আইনস্টাইনের মস্তিষ্ক

আইনস্টাইন সর্বকালের সেরা বিজ্ঞানীদের একজন ছিলেন। তাঁর মেধার উত্স জানার জন্য মৃত্যুর সাড়ে সাত ঘণ্টা পর তাঁর মস্তিষ্কটি মৃতদেহ থেকে সরিয়ে ফেলে ২৪০ টুকরো করে সংরক্ষণ করা হয় এবং অংশবিশেষ পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন স্থানে গবেষণার জন্য প্রেরণ করা হয়। গবেষণার ফলাফল হিসেবে যা পাওয়া যায়, তা রীতিমতো বিস্ময়কর।

সাধারণের মস্তিষ্ক (বামে) ও আইনস্টাইনের মস্তিষ্ক (ডানে)
সাধারণের মস্তিষ্ক (বামে) ও আইনস্টাইনের মস্তিষ্ক (ডানে)

গবেষণায় দেখা যায়, আইনস্টাইনের মস্তিষ্কের কর্পাস কোলোসাম অংশ অন্যদের তুলনায় বেশ মোটা ছিল। কর্পাস কোলোসাম বিপুল পরিমাণ স্নায়ুগুচ্ছের সমন্বয়ে গঠিত হয়, যা  মস্তিষ্কের ডান ও বাঁ অংশের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে এবং এর মাধ্যমে বিভিন্ন বুদ্ধিবৃত্তিক প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়। এই অংশটি সুগঠিত হওয়ায় আইনস্টাইন চিন্তাভাবনায় অন্যদের চেয়ে ছিলেন এগিয়ে। তোমরা হয়তো ভাবতে পারো, আইনস্টাইন সৌভাগ্যবান। তাই তাঁর মস্তিষ্ক সাধারণ মানুষের চেয়ে উন্নত। গবেষণায় দেখা যায়, যেকোনো মানুষ মস্তিষ্কের কাজ বেশি বেশি চর্চার মাধ্যমে কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারে। আইনস্টাইন সমস্যা নিয়ে ভাবতে ভালোবাসতেন, তাই মাথা খাটাতেন প্রচুর এবং এই কারণেই তাঁর মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে (তাঁর গবেষণার একটি বড় অংশ ছিল থট এক্সপেরিমেন্ট)। বিষয়টা অনেকটাই শরীরচর্চার মতো।

তুমি যদি নিয়মিত শরীরচর্চা করো, তাহলে তোমার পেশি সুগঠিত হবে। বিবর্তন অকারণ  খরচ করা নিরুত্সাহিত করে। তোমার যদি ভারী কাজ করার প্রয়োজন না হয়, তাহলে পেশি সুগঠিত হবে না কারণ বেশি মাংসপেশি মানেই বেশি শক্তির চাহিদা। তোমার শরীরে যখন মাংসপেশি বাড়ছে, তখন তোমার ক্যালরির চাহিদাও বাড়ছে। তাই খাদ্য অপ্রতুলতার যুগে এই বৈশিষ্ট্যটি প্রাণীদের টিকে থাকতে সাহায্য করেছে। মস্তিষ্কের সুগঠনের জন্যও তাই মস্তিষ্কচর্চা করতে হয়।

অনেকভাবেই তুমি মস্তিষ্কের চর্চা করতে পারো। পাজল, গাণিতিক সমস্যার সমাধানের মতো যেসব কাজে মাথা খাটানোর প্রয়োজন হয় সেসবের পাশাপাশি আরও বেশ কিছু কাজের মাধ্যমে মস্তিষ্কের দক্ষতা বাড়তে পারে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে সংগীতচর্চা। গবেষণায় দেখা গেছে, সংগীতচর্চা বিশেষ করে কোনো একটি বাদ্যযন্ত্র বাজানোর সময় তোমার মস্তিষ্কের বিশাল অংশ কাজে নিয়োজিত থাকে, তাই এই বিষয়টি মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়াতে পারে। আইনস্টাইন নিজে একজন বেহালাবাদক ছিলেন এবং এই অভ্যাসটিও তাঁর উন্নত মস্তিষ্ক  তৈরিতে প্রভাব ফেলেছে বলে ধারণা করা হয়। এ ছাড়া আমাদের শরীরের ডান অংশ নিয়ন্ত্রিত হয় মস্তিষ্কের বাঁ লোবের মাধ্যমে এবং বাঁ অংশ নিয়ন্ত্রিত হয় ডান লোবের মাধ্যমে। ফলে আমরা যদি শরীরের একটি অংশই বেশি ব্যবহার করি, তাহলে মস্তিষ্কের একটি অংশই শুধু ব্যবহূত হয়। এ কারণে শরীরের উভয় পাশ বেশি ব্যবহার করে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ানো যায়। কোনো একটি কাজ উভয় হাতে করার চর্চা করা যেতে পারে বা এমন কিছু করা যাতে উভয় হাতেরই ব্যবহার করা প্রয়োজন। সার্কাসের জাগলিংজাতীয় কসরত এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখতে পারে, কিংবা গিটারজাতীয় বাদ্যযন্ত্র বাজানো যেতে পারে। এতে দুদিক থেকেই মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়বে।

কৃতজ্ঞতা: জিরোটুইনফিনিটি ডটকম