল করতে পার  [email protected] ঠিকানায়। নিজেদের স্কুলে এমন আয়োজন করতে ফোন করতে পার ০১৯২৩২৭৩৭৯৩ নম্বরে।"