গুগল ডুডলের গল্প

বিশ্বখ্যাত সার্চ ইঞ্জিন গুগলের কথা তো তোমরা সবাই জানো। বিশ্বসেরা এ সার্চ ইঞ্জিন বিভিন্ন সময়ে কিন্তু নিজেদের লোগো পরিবর্তন করে। আর এটিকে বলা হয় গুগল ডুডল। বিশেষ করে বিখ্যাত ব্যক্তি বা ঐতিহাসিক দিনকে স্মরণ করার জন্যই তারা এটি করে থাকে। বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন দিবসেও (আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, পয়লা বৈশাখ) এ দেশ থেকে গুগল ব্যবহারকারীরা  google.com.bd ঠিকানায় দারুণ সব ডুডল দেখতে পায়।

গুগলের ডুডলের চিন্তা শুরু হয় ১৯৯৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ‘বার্নিং ম্যান’ উৎসবে। সে সময়ে ডুডলটি তৈরি করেছিলেন গুগলের দুই সহপ্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজ ও সার্জে ব্রিন। ২০০০ সালের আগ পর্যন্ত ডুডল আউটসোর্স পদ্ধতিতে (বাইরের কাউকে দিয়ে করানো) করা হয় এবং পরবর্তী সময়ে একটি দল কাজ শুরু করে, যাদের নাম হয় ‘ডুডলার্স’! বর্তমানে দিনে দিনে দারুণ সব ডুডল আসছে গুগলের মূল পাতায়। অ্যানিমেশন, গেম, কুইজ ইত্যাদির পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয় থাকছে গুগল ডুডলে, যা আগে এমন ছিল না। ২০১০ সালে বিজ্ঞানী আইজ্যাক নিউটনকে স্মরণ করে তৈরি করা ডুডলে প্রথম অ্যানিমেশন যুক্ত করা হয়। আর একই বছরে জনপ্রিয় গেম প্যাকম্যানের ৩০ বছর পূর্তিতে ডুডলেই ‘প্যাক ম্যান’ গেমটি তোমরা হয়তো অনেকেই খেলতে পেরেছ, যা ছিল ডুডলে গেম যুক্ত হওয়ার প্রথম ঘটনা।

উন্নত সুবিধা, আধুনিকত্ব আর চমক জাগানোর মাধ্যমেই পরবর্তী সময়ে নিয়মিতভাবে গুগল ডুডল চমকে দিচ্ছে ব্যবহারকারীদের। তোমরা জেনে অবাক হবে, গত বছর আন্তর্জাতিক এবং স্থানীয়ভাবে প্রায় দুই হাজারের বেশি ডুডল প্রচার করেছে গুগল! ইতিমধ্যে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জন লেনন, মাইকেল জ্যাকসন, সত্যজিৎ রায়, মহাত্মা গান্ধীসহ অনেক বিখ্যাত মানুষের ডুডল প্রকাশ করা হয়েছে। বিখ্যাত ব্যক্তিদের মধ্যে যাঁরা যে কাজে বিখ্যাত, তাঁদের স্মরণ করার ক্ষেত্রে সে বিষয়গুলোই মনে রেখেছে গুগল। যেমন জন লেননের ৭০তম জন্মদিনে তাঁরই বিখ্যাত গান ‘ইমাজিন’ নিয়ে একটি ছোট মিউজিক ভিডিও দিয়ে তৈরি করা হয় ডুডল! বিশ্বখ্যাত কমিক অভিনেতা চার্লি চ্যাপলিনের ১২২তম জন্মবার্ষিকীতে একটি সাদা-কালো ডুডল ভিডিও প্রচার করা হয়েছিল যেখানে, চার্লি চ্যাপলিনের অভিনীত ছোট একটি অংশ ছিল!

ডুডল তৈরির ক্ষেত্রে আছে আরও সব মজার মজার ঘটনা। যেমন তোমাদের অনেকেরই প্রিয় গিটার বাজানো। আর তাঁদের কথা মাথায় রেখে এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত গিটারিস্ট লেস পলের ৯৬তম জন্মবার্ষিকীতে গুগল ডুডল সেজেছিল পুরো গিটার আকারে! শুধু এতে সীমাবদ্ধ ছিল না ডুডলটি। কি-বোর্ডের সাহাযে্য ব্যবহারকারীদের সুযোগ ছিল গিটারটি বাজানোরও! এ ছাড়া ফুটবল বিশ্বকাপের পাশাপাশি ক্রিকেট বিশ্বকাপে প্রায় প্রতিটি দিনেই ছিল গুগলের ডুডলে পরিবর্তন এবং নতুন চমক! আরও সব দারুণ নতুন চিন্তা নিয়ে প্রতিদিন কাজ করে যাচ্ছে ‘ডুডলার্স’ দলটি।

শুধু যুক্তরাষ্ট্রের অনূর্ধ্ব ১২ বছর বয়সীদের জন্য গুগল ‘ডুডল ফর গুগল’ ( google.com/doodle4google) শীর্ষক প্রতিযোগিতার আয়োজন করে যাচ্ছে সাত বছর ধরে। গত বছর সে প্রতিযোগিতায় সেরা হয়েছিল চীনা বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা ১১ বছর বয়সী শিক্ষার্থী অড্রে ঝাং। অড্রের সেই সেরা ডুডলটির জন্য জিতে নেওয়া ২০ হাজার ডলার দাতব্য সংস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিদ্যালয়ের বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে খরচ করার কথা জানিয়েছিল সে! গুগলের সব কটি ডুডল চাইলেই তুমি দেখতে পারো  google.com/doodles ঠিকানায়। তুমি যদি ভাবো, তোমার নিজের ডুডল আইডিয়া গুগলের কাছে পাঠাবে, সে সুযোগও আছে। নিজের আইডিয়াটি পাঠিয়ে দিতে পারো  [email protected] ঠিকানায়। হয়তো তোমার ডুডলটিই হয়ে যেতে পারে গুগলের লোগো, যা দেখা যাবে সারা দুনিয়ায়।

 যাঁর নেতৃত্বে ডুডলার্স দল

একদল ডুডলার্স মিলে তৈরি করেন দারুণ সব ডুডল। এ দলের নেতৃত্বে আছেন ভারতীয় বংশোদ্ভুত রায়ান গারমিক। ছোটবেলা কেটেছে ভারতে এবং পরে ইলাস্ট্রেশন এবং ক্রিয়েটিভ রাইটিং বিষয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই রায়ানের আগ্রহ ছিল আঁকাআঁকি এবং ডিজাইনের দিকে। ২০০৬ সালে গুগলে যোগ দেওয়ার আগে রায়ান কাজ করেছেন সনি মিউজিক, এইচবিও ফ্যামিলি, কমেডি সেন্ট্রাল, কাটু‌র্ন নেটওয়ার্কসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। এঁকেছেন একাধিক কমিকস।

গুগল স্ট্রিট ভিউয়ের যে লোগো, সেটি এবং জিমেইলের অসংখ্যা ইমোটিকনস রায়ানের আঁকা। রায়ানের ব্যক্তিগত ওয়েবসাইটের ( ryangermick.com) যে মেন্যুবারগুলো আছে, তাতে মাউসের কার্সর নিলেই তুমি বুঝতে পারবে তার দক্ষতা এবং ক্রিয়েটিভিটির কিছু নমুনা!