কী লেখে ছাই খবর কাগজ!

রোজ সকালে হকার আনে

    খবর কাগজ বিশ পাতার।

পাতায় পাতায় কী লেখে ছাই,

    পাই না তল হাতা মাথার!

একাত্তরে তিরিশ লক্ষ প্রাণের রক্ত বন্যা।

প্রধানমন্ত্রী জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কন্যা।

রক্ত দিয়ে পেয়েছি এই বাংলার স্বাধীনতা—

আমরা যেন না ভুলি সেই ইতিহাসটির কথা।

    কিন্তু আমার বেড়ালটি যে

       চুরি করে রোজ দুধ খায়—

    সে খবর তো কেউ লেখে না

       খবর কাগজ পাতায়!

ভোরের আলো ফোটার আগেই

    কাগজ আসে একখানা—

পাতায় পাতায় কত খবর

    কত কী জানা আর অজানা।

এবার ফসল খুব হয়েছে, গোলায় ভরা ধান।

শর্ষে তিসি পাটের ফলন এখন অফুরান।

নদীর বুকে নতুন সেতু, নতুন বিদ্যালয়,

নতুন হাসপাতাল কত—খবর ছাপা হয়।

    কিন্তু আমার দাঁতের পোকা,

       ব্যথায় আমি মরে যাই।

    সে খবরটি খবর কাগজ

       একটুও লেখে নাই!

রোজ সকালে উলটে দেখি

    খবর কাগজ বিশ পাতার।

পাতায় পাতায় ব্যবসায়ীদের

    বিজ্ঞাপনের কী বাহার!

কত রকম রঙিন ছবি দেশ ও বিদেশের।

পাখির ছবি মাছের ছবি, ছবি উৎসবের।

কে হয়েছে পরীক্ষাতে প্রথম তার ছবি—

কোন বাঙালি বিশ্বজয়ী, দেখতে পাচ্ছি সবই।

    কিন্তু আমার মায়ের মুখের

       কই ছবিটা কই?

    যে মুখ হাসে সকালবেলার

       আলোর মতো ওই!

সকাল কাটে, সন্ধে্য কাটে,

    রাত্রি গভীর হয়।

আমার মায়ের কাজের কী আর

    অবসরটি হয়?

রাঁধন বাড়ন চোদ্দজনের, ঘরের মোছামুছি—

সবার শেষে সব তলানির হাঁড়ির চাঁছিপুঁছি

খেয়েও খুশি! আমার পাশে আসেন বিছানায়—

ঘুমেও জেগে থাকেন যদি দস্যু এসে যায়!

    সাবধানী তার চক্ষু দুটি

       সংসার পাহারায়।

    আমার মায়ের মতো এমন

       মা পাব কোথায়?

সকালবেলার আলোর মতো,

    রাতে জ্যোৎস্নার মতো,

বকুল ফুলের তারার মতো,

    দুধের ভরা বাটির মতো,

এই যে আমার সকালসন্ধে্য জুড়ে আমার মা,

খরার দিনে বৃষ্টিধারার মতো আমার মা,

মাতৃভূমি মাতৃভাষায় সবখানে যে মা!

ভাতের থালায় জঁুইয়ের মতো মা!

    আমি যদি আজ বড় হতাম,

       হতো কাগজ আমার—

    ছাপতাম শুধু মায়ের ছবি,

       মায়ের খবর আমার\