হাসিই সবচেয়ে সেরা ওষুধ

রিমন মারা যাওয়ার পর স্বর্গে গিয়ে দেখল, বিশাল এক দেয়ালে অনেকগুলো বিশাল বিশাল দেয়াল ঘড়ি!

রিমন স্বর্গের দূতকে জিগ্যেস করল, এখানে এতগুলো ঘড়ি কেন?

স্বর্গের দূত বললেন, এগুলো হলো মিথ্যা ঘড়ি।

প্রত্যেক মানুষের জন্য একটা করে মিথ্যা ঘড়ি আছে। দুনিয়াতে থাকা অবস্থায় কেউ যদি একটি মিথ্যা কথা বলে, তা একবার নড়বে, দুটি বললে দুবার নড়বে, এইভাবে যে যত মিথ্যা বলে তার ঘড়ির কাঁটা ততবার নড়বে।

রিমন বলল, ওই ঘড়িটি কার?

দূত: এটা এক দরবেশের। তার ঘড়িটি একবারও নড়েনি!!

তার মানে তিনি দুনিয়াতে থাকা অবস্থায় একটাও মিথ্যা কথা বলেননি।

‘এটি একজন সত্যবাদী মানুষের, মিথ্যা না বলায় তার ঘড়ির কাঁটা নড়ছে না।’ জবাব দিলেন দূত।

রিমন বলল, ও! আচ্ছা, বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের ঘড়িগুলো কোথায়?

দূত বললেন, তাদের ঘড়িগুলো আমাদের অফিসে আছে, এগুলোকে আমরা টেবিল ফ্যান হিসেবে ব্যবহার করি।

এই গল্প পড়ে তোমার দুই ধরনের প্রতিক্রিয়া হতে পারে। এক, হাসতে হাসতে তুমি শেষ হয়ে গেলে! কিন্তু না রে ভাই, হেসে তুমি শেষ হবে না, শেষ হবে তোমার পেটের খাবার। ২০০৩ সালে প্রকাশিত অলটারনেটিভ থেরাপিস ইন হেলথ অ্যান্ড মেডিসিন নামে প্রকাশিত প্রবন্ধে  বলা হয়, হাসি হজমে সহায়তা করে। শুধু তা-ই নয়, হাঁসই শরীরে বিদ্যমান বিভিন্ন ক্যানসার কোষকেও শেষ করে দিতে পারে।

দুই নাম্বার প্রতিক্রিয়া হলো, গল্পটা পড়ে তুমি হাসতেই পারলে না। তোমার অবস্থা অনেকটা রামগরুড়ের ছানার মতো। শুনেছই তো:

‘রামগরুড়ের ছানা       

হাসতে তাদের মানা,

হাসির কথা শুনলে বলে,

"হাসব না-না, না-না !"

সদাই মরে ত্রাসে-       

ঐ বুঝি কেউ হাসে!

এক চোখে তাই মিটমিটিয়ে

তাকায় আশেপাশে!!’

রামগড়ুরের ছানা হয়ে থাকার কোনো মানে হয়? হয় না! তা ছাড়া যখন শুনবে,

‘এত হাসি দেখেও যারা

গোমড়া মুখে চায়,

তাদের দেখে পেঁচার মুখেও

কেবল হাসি পায়।’

তখন নিশ্চয়ই মেজাজ ঠিক রাখা দায় হবে, পেঁচাও তো মাকে দেখে হাসুক, সেটা নিশ্চয়ই তুমি চাইবে না। সুতরাং তোমার দায়িত্ব হচ্ছে আমার আমার এই কৌতুকটা শুনে সসম্মানে হাসা। সে হাসি হতে পারে নানা রকম; যেমন অট্টহাসি, রহস্যময় হাসি, স্মিথ হাসি, পিলে চমকানো হাসি, আছে ভিঞ্চির মোনালিসার হাসি কিংবা শওকত ওসমানের ক্রীতদাসের হাসি! এর যেকোনো একটি হাসি বেছে নিয়ে মুখ থেকে বের করে ছেড়ে দাও! 

হাসি দেহের ইমিউন সিস্টেম উন্নত করে

নেতিবাচক মনোভাব এবং মানসিক চাপের কারণে দেহে একধরনের কেমিক্যাল রিঅ্যাকশন ঘটায়, যা আমাদের দেহের ইমিউন সিস্টেম দুর্বল করে তোলে এবং আমরা অসুস্থতা বোধ করি। কিন্তু প্রাণখোলা হাসি আমাদের ইমিউন সিস্টেম উন্নত করে তোলে। এতে করে আমাদের দেহ রোগ প্রতিরোধ করতে পারে এবং আমরা সুস্থ থাকি। সুস্থ থাকার একটাই সমস্যা, যখন তখন স্কুল ফাঁকি দিতে পারবে না!

হাসলে দেহের রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধি পায়

আমরা যখন প্রাণখোলা হাসি (অনন্ত জলিল ভাই যদি হৃদযন্ত্র খুলে দিতে পারেন। তোমার হাসতে হাসতে প্রাণ খুলতে সমস্যা কী?) হেসে থাকি তখন আমাদের দেহে রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধি করে। এতে দেহের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গে এবং মস্তিষ্কে ভালোভাবে রক্তসঞ্চালন হয়, যা প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে সচল ও সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

হাসলে ক্যালরি ক্ষয় হয়

আমরা দেহের মুটিয়ে যাওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে কত কিছুই না করে থাকি। কিন্তু আমরা জানিও না, সারা দিনের প্রাণখোলা হাসি আমাদের ক্যালরি ক্ষয় করতে কতটা সহায়ক। মাত্র ১৫ মিনিটের প্রাণ খোলা হাসি আমাদের ২০-৪০ ক্যালরি পর্যন্ত ক্ষয় করে।

মানসিক চাপ মুক্ত করে এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ায় হাসি

মানসিক চাপ আমাদের জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকর। এটি আমাদের আত্মবিশ্বাসও কমিয়ে দেয়। কিন্তু হাসলে ‘এনডোরফিন’ নামক হরমোনের নিঃসরণ হয়, যা তোমার মস্তিষ্কে জাগায় ভালো লাগার অনুভূতি। এতে মানসিক চাপ দূর হয় এবং হারানো আত্মবিশ্বাসও ফিরে আসে। সুতরাং প্রাণখুলে হাস।

আমরা অবশ্য সবাই-ই কম বেশি হাসতে পছন্দ করি। হাসি সুখের একটি ভাব প্রকাশ করে। কিন্তু শুধু সুখে থাকলেই হাসতে পারবে, তা না হলে মুখে হাসি আনবে না—এমনটি কিন্তু মোটেও উচিত নয়; বরং মজার বিষয়টা হচ্ছে, দুঃখে থাকলেও যেকোনো বাহানায় হাসার চেষ্টা করবে। এতে দুঃখ ও মানসিক চাপ অনেকটাই কমে যায়।

‘হাসতে নাকি জানে না কেউ

কে বলেছে ভাই?

এই শোন না কত হাসির

খবর বলে যাই।

খোকন হাসে ফোকলা দাঁতে

চাঁদ হাসে তার সাথে সাথে...’ 

বুঝতেই পারছ, খোকনরা একটু বেশিই হাসে! গবেষণায় দেখা গেছে, একজন শিশু দিনে অন্তত ৪০০ বার হাসে, অথচ বয়স বাড়ার সঙ্গে হাসির পরিমাণ কমতে কমতে একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দিনপ্রতি গড় হাসির পরিমাণ দাঁড়ায় মাত্র ১৭ বার। এখন তুমিই ভেবে দেখো, তুমি কি বুড়িয়ে যেতে চাও?

২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলের এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গবেষণায় দেখা গেছে, হাসি শরীরের বিভিন্ন ক্লান্তি ও অবসাদ দূর করে। এতে হৃদ্যন্ত্র সুস্থ থাকে। কারণ হাসির মধ্য দিয়ে রক্ত চলাচল দ্রুত হয়। এর ফলে শরীরের অবসাদগ্রস্ততা দূর হয়। এমনকি মানসিক দুশ্চিন্তাও দূর হয়, যা হৃদ্যন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। সে জন্য হাসির সিনেমা দেখা, হাসির ক্লাবে সময় কাটানো কিংবা আনন্দময় আড্ডায় মেতে উঠতেই পারো তুমি।

কী আছে কপালে—এমন ভাবনা নিয়ে হাসা কঠিন। ফলে হাসি ব্যক্তিকে বর্তমানেই রাখে। আর সব অতীত-ভবিষ্যতের চিন্তা খানিকের জন্য হলেও ভুলিয়ে দেয়। অনায়াসে হাসতে হাসতে মাঝে মাঝে বলা যায়—কী আছে জীবনে? জীবন নিয়ে এত ভাবার কিছু নাই। জীববিজ্ঞানীরা বলেছেন, জীবনের অপর নাম পানি ছাড়া আর কিছু না! কেউ কেউ যদিও বলে জীবনটা ‘তামা তামা’ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এর কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ আজও কোনো রসায়নবিদ বের করার সময় পাননি। ‘এ’ বনে যে লাখ লাখ ‘এ’ পাওয়া যায় তেমন কথাও কোনো পরিবেশবিজ্ঞানী কিংবা ভাষাবিদকে বলতে শোনা যায়নি। তবে হ্যাঁ, জীবনও কখনো কখনো অনেক মূল্যবান। ঘটনাচক্রে, একবার এক ভদ্রলোক তার দেশের স্বৈরশাসকের জীবন বাঁচিয়ে দিয়েছিল। খুশি হয়ে তিনি বললেন, ‘তুমি জানো, তুমি কার জীবন বাঁচিয়েছ?’

লোকটি বুঝতে পারেনি, সে কার জীবন বাঁচিয়েছে, সুতরাং মাথা নাড়াল সে। ফ্রিতে চুলকেও নিল মাথাটা! তিনি বললেন, ‘আমি তোমার দেশের প্রেসিডেন্ট। এবার তুমি বলো, আমার জীবন বাঁচানোর বিনিময়ে তুমি কী চাও।’ লোকটি আর কোনো কিছু না ভেবে বলল, ‘একটা জিনিসই চাই, দেশের মানুষ যেন কিছুতেই জানতে না পারে যে, আমিই আপনার জীবন বাঁচিয়েছি!’