কিআ দুনিয়ায় স্বাগত

পাঁচ বছরে পা দিল কিআ। মেসি সেরা, নাকি রোনালদো—এ নিয়ে দ্বিধা আছে। কিন্তু পাঠকেরাই যে কিআর মূল শক্তি, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তো, পাঠকদের পছন্দ–অপছন্দ জানতে আমরা একবার একটা জরিপ করলাম কিআতে। প্রিয় লেখক কে, প্রিয় বই কোনটা, অবসরে কী করো—এমন অনেক প্রশ্ন ছিল সেখানে। ক্লাস থ্রি বা ফোরের একটা বাচ্চা লিখেছিল—
অবসরে যা করি: আমার আর অবসর! হোমওয়ার্ক করেই সময় পাই না!
প্রিয় লেখক—আমি নিজেই।
প্রিয় বই—আমার লেখা বই (তবে বইটা এখনো লেখা হয়নি)।
লেখাটা দেখে খুব মজা পেয়েছিলাম আমরা। কিন্তু আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, সত্যিই তার বইটা একসময় অসংখ্য পাঠকের প্রিয় বই হবে। আমরা জানি, কিআতে যে কিশোর–কিশোরীর লেখা–আঁকা ছাপা হচ্ছে প্রতি মাসে, এখান থেকেই বেরিয়ে আসবে দেশসেরা লেখক কিংবা শিল্পী। এখন যারা কিআর পাতায় মডেল হচ্ছে, কিংবা ছবি তুলছে কিআর জন্য, তারাই হবে দেশসেরা মডেল কিংবা আলোকচিত্রী। কিআর অনুষ্ঠানগুলোর আয়োজন করা ছোট ছেলেমেয়েরাই হয়তো বড় বড় অনুষ্ঠান সামলাবে। তখন কিআতেই তাদের সাক্ষাৎকার ছাপানোর দাবি তুলে শত শত চিঠি আসবে কিআ কার্যালয়ে।
চিঠি তো প্রতি মাসেই আসে কিআর ঠিকানায়। আমাদের কাজের টেবিলের পাশে তৈরি হয় ‘চিঠির পাহাড়’। চিঠিগুলো আমাদের হাতে যিনি পৌঁছে দেন, মাঝেমধ্যে বিরক্ত হয়ে তিনি বলেন, ‘এত চিঠি আসে কেন আপনাদের?’ ভালোবাসা? সঠিক উত্তরটা আমরাও জানি না। তবে সব কটি চিঠিই খুব আগ্রহ নিয়ে পড়ি আমরা। আদেশ-উপদেশ, আবদার, অভিমান, ভালোবাসায় পরিপূর্ণ এই চিঠিগুলো পড়তে খুব ভালো লাগে আমাদের। কত কিছু যে লেখা থাকে সেই চিঠিতে! আমরা টের পাই, এই ছেলেমেয়েগুলোর হাতের লেখা বদলে যাচ্ছে। ২০১৩ সালে যখন প্রথম কিআ প্রকাশিত হয়, তখন তাদের লেখা ছিল নদীর মতো আঁকাবাঁকা। কারণ, এই ছেলেমেয়েরা তখন ক্লাস থ্রি কিংবা ফোরে পড়ত। কিআকে সঙ্গে নিয়েই একটু একটু করে বড় হয়েছে তারা। ধীরে ধীরে বদলে গেছে তাদের পছন্দ। যে মেয়েটা ২০১৩ সালে চিঠিতে বলেছিল ‘কিআ ভাইয়া, আমার প্রজাপতি খুব পছন্দ, একটা প্রজাপতির ছবি দাও।’ সে–ই এখন লেখে, ‘আচ্ছা, গ্র্যাভিটেশনাল ওয়েভ ব্যাপারটা নিয়ে যে আলোচনা হচ্ছে, তা কি তুমি জানো? এ নিয়ে ফিচার কোথায়? না পারলে বলো, আমিই লিখে পাঠাব।’ কিংবা আগে যে ছেলেটা বলত, ‘কিআ, তুমি এত কঠিন কঠিন কুইজ দিচ্ছ কেন? আমি মেলাতে পারছি না।’ সে–ই এখন বলে, ‘সুডোকুতে ভুল করে বসে আছ, সে খেয়াল আছে? আর এসব কী সহজ কুইজ দাও? এ তো আমার ছোট বোনও পারে। শাকসবজি খাওয়া ছেড়ে দিয়েছ নাকি?’ স্কুল–কলেজ পেরিয়ে এদের সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবে, তখন হয়তো আর কিআ পড়বে না তারা, কিন্তু ক্যাফেটেরিয়ার আড্ডায় হঠাৎ আবিষ্কার করবে, ‘আরে, তুমি কিআ পড়তে? আমিও তো পড়তাম।’ এভাবেই কিআ থাকবে সবার বুকের ভেতর।
দেশজুড়ে কিআর হাজার হাজার পাঠক। কারও সঙ্গেই দেখা হয় না আমাদের। কিন্তু সারা দেশ থেকে আসা চিঠি পড়েই আমরা ঠিক জানি, কে কে এবার জেএসসি দিচ্ছে, কার ডেঙ্গু জ্বর হয়েছে, কার বিড়ালটা অভিমান করে চলে গেছে, শেষ বলে ছক্কা মেরে কে ম্যাচ জিতিয়েছে—সব। প্রতিটি নাম, হাতের লেখা আমাদের খুব প্রিয়, চেনাও, একেবারে কাছের বন্ধু যেন। ৬৪টি জেলাজুড়ে বন্ধুত্বের এই যে বিশাল বন্ধন, কিআ না থাকলে কি তা সম্ভব হতো? এই বন্ধুত্বই তো কিআর শক্তি। সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা কিআ বাহিনীই আসলে কিআর জগৎ। তাদের জন্যই আমরা গলা ফাটিয়ে বলতে পারি, ‘আমার পৃথিবী অনেক বড়।’ তুমিও কিন্তু আসতে পারো এ জগতে।

বুক ক্লাবে বইপড়ুয়াদের আড্ডা
যারা কিআ পড়ে, তাদের প্রায় সবাই বইপাগল। দেশ–বিদেশের বিভিন্ন বই পড়ে ভাজা-ভাজা করে ফেলে তারা (শুধু পাঠ্যবইটা ছাড়া)। কোন বই ভালো, কোন বই পড়লে বিরক্তিতে ঘুম আসে কিংবা ভয়ে ঘুম আসে না, এমন অনেক কিছু নিয়েই আলোচনা হয় কিআ বুক ক্লাবে। প্রতিযোগিতা, কর্মশালা তো থাকেই। কিআর বিভিন্ন পাতায় লেখালেখি করছে বুক ক্লাবের সদস্যরা। ২০১৫ সালে কিআ বুক ক্লাবের যাত্রা শুরু। ধীরে ধীরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের কিআপ্রেমীরা নিজ নিজ এলাকায় বুক ক্লাবের কার্যক্রম শুরু করে। প্রতি মাসে একটি মাসিক সভায় এক হয় বুক ক্লাবের সদস্যরা। বর্তমানে নিবন্ধিত ২৫টি বুক ক্লাব রয়েছে সারা দেশে। এতগুলো বুক ক্লাবের সবার কথা বলে শেষ করা সম্ভব না বুঝতেই পারছ। তবে এদের মধ্যে এ বছরের সেরা কে হলো, সেটা তোমরা জানতে পারবে শিগগিরই। ২৬ অক্টোবর ঢাকা কিআনন্দে ঘোষণা করা হবে সেরা বুক ক্লাবের নাম। অবশ্য তার আগে বেশ কয়েকটি বুক ক্লাবকে মনোনয়ন দেওয়া হবে কিআর ফেসবুক পেজ থেকে। ভোটাভুটির ব্যবস্থাও থাকবে।
তোমরা যদি নিজ এলাকায় বুক ক্লাব করতে চাও, তাহলে এই লিংকের মাধ্যমে নিবন্ধন করো— goo.gl/HgNKw2

ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি ক্লাব
কিআ বাহিনীর অনেকেই ছবি তুলতে ভালোবাসে। চলচ্চিত্র তৈরির স্বপ্নও অনেকের। এমন কিছু স্বপ্নবাজ ছেলেমেয়ের ২০১৭ সালের ৩০ জুলাই যাত্রা শুরু করে কিআ ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি ক্লাব। মোবাইল ফটোগ্রাফার থেকে শুরু করে গ্রাফিক ডিজাইনারও আছে ক্লাবে! প্রতি মাসেই হয় ক্লাবের মিটিং। সেখানে নিজেদের সম্প্রতি তোলা ৫টি সেরা ছবি ও ভিডিও নিয়ে সবার সঙ্গে আলোচনা করে সদস্যরা। কোনো অ্যাসাইনমেন্ট থাকলে জমাও দেয় মিটিংয়েই। আর নিয়মিত ফটোওয়াক, দল বেঁধে প্রদর্শনী/চলচ্চিত্র দেখতে যাওয়া, প্রতিযোগিতার আয়োজন, কর্মশালা তো আছেই। ক্লাবের সদস্যদের নিয়েই গঠন করা হয়েছে ফটোগ্রাফি, ভিডিওগ্রাফি ও গ্রাফিক ডিজাইনার দল। কিআর জন্য গ্র ফিকসের কাজ করা, ছবি তোলা, ভিডিও করা নিয়ে ব্যস্ত থাকে ক্লাবের সদস্যরা। কিআর মাসিক সভা ও অনুষ্ঠানগুলোর যে ছবিগুলো তোমরা দেখো, অধিকাংশই ক্লাবের সদস্যদের তোলা। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সদস্যরা বানিয়েছে প্রমোশনাল ভিডিও, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রও। ছয় মাস পরপর ক্লাবে নতুন সদস্য নিতে ঘোষণা দেওয়া হয় কিআর ফেসবুক পেজে। সদস্য হতে চাইলে চোখ রাখো কিআতে।

কিআড্ডায় ব্যান্ড শিরোনামহীন
কিআড্ডায় ব্যান্ড শিরোনামহীন

কী হয় কিআড্ডায়?
গান, আড্ডা, হইচই—সবই হয় কিআড্ডায়। প্রতি মাসের দ্বিতীয় বা তৃতীয় শনিবারের এই আড্ডায় ঢাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে ছেলেমেয়েরা এসে জড়ো হয় কিআ কার্যালয়ে। কিআড্ডায় আসার প্রক্রিয়াটা একটু জটিল। কিআতে প্রকাশিত লিংক থেকে অনলাইন রেজিস্ট্রেশন। তারপর একটা কিআ আর মৌলিক লেখা বা আঁকা নিয়ে এলেই হলো, তুমিও মেতে উঠবে কিআড্ডায়। মূলত কিআর বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা–সমালোচনার জন্যই এই আয়োজন, তারপরও এই আড্ডায় অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে আসেন দেশের সেরা লেখক, কার্টুনিস্ট, আলোকচিত্রীসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। প্রতি মাসেই আড্ডায় এসে গান শুনিয়ে যায় কোনো ব্যান্ড। সঙ্গে থাকে কুইজ আর পুরস্কারও। তো চলে এসো কিআড্ডায়।