জুমানজি

জুমানজি

পরিচালক: জো জনস্টোন

ধরন: অ্যাডভেঞ্চার/ফ্যামিলি/ফ্যান্টাসি

প্রথম প্রকাশ: ১৫ ডিসেম্বর, ১৯৯৫

ব্যাপ্তি: ১০৪ মিনিট

একবার অচেনা এক লোক বলেছিল, মানুষ নাকি সবকিছুরই তালিকা মানে ‘লিস্টি’ করতে পছন্দ করে। বাজারের চাল-ডাল, কাঁচা মরিচের ফর্দ থেকে এমন কোনো বিষয় নেই যেটি নিয়ে মানুষ তালিকা করেনি। এমনকি দুঃসাহসী কয়েকজন তো একগাদা তালিকা নিয়ে বইও ছাপিয়ে ফেলেছে। বাজারে সার্চ দিলে তারও ভূরি ভূরি তালিকা হাতে পেয়ে যাবে। দুবছর আগে এমনই এক তালিকা করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক পাবলিক লাইব্রেরি। অবশ্য তাদের তালিকাটি ছিল শিশু-কিশোর উপযোগী ১০০ বছরের বিশ্বের সেরা ১০০ বইয়ের। তালিকায় প্রথম বই  অ্যালেকজান্ডার অ্যান্ড দ্য টেরিবল, হরিবল, নো গুড, ভেরি ব্যাড ডে।

তবে আমরা আলোচনা করব এক, দুই কিংবা তিন নয়, একেবারে ৪৬ নম্বর বইটি নিয়ে। ছোট্ট এ বইটির নাম জুমানজি। অ্যামাজানের সেরা ১০০ বইয়ের তালিকায় পাঠকভোটে এটি পেয়েছিল ৩৭ নম্বর আসন। অবশ্য বিশ্বের বলা হলেও শুধু ইংরেজি বইগুলো নিয়েই তালিকাগুলো করা হয়েছিল। তাই তোমার প্রিয় বাংলা বই যদি এ তালিকায় না থাকে, তাহলে দুঃখ পেয়ো না।

যাই হোক, ১৯৮১ সালে মার্কিন লেখক ও আঁকিয়ে ক্রিস ভ্যান লিখেছিলেন জুমানজি। জাদুকরি বোর্ড গেম নিয়ে লেখা বইটি প্রকাশের পরপরই ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। প্রায় এক যুগ পরে এ কাহিনি নিয়ে হলিউডে বানানো হয় একই শিরোনামের মুভি। তাতে অভিনয় করেছেন কমেডিসম্রাট রবিন উইলিয়াম। বলাই বাহুল্য, সেটিও বইটির মতোই বেশ দাপটের সঙ্গে জয় করে দর্শক-মন।

জুমানজির কেন্দ্রীয় চরিত্র ১২ বছরের অ্যালান প্যারিশ। একদিন বাবার জুতার কারখানা থেকে ফেরার পথে অদ্ভুত এক ড্রামের শব্দ পেল সে। শব্দ অনুসরণ করে হাঁটতে হাঁটতে মাটিচাপা এক বাক্স পেল অ্যালান। কারও চোখে পড়ার আগেই সেটি নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে বাড়ি ফিরে দেখতে পেল, সেটি আসলে একটি বোর্ড গেম, নাম জুমানজি। সেদিন অ্যালানের বাবা-মা বাইরে বেড়াতে গিয়েছিল। সময় কাটাতে ঘনিষ্ঠ বন্ধু সারা হোয়াইটের সঙ্গে জুমানজি খেলতে শুরু করল অ্যালান। একটু পড়েই বুঝল, এটি সাধারণ কোনো খেলা নয়। কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে। বোর্ডে প্রতিবার ছক্কা ফেলতেই অদ্ভুত ঘটনা ঘটতে লাগল। কয়েক দান খেলতেই শুরু হলো বিপত্তি। মোমের মতো গলতে গলতে চোখের সামনে অদৃশ্য হয়ে গেল জলজ্যান্ত অ্যালান। কী ভয়ংকর!

এ রহস্যময় ঘটনার পর ২৬ বছর পেরিয়ে গেল। তত দিনে একমাত্র ছেলের শোকে বাড়িঘর ছেড়ে গেছেন অ্যালানের বাবা-মা। বন্ধ হয়ে ভুতুড়ে কাঠামো নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তার বাবার কারখানা। কিন্তু তখনো আগের মতোই লাপাত্তা অ্যালান। ঠিক সে সময় অ্যালানদের ফাঁকা বাড়িতে খালার সঙ্গে উঠল জুটি আর পিটার নামের দুই ভাই-বোন। মাত্র কদিন আগেই দুর্ঘটনায় মারা গেছেন তাদের বাবা-মা। রাত কাটতে না কাটতেই জুটি আর পিটার শুনতে পেল সেই অদ্ভুতুড়ে ড্রামের বাদ্যি। একসময় তারা চিলকোঠায় আবিষ্কার করল সেই জুমানজি। পরিণতি না জেনেই তারা খেলতে শুরু করল।

প্রথম দান চালতেই দৈত্য সাইজের মশার আক্রমণের মুখে পড়ল তারা। দ্বিতীয় দানে কোত্থেকে এসে জুটল একদল দুষ্টু বানর। মুহূর্তেই বানরদল তছনছ করতে শুরু করল সবকিছু। তৃতীয় দানে এক ভয়ংকর সিংহ আর দাড়িগোঁফঅলা, টারজানের মতো পাতার নেংটি পরা এক লোক এসে হাজির। সে নিজেকে অ্যালান বলে দাবি করে বসল। প্রমাণ মিলিয়ে দেখা গেল আসলেই তাই। গোটা ২৬ বছর নাকি এক গহিন বনে কাটাতে হয়েছে তাকে। আরেক দানে জুমানজি থেকে বন্দুক হাতে উঠে এল এক খুনে শিকারি। অ্যালানসহ সবাইকে হত্যা করতে উঠেপড়ে লাগল লোকটি। প্রতি দানেই ঘটতে লাগল এমন আজব সব ঘটনা। সব মিলিয়ে পুরো শহরে শুরু হলো ভীষণ হইচই আর হুলুস্থুল কাণ্ডকারখানা। মাত্র কয়েক ঘণ্টায় একটি সাজানো-গোছানো শহর পরিণত হলো সাক্ষাৎ নরকে। এখন উপায়! সেটি জানতে মজার মুভি জুমানজি দেখে ফেলাই বুদ্ধিমানের কাজ। মুভিটি দেখতে গিয়ে বারবার পিলে চমকানোর পাশাপাশি হাসি ঠেকানোও মুশকিল হবে। যারা অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় তাদের কিন্তু মুভিটি অবশ্যপাঠ্য থুক্কু ‘দেখ্য’।