আহারে 'পাঁচ'

খাবার হাত থেকে নিচে পড়লেই যে আর মুখে দেওয়া যাবে না এমন কোন কথা নেইমডেল: নাইমা

ছোটবেলায় ভাইবোনদের সঙ্গে খাবার নিয়ে অদ্ভুত প্রতিযোগিতা ছিল। কারও খাবার মাটিতে পড়লে তা পাঁচ সেকেন্ডের মধ্যে উঠিয়ে খেয়ে ফেলতে হবে। এর ভেতরে না পারলে ওই খাবার আর খাওয়া যাবে না। বড় হওয়ার পর অবশ্য এসব খেলা আর আমলে নেওয়া হয়নি। মাটিতে খাবার পড়ার সঙ্গে সঙ্গে নাক কুঁচকে তা ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছি। উফফ, যত্তসব জীবাণু!

সাম্প্রতিক কালে একটি গবেষণায় দেখা গেছে, বড়কালের তুলনায় ছোটকালের থিওরিতে অনেক বেশি জোর ছিল। যুক্তরাজ্যের অ্যাস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন গবেষণার পর প্রমাণ করেছে মাটির পৃষ্ঠ (অর্থাৎ ফ্লোর সারফেস যেমন কার্পেট, টাইলস, কাঠ, ইট ইত্যাদি) এবং খাবারের ধরনের ওপর নির্ভর করে খাবার মাটিতে পড়ার সেই ‘পাঁচ সেকেন্ড রুল’ প্রয়োগ করা সম্ভব। 

প্রকাশিত বিবরণ অনুযায়ী, বিজ্ঞানীর দল ভিন্ন ভিন্ন পৃষ্ঠে নানা ধরনের খাবার ফেলে ৩ থেকে ৩০ সেকেন্ড পর্যন্ত ‘ই কোলি’ (ইসেরিকিয়া কোলি) এবং ‘এস অরিয়াস’ (স্ট্যাফাইলোকক্কাস অরিয়াস) নামক দুটি বহুল প্রচলিত ব্যাকটেরিয়ার জন্য পরীক্ষা করেছে। দেখা যায় কার্পেট অথবা নরম তলে প্রায় ছয় সেকেন্ড পর্যন্ত খাবার ফেলে রাখা যায় এবং এই সময়ের ভেতরে কোনো জীবাণু প্রবেশ করতে পারে না। কিন্তু টাইলস অথবা লেমিনেটেড ফ্লোরে জীবাণু খুব দ্রুত ছড়িয়ে পরে। এর পাশাপাশি শক্ত খাবার যেমন টোস্ট বিস্কিট মাটিতে পড়ার পর যত না দ্রুত জীবাণুতে আক্রান্ত হয়, তার চেয়ে অনেক বেশি দ্রুত মিষ্টি বা নুডলসের মতো নরম খাবারে জীবাণু ছড়িয়ে পড়ে।

মজার বিষয় হলো, একই গবেষণায় অ্যাস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিক বিপরীত ফলাফল ২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ক্লেমসন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশ করা হয়। সেটিতে বলা হয়েছে, খাবার মাটিতে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাতে জীবাণু প্রবেশ করে। কাজেই মাটিতে পড়ে যাওয়া কোনো খাবারই আমাদের খাওয়া ঠিক নয়। ২০০৭ সালের গবেষণার পরিপ্রেক্ষিতে অ্যাস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর হিলটনকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান, ‘আমি ক্লেমসন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করছি না। আমাদের গবেষণায় প্রমাণ করা হয়েছে কতটা দ্রুত এবং কী ধরনের ফ্লোর সারফেসে ব্যাকটেরিয়া খাবারের ভেতর ছড়িয়ে যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে সময় অনেক বড় একটা বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। সেই হিসাবে আমরা এক ধাপ এগিয়ে আছি।’

বিজ্ঞানীদের ভেতর মতবিরোধ থাকবে। কিন্তু ঘর অপরিষ্কার থাকলে কোনো গবেষণাই জীবাণু থেকে আমাদের রেহাই করতে পারবে বা। তাই তুমি যদি পাঁচ সেকেন্ডের ভেতরে মাটিতে পড়ে যাওয়া চিপস অথবা চকলেট উঠিয়ে খেতে চাও, আগে অবশ্যই দেখে নিতে হবে সেটির ওপর দিয়ে তেলাপোকারা দিনরাত কুচকাওয়াজ করে কি না। তার চেয়েও বড় বিষয় হলো এরপর থেকে ছোট ভাইবোনদের কথা প্রথমেই ফুঁ মেরে উঁড়িয়ে দেওয়ার আগে একটু ভেবে নিয়ো, মস্ত বড় বিজ্ঞানীরা দুদিন পর তার কথাগুলো নিয়েই হইচই শুরু করবে না তো?

(ন্যাশনাল জিওগ্রাফি, ডেইলি নিউজ,অ্যাস্টন বিশ্ববিদ্যালয় মেইল অনলাইন সায়েন্স অবলম্বনে)