দুষ্টু উল্কাটিকে মহাকাশেই গুম করে দিতে হবে

মহাকাশবিজ্ঞানীরা বলছেন, আর মাত্র ১৫ বছর পর, ২০২৯ সালে বিরাট এক উল্কাপিণ্ড পৃথিবীতে আছড়ে পড়তে পারে। তাহলে তো সর্বনাশ! এই দুষ্টু উল্কাটার নাম অ্যাপোফিস অ্যাস্টেরয়েড। এই বিশাল উল্কাপিণ্ড পৃথিবীতে আছড়ে পড়লে যে বিরাট বিপর্যয় ঘটে যাবে, তারপর আমরা কি বাঁচব? প্রায় সাড়ে ছয় কোটি বছর আগে এ রকম বিপর্যয়ে ডায়নোসরসহ পৃথিবীর অনেক প্রাণ ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা। আরেকটি বিপদ এখন মাথার ওপর ঝুলছে। এই বিশাল উল্কাপিণ্ডটি পৃথিবী লক্ষ্য করে ছুটে আসছে। এই সর্বনাশা দুর্ঘটনার আশঙ্কা অবশ্য মাত্র ৩ শতাংশেরও কম। তার পরও যদি আঘাত করে, পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব লোপ পেতে পারে। সমূহ বিপদ দেখে বিশ্বের বাঘা বাঘা বিজ্ঞানী গবেষণা শুরু করে দিয়েছেন। পৃথিবীর দিকে ছুটে আসা কোনো উল্কাপিণ্ডের গতিপথ ঘুরিয়ে দেওয়ার উপায় বের করার জন্য নাসা এখন থেকেই চেষ্টা করছে। কোনো রকেট পাঠিয়ে বিকল্প মহাকর্ষ বলের প্রভাবে মহাশূন্যে উল্কার গতিপথ বদলে দেওয়ার পদ্ধতি আবিষ্কার করা গেলে হয়তো এ রকম বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। যাক, আমরা আশা করব, ওই পাজিটা যদি এদিকে পা বাড়ায়, তাহলে তাকে মহাশূন্যেই গুম করে ফেলা হবে। তার চেয়ে ওটা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে পৃথিবীর আশপাশ দিয়ে মহাশূন্যে নিরুদ্দিষ্ট হয়ে যাক, সেটাই ভালো।

মহাবিশ্বের অনেক বিস্ময়কর ঘটনা সম্পর্কে আমরা খুব কমই জানি। হয়তো তোমার ঘুম ভেঙে গেছে সাতসকালে। ভাবছ, আরও কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকলে মন্দ হয় না। নট নড়নচড়ন, নট কিচ্ছু। কিন্তু তা কি সম্ভব? হাজার চেষ্টা করলেও তুমি স্থির, নিশ্চল থাকতে পারবে না। শুধু তুমি কেন, কেউ-ই পারবে না। কেন জানো? কারণ, এই মহাবিশ্বের সব গ্রহ-নক্ষত্র-চাঁদ-তারা এবং আমাদের এই পৃথিবীও অবিশ্বাস্য গতিতে তীর বেগে ছুটে চলেছে। সেই সঙ্গে ছুটছে তোমার খাট-পালঙ্ক, বিছানা-বালিশ।এবং তুমি নিজে। কত জোরে? আমাদের সৌরজগৎ যে গ্যালাক্সিতে আছে, যার নাম ছায়াপথ, সেটা প্রতি সেকেন্ডে ২২৫ কিলোমিটার বেগে ঘুরছে। এবং ঘুরতে ঘুরতেই প্রতি সেকেন্ডে ৩০৫ কিলোমিটার বেগে এই নিসর্গলোকের মহাসড়কের নির্দিষ্ট কোনো পথরেখা ধরে ছুটে চলেছে। এবার সংখ্যাগুলো যোগ করে দেখো তো। তুমি, আমি, আমরা সবাই এই মহাকাশের মহাপ্রান্তরে সেকেন্ড ৫৩০ কিলোমিটার বা প্রায় ৩৩০ মাইল বেগে ছুটে চলেছি! তার মানে এক মিনিটেই ভ্রমণ করছি প্রায় ২০ হাজার মাইল। ভাবতে পারো? বিছানায় শুয়ে শুয়ে মাত্র এক মিনিটেই আমরা ঢাকা থেকে আমেরিকা ছাড়িয়ে চলে গেছি। আর তুমি কি না ভাবছ নট নড়নচড়ন? তুমি সারাক্ষণ ছোটাছুটির মধ্যেই আছো, কিন্তু টের পাচ্ছ না কিচ্ছু। কারণ, পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি আমাদের এমন জোরে টেনে রেখেছে যে আমাদের ছুটে চলার ব্যাপারটি বোঝা কঠিন।

কত তারা আছে আকাশে? ধারণা করা হয়, মোট ১০ বিলিয়ন ট্রিলিয়ন তারা আছে আকাশে।
কত তারা আছে আকাশে? ধারণা করা হয়, মোট ১০ বিলিয়ন ট্রিলিয়ন তারা আছে আকাশে।

দ্বিতীয় বিস্ময় হলো আকাশের তারা। কত তারা আছে আকাশে? আমরা খালি চোখে অবশ্য খুব কম তারাই দেখি। ঢাকায় বা বড় শহরে রাতে আলো ঝলমল করে আর থাকে উজ্জ্বল বাতির আলো। তাই তারা দেখা যায় কম। কিন্তু মহাকাশে তারার সংখ্যা জানলে আক্কেলগুড়ুম! মোট ১০ বিলিয়ন ট্রিলিয়ন তারা আছে আকাশে। ১০-এর পাওয়ার ২২। সংখ্যাটা ইংরেজিতে বলতে হলো, কারণ বাংলায় এত বড় সংখ্যা এক কথায় প্রকাশ কঠিন। একটু বুঝিয়ে বলি। ১-এর পিঠে ১টা শূন্য দিলে হয় ১০, এখানে ১০-এর পাওয়ার ১। ২টা শূন্য দিলে ১০০, তখন বলি ১০-এর পাওয়ার ২। এখন ১০-এর পাওয়ার ২২ মানে হলো ১-এর পর ২২টা শূন্য। ১০,০০,০০,০০,০০,০০,০০,০০,০০,০০,০০০। বাংলায় বললে, ১০ কোটি কোটি কোটি তারা! এসো এই সংখ্যাটা কত বড় তার একটা ধারণা পাওয়ার চেষ্টা করি। পৃথিবীর সব কটি সমুদ্রসৈকতের বালুকণার সংখ্যার চেয়েও বেশি তারা আকাশে রয়েছে। এসব তারার মাত্র ১ শতাংশের যদি থাকে আমাদের সৌরজগতের মতো গ্রহমণ্ডলী আর তাদের মধ্যে যদি পৃথিবীর মতো কোনো গ্রহ থাকে, তাহলে আমরা ধরে নিতে পারি এই মহাবিশ্ব প্রাণস্পন্দনে ভরপুর!

আচ্ছা, নিউট্রন তারা কী, তোমরা জানো? এটা হলো মহাজাগতিক পদার্থের মধ্যে সবচেয়ে ঘনীভূত বস্ত্ত। কোনো তারার ভেতরে সুপারনোভা বিস্ফোরণের সময় এগুলোর উদ্ভব ঘটে। যখন কোনো তারার কেন্দ্রীয় অংশ দুমড়ে-মুচড়ে ভেঙে পড়ে, তখন বস্ত্তকণার ইলেক্ট্রন-প্রোটন প্রবল চাপে পিষ্ট হয়ে নিউট্রনে মিশে যায়। মাত্র ১০-১২ মাইল ব্যাসের নিউট্রন তারার ওজন অনেক বড় বড় তারার চেয়েও বেশি। কোনো নিউট্রন তারার সামান্য একটু অংশ, ধরা যাক একটু বড় আকারের ছক্কা গুটির সমান পদার্থের ওজন হবে প্রায় ১০ কোটি টন। এটা একটা বড়সড় পাহাড়ের ওজনের চেয়ে বেশি।

মহাবিশ্বের আরেক বিস্ময় হলো সূর্যের বিরাটত্ব। যদিও বিশ্বের অন্যান্য তারা বা নক্ষত্রের তুলনায় আমাদের সূর্য বলতে গেলে একেবারে বামন, তাই বলে একে অবহেলা করা যাবে না। মহাজাগতিক হিসাবের খাতায় আমাদের সূর্যকে শ্রেণীকরণ করা হয়েছে জি টু ডোয়ার্ফ স্টার ( G2 dwarf star) হিসেবে। কিন্তু সেই বামন তারা, অর্থাৎ আমাদের সূর্য এত বড় যে এর ভেতর ১০ লাখ পৃথিবী ভরে রাখা যায়!