ট্রেজার আইল্যান্ড - রবার্ট লুই স্টিভেনসন

ট্রেজার আইল্যান্ড

রবার্ট লুই স্টিভেনসন

প্রথম প্রকাশ: ২৩ মে, ১৮৮৩ সাল

ভাষা: ইংরেজি/ বাংলা

সেদিন সকাল থেকেই শুরু হওয়া আকাশ উপুড় করা বৃষ্টি গড়িয়েছিল দুপুর পর্যন্ত। গ্রীষ্মের সেই বৃষ্টিভেজা দুপুরে স্কটল্যান্ডের ব্রামারের মতো অখ্যাত কোনো গ্রামে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকা ছাড়া আসলে করার কিছুই ছিল না স্টিভেনসনের। মানে বিশ্বখ্যাত স্কটিশ লেখক ও কবি রবার্ট লুই স্টিভেনসনের কথা বলছিলাম। সেদিন গ্রামের ছোট্ট এক কটেজে বন্দী সময় কাটাচ্ছিলেন তিনি। অবশ্য তখনো তিনি ততটা বিখ্যাত হননি।

১৮৮১ সালের ওই দুপুরে স্টিভেনসনের সঙ্গে ছিল ১২ বছর বয়সী সৎ ছেলে লয়েড অসবর্ন। দীর্ঘদিনের অভিমান ভেঙে মাত্র কদিন আগেই লয়েডসহ যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাবা থমাস স্টিভেনসনের কাছে ফিরেছেন রবার্ট লুই স্টিভেনসন। সমুদ্র ভ্রমণের একরাশ ক্লান্তি, ভীষণ অর্থাভাব আর জটিল যক্ষ্মারোগ তাঁর নিত্যসঙ্গী হলেও টাটকা অ্যাডভেঞ্চারের স্মৃতি তাকে বেশ সজীব রেখেছিল। ঘরবন্দী সময়টাকে আনন্দময় করতে কুঁড়েঘরের মেঝেতে মনগড়া মানচিত্র এঁকে গুপ্তধন গুপ্তধন খেলছিল লয়েড। প্রিয় ছেলের অনুরোধে তাতে যোগ দিলেন স্টিভেনসনও।

সাগর, দ্বীপ আর অভিযানের টাটকা অভিজ্ঞতা থেকে তিনি একটি বিশ্বাসযোগ্য গুপ্তধনের মানচিত্রই আঁকলেন বটে। অবশ্য ছেলের বায়না তাতেও থামল না। এবার এ মানচিত্রে ভর করে একটি গল্প বলার অনুরোধ এল। একদল ভয়ংকর জলদস্যু আর রাশি রাশি গুপ্তধন নিয়ে মুখে মুখে বেশ রোমাঞ্চকর একটি গল্পও বলে ফেললেন, যা ভীষণ পছন্দ হলো লয়েডের। সত্যি বলতে কী, খোদ স্টিভেনসনও নিজের প্রতিভায় সেদিন মুগ্ধ। সেদিনই বিশ্বখ্যাত এক উপন্যাসের প্লট পেয়ে গেলেন তিনি।

মুখে মুখে সৃষ্ট সেই গল্পই ভেঙেচুরে শিগগিরই একটি উপন্যাস লেখায় হাত দিলেন তিনি। এক মাস বাদে সেকালের জনপ্রিয় ম্যাগাজিন ইয়াং ফোক -এ ধারাবাহিকভাবে ছাপা হলো  দ্যসিকুক নামের উপন্যাসটি। মুহূর্তেই সাড়া পড়ে গেল পাঠকমহলে। রোমাঞ্চ-অ্যাডভেঞ্চারে ভরপুর উপন্যাসটি লিখতে গিয়ে যক্ষ্মায় বারবার কাবু হয়ে শেষপর্যন্ত বিছানায় আশ্রয় নিতে হয় তাঁকে। তাতেও লেখা থামাননি তিনি। ইয়াং ফোক -এ টানা ১৭ সপ্তাহ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশের পর, ১৮৮৩ সালে এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। বই আকারে প্রকাশিত হলো উপন্যাসটি। কিন্তু ম্যাগাজিন থেকে বইয়ে রূপান্তরের সময় উপন্যাসটির নামেও ঘটে গেল আরেক রূপান্তর। বইটির নাম হয় ট্রেজার আইল্যান্ড (রত্নদ্বীপ)। এরপর বাকিটা তো ইতিহাস।

ধান ভানতে গিয়ে তো অনেক শিবের গীত হলো। এবার বইটির কথা বলি। ট্রেজার আইল্যান্ড -এর মূল নায়ক কিশোর জিম। বাবার মৃত্যুর পর, মায়ের সঙ্গে সাগরপাড়ে এক সরাইখানা চালাত সে। সেখানে একদিন বিশাল এক সিন্দুক নিয়ে আশ্রয় নিলেন রহস্যময় এক নাবিক। নাম বিলি বোনস, কুখ্যাত জলদস্যু।

গন্ধ শুঁকে সেখানে হাজির হলো কুখ্যাত সব জলদস্যু। কয়েক দফা মারামারি-কাটাকাটির পর একদিন দুম করে মারা গেলেন বিলি বোনস। তার সিন্দুক ঘাঁটতেই পাওয়া গেল বেশ কয়েকটি সোনার মোহর আর পুরোনো এক মানচিত্র, গুপ্তধনের নকশা! এ মানচিত্রের খোঁজেই জিমদের বাড়িতে বারবার হানা দিতে লাগল জলদস্যুরা। তাদের পাশে এসে দাঁড়ালেন ডা. লিভসিসহ আরও কয়েকজন। বিপদ কাটার পর, গুপ্তধনের হাতছানিতে তাদের সঙ্গেই একদিন জাহাজে চেপে গভীর সাগরে অজানা এক দ্বীপে চলল ছোট্ট জিম। সাধারণ নাবিকের ছদ্মবেশে কাঁধে এক পোষা তোতাপাখি নিয়ে জাহাজে উঠল লং জন সিলভার নামের একপেয়ে কুখ্যাত জলদস্যু আর তার দোসররা। শুরু হলো লোমহর্ষক অ্যাডভেঞ্চার। সঙ্গে গুপ্তধন, লোভ, পাপ, যুদ্ধ, বিশ্বাসঘাতকতার উল্টো পিঠে মানবিকতা, স্নেহ আর ভালোবাসার গল্প পাবে ট্রেজার আইল্যান্ড-এ।

এ উপন্যাসকেই বলা হয় স্টিভেনসনের সেরা কাজ। এ বইয়ের কারণেই তিনি রাতারাতি বিশ্বখ্যাত লেখকে পরিণত হন। ট্রেজার আইল্যান্ড অবলম্বনে এ পর্যন্ত ৫০ বারের বেশি চলচ্চিত্র কিংবা টিভি সিরিজ বানানো হয়েছে। তৈরি হয়েছে ডজন খানেক কম্পিউটার গেমস। এ বইয়ের কল্যাণেই বিশ্বে বেশি অনুবাদ হওয়া লেখক তালিকায় স্টিভেনসনের অবস্থান ২৬তম। বাংলা ভাষাতে এ বইটির বেশ কয়েকটি অনুবাদ পাওয়া যায়। পছন্দমতো একটি সংগ্রহ করে নিতে পারো।