গুডবাই মিস্টার ব্যাড হ্যাবিট

যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলা খুবই বাজে অভ্যাস
যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলা খুবই বাজে অভ্যাস

রিমনের বাবা গেছেন ফল কিনতে। এমন সময় আরেকটি লোক এসে তাঁর পাশে দাঁড়াল এবং কোমর দোলাতে দোলাতে বিভিন্ন ফলের দরদাম জিজ্ঞেস করতে থাকল। লোকটি ডানে-বাঁয়ে এমনভাবে দুলছিল যে রিমনের বাবার গায়ে বারবার ধাক্কা লাগছিল। এতে তিনি বিরক্ত হয়ে দ্বিতীয় ক্রেতাকে প্রশ্ন করলেন, কী ব্যাপার ভাই, আপনি এ রকম ডানে-বাঁয়ে দুলছেন কেন? ওই লোক উত্তরে বলল, ভাই, কিছু মনে করবেন না, পাঁচ বছর ধরে জাহাজে চাকরি করছি তো, সাগরের ঢেউয়ের তালে দুলতে দুলতে বদভ্যাস হয়ে গেছে। তাই মাটিতে থাকলেও ডানে-বাঁয়ে কোমর দুলতে থাকে।

এ কথা শুনে রিমনের বাবা বললেন, এইডা কোনো কথা হইল মিঞা? আমি তো সরকারি চাকরি করছি ২০ বছর হইল। তাই বলে কি এখন ফল কিনে টেবিলের তলা দিয়ে নেব?

এমন অনেক বাজে অভ্যাস থাকতে পারে আরও অনেকেরই। সেগুলো দেখতে যেমন বিকট, শুনতেও উত্কট! চলো, তেমন সব বাজে স্বভাব নিয়ে কথা বলি আর কোনটা এখনই ত্যাগ করা প্রয়োজন, সেটা জেনে নিই।

বারবার পা নাড়ানো

খুব মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে থাকলে, আনমনা হয়ে থাকলে কিংবা খুব অস্থির থাকলে আমরা আমাদের মনের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলি। তখন নানা ধরনের মুদ্রাদোষ প্রকাশিত হতে থাকে। এই মুদ্রাদোষ আবার  মানসিক অস্থিরতা, স্থবিরতা, মনোযোগের অভাব, সচেতনতার অভাব, চারপাশের মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাবোধের অভাব, এমনকি নৈতিকতাবোধের অভাব থেকেও সৃষ্টি হতে পারে। গুরুজনেরা বসে আছেন, তাঁদের সামনে বসে পা নাড়ানো, স্যারের সামনে গিয়ে পা নাড়ানো—এসব অভ্যাস একটু সচেতন হলেই কিন্তু ত্যাগ করা যায়। কারণ, সজোরে হাত নাড়ানো, চুলকানো—এগুলো মানুষের চারিত্রিক দুর্বলতাকেই প্রকাশ করে।

হাতের নখ কামড়ানো

সেদিন এক বন্ধু বলল, হাতের নখ কাটি না তা প্রায় বছর পাঁচ হতে চলল।

তার মানে কিন্তু এই না যে, তার কোনো নেইল কাটার নেই।

পায়ের নখ তো আর মুখ দিয়ে নাগাল পাওয়া যায় না। তাই না?

কিন্তু নখ কামড়ে খেলে যে তোমার পেট ভরে যাবে, তেমন না হলেও জীবাণুতে পেট ভরে ওঠার সমূহ আশঙ্কা। কারণ, হাতের নখের ভেতর কিলবিল করতে থাকে জীবাণু। তাই যখনই তুমি নখ খাচ্ছ, তখনই আসলে তুমি একগাদা জীবাণু স্বেচ্ছায় কামড়ে কামড়ে খাচ্ছ।

পাশাপাশি নখের অপূরণীয় ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ ছাড়া নখ কামড়ালে নখের আকার এবড়োখেবড়ো হয়ে যায়, এতে হাত দেখতে বিশ্রী লাগে। তাই নখ কামড়ানোর বাজে অভ্যাসটি দূর করো দ্রুত।

মাথা চুলকানো

মনে রেখো, এটা কিন্তু চর্মরোগের জন্যও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে কিটোকোনাজল শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে। সপ্তাহে দু-তিন দিন ব্যবহার করবে। কাজ না হলে কী করবে? আরে মিয়া-বুবুরা, সব তোমাদের করতে হবে কেন? দেশে এত চিকিত্সক আছেন কী করতে? তাঁদের কাছে একটু ঘুরে আসবে। সরকারি হাসপাতালেই কিন্তু এসবের দুর্দান্ত চিকিত্সা সম্ভব। মনে রাখবে, সরকারি হাসপাতালে চিকিত্সা হয় না ভেবে কথায় কথায় বেসরকারি হাসপাতাল বা বিদেশে চিকিত্সার জন্য ছুটতে চাওয়াও কিন্তু একটা বড়সড় বদভ্যাস।

হাতের কাছে লম্বা কিছু পেলেই কান খোঁচানো

এটি একটি ভয়ংকর বদভ্যাস। এর ফলে যেকোনো সময় কানের ভয়ংকর ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। হারাতে পারো তোমার শ্রবণশক্তি। তাই ভুলেও হাতের কাছে যা পাও, কলমের মুখ, চুলের ক্লিপ কানের ভেতরে ঢোকানো থেকে বিরত রাখো। অনেক সময় চিকিত্সকেরা কটন বাডও ব্যবহার করতে মানা করেন। কখনো এই বদভ্যাসের পেছনে কারণ হিসেবে একটি রোগও থাকে, এর নাম অটোমাইকোসিস। সে রকম কিছু হলে চিকিত্সকের পরামর্শ নিতে হবে।

নাকের ভেতর আঙুল দিয়ে চুলকানো

এ কাজ দেখতে মোটেও দর্শনীয় নয়। তার ওপর নাকের ময়লা হরতাল-অবরোধকে উপেক্ষা করে হাতের মাধ্যমে অনায়াসে মুখ পর্যন্ত চলে যেতে পারে। নাক খোঁচাখুঁচির ফলে সেখানে ইনফেকশন যে হবে না, সেই গ্যারান্টি নাকও দেয়নি, কানি আঙুল সাহেবও দেয়নি!

ঘুমানোর সময় মাথা ঢেকে রাখা

ঘুমাতে যাওয়ার আগে মাথা খোলা রেখে ঘুমানো মস্তিষ্কের জন্য উপকারী। কারণ, মাথা ঢেকে ঘুমালে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ ঘনীভূত হয় এবং অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায়, যা পরবর্তী সময়ে মস্তিষ্কের মারাত্মক ক্ষতি করে।

হাত না ধুয়েই এটা-সেটা মুখে দেওয়া

হাত না ধুয়ে এটা-সেটা মুখে দিয়েছি, কোনো সমস্যা? না, কোনো সমস্যা না। কারণ, তুমি ধোয়া চামচ ব্যবহার করেছ। কিন্তু না ধুয়ে কখনো হাতটা মুখে দেবে না। কারণ, এর সঙ্গে ফ্রিতে পাবে ‘বিষ’। সুতরাং, হাত না ধুয়ে খাওয়ার আগে ২০ বার ভেবে দেখবে।

চিন্তা না করা

বেশি বেশি চিন্তা করো, মস্তিষ্কের কোষের উদ্দীপনার জন্য চিন্তাভাবনা করা অত্যন্ত জরুরি। যত বেশি সৃষ্টিশীল চিন্তায় মনোযোগ দিতে পারবে, তত বেশি মস্তিষ্ক কোষ উদ্দীপিত হবে। তুমি আরও বেশি দক্ষ ও মনোযোগী হতে পারবে যেকোনো কাজে। আর চিন্তাহীন মস্তিষ্ক ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়ে কার্যক্ষমতা নষ্ট করে দেয়।

স্বামী সচ্চিদানন্দ বলেছিলেন, ‘আমরা যখন কোনো গাছে জল না দিই, তখন গাছটি আপনা থেকেই শুকিয়ে মরে যায়। আমাদের চেষ্টা করে মারতে হয় না।’ বদভ্যাসকেও তেমনি চেষ্টা করে বদলাতে হবে না, বেড়ে ওঠার জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ না দিলে বদভ্যাস এমনিতেই হারিয়ে যাবে। আজ না হয় এ বিষয় নিয়েই কিছুক্ষণ চিন্তা করো!

রাতে খেয়েই ঘুমিয়ে পড়া

অনেকেই রাতে বেশ দেরি করে খাবার খেয়ে থাকে। এবং খাওয়ার পরপরই বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। তোমার এই বাজে অভ্যাসও পেটে মেদ জমার জন্য দায়ী। ভরা পেটে শুয়ে ঘুমিয়ে গেলে তোমার হজমের সমস্যা হয়। এতে করে পেটে মেদ জমে। তাই রাতে দেরি করে খাবে না। আর যদি নিতান্তই দেরি করে খেতে হয়, তবে খাওয়ার অন্তত দু-তিন ঘণ্টা পরে ঘুমাতে যাও।

রাগ, বিষণ্নতা ও দুঃখ পেলে খাওয়া

অনেকেই আছে রেগে গেলে কিংবা বিষণ্নতায় পড়লে অথবা কোনো ব্যাপারে দুঃখ পেলে খায়। কিছুটা খাবার খাওয়া অবশ্যই খারাপ কিছু নয়, যদি তা তোমার মুড ঠিক করতে সাহায্য করে। কিন্তু সমস্যা হলো এ ধরনের অনুভূতির সময় আমরা কতটা খাচ্ছি, তার হিসাব আমরা রাখতে পারি না এবং রাখার মতো মানসিকতায় থাকি না। তখন অনেক বেশি খাওয়া হয়ে যায় এবং সবই আজেবাজে খাবার, যা বাড়ায় পেটের মেদ। তাই রাগ, বিষণ্নতা ও দুঃখ পেলে খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করাই ভালো।

একটা কথা বলি, এটা আমার বাসায় বিচার দেওয়ার আগে মনোযোগ দিয়ে বোঝার চেষ্টা করো! স্প্যানিশ কবি হোসে বেরগামিন বলতেন, ‘পৃথিবীতে বদভ্যাস বা সু-অভ্যাস বলে কিছু নেই, অভ্যাসমাত্রই খারাপ।’ তাই কোনো কিছুতেই বেশি বেশি করে অভ্যস্ত হয়ে পোড়ো না।

মডেল: রাফি, দ্যুতিনয়ন

ছবি: কবীর শাহরীয়ার