হাচি: আ ডগ টেল

হাচি: আ ডগ টেল

ধরন: ড্রামা, ফ্যামিলি

ভাষা: ইংরেজি

প্রথম প্রকাশ: ২০০৯, ইংল্যান্ড।

ব্যাপ্তি: ৯৩ মিনিট

অভিজ্ঞরা বলেন, বিড়াল স্থানের প্রতি আর কুকুর ব্যক্তির প্রতি বিশ্বস্ত। অর্থাৎ বিড়ালকে তুমি যতই ভালোবাসো, সে তার চেনা জায়গা ছেড়ে কখনোই তোমার সঙ্গে যাবে না। কিন্তু বিপরীতে, তুমি যদি সুদূর মঙ্গল গ্রহেও যাও, তাহলেও তোমার পিছু নেবে তোমার কুকুর। যাকে বলে অকৃত্রিম প্রভুভক্তি। চোখ-কান খোলা রাখলে আশপাশে কুকুরের প্রভুভক্তির উদাহরণ চোখে পড়বেই। তবে এসবের মধ্যে অনন্য এক দৃষ্টান্ত দেখা গিয়েছিল ১৯২৪ সালে জাপানে।

সে সময় জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষিতত্ত্ব পড়াতেন অধ্যাপক হিদেসাবুরো উনো। একদিন শখ মেটাতে স্থানীয় আকিতা জাতের এক খুদে কুকুর নিয়ে এলেন পোষার জন্য। জাপানের আকিতা জাতের কুকুরদের প্রভুভক্তির ব্যাপারে বেশ সুনাম আছে। অধ্যাপক উনো তার প্রমাণও পেলেন একেবারে হাতে হাতে। তিনি কুকুটির নাম দিলেন হাচিকো। জাপানি ভাষায়, হাচিকো অর্থ সৌভাগ্য। গুগল মামার ভাষ্যমতে, হাচি শব্দের অর্থ আট। আর কো অর্থ আদর বা স্নেহ। সব মিলিয়ে অর্থ দাঁড়ায়, বাবা-মার অষ্টম আর আদুরে সন্তান। আক্ষরিক অর্থেই অধ্যাপক উনোর আদরের ছিল হাচিকো।

বিনিময়ে হাচিকো তার প্রভুকে দিয়েছিল অকৃত্রিম আনুগত্য আর ভালোবাসা। অধ্যাপক উনো ট্রেনে চেপে প্রতিদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াত করতেন। প্রতি সকালে তিনি টোকিওর শিবুয়া স্টেশন থেকে ট্রেন ধরতেন। সে সময় স্টেশন পর্যন্ত পিছু পিছু যেত হাচিকো। কেউ বলে বা শিখিয়ে না দিলেও হাচিকো কীভাবে যেন বুঝে অধ্যাপক উনোর ফেরার সময়টা বুঝে ফেলেছিল। তাই প্রতি বিকেলে উনোর ফেরার সময় শিবুয়া স্টেশনের গেটে ঠাই দাঁড়িয়ে থাকত হাচিকো। প্রভুকে দেখামাত্রই লেজ বিকশিত (দন্ত বিকশিত নয়) আনন্দে অস্থির হয়ে ছুটে যেত হাচি। বলাই বাহুল্য, অধ্যাপক উনোরও ভালো লাগত প্রিয় কুকুরকে অপেক্ষা করতে দেখে।

এভাবে প্রায় এক বছর বেশ ভালোভাবেই কেটে গেল দুজনের। কিন্তু ১৯২৫ সালের মে মাসের এক সকালে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লেন উনো। সে অবস্থাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলেন ক্লাস নিতে। কিছুক্ষণ পরই সেখানেই আকস্মিকভাবে মারা গেলেন তিনি। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে তাঁর মৃত্যু হয়েছিল বলে পরে জানা গিয়েছিল। সেদিন তিনি বাড়ি ফিরলেন বটে, তবে কফিনে শুয়ে।

ওদিকে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা। সন্ধ্যা গড়িয়ে গাঢ় কালো রাত। রাত শেষে আলো ফোটা দিন। যথা নিয়মে একসময় সবই শেষ হয়, কিন্তু শেষ হয় না হাচিকোর প্রতিক্ষার প্রহর। ব্যস্ত স্টেশনে ট্রেন আসে, চলে যায় ট্রেন। একসময় কোলাহল থেমে যায়। কমে যায় ভিড়। কিন্তু তবু ফেরেন না অধ্যাপক উনো। হাচিকোকে কে বলবে, তিনি এখন না-ফেরার দেশে। আগের মতোই অস্থির উত্তেজনায় স্টেশনের গেটে নিয়মমতো বসে থাকতে শুরু করল হাচিকো। একসময় খেতেও ভুলে গেল কুকুরটি। দয়াপরবশ হয়ে কেউ কেউ টুকটাক খাবার দিতে লাগল তাকে। অবশ্য নাজেহাল করার লোকেরও অভাব ছিল না। এভাবে একটানা ৯ বছর, ৯ মাস, ১৫ দিন স্টেশনের গেটেই অধ্যাপক উনোর প্রতিক্ষায় কাটিয়ে দিল কুকুরটি। তারপরের গল্পটা আরও করুণ। আরও মানবিক।

সেটুকু আপাতত বাদ দিয়ে হাচিকোর আরও কিছু কথা শোনো। মানুষের প্রতি কুকুরের প্রভুভুক্তির গল্পের কোনো শেষ নেই। কিন্তু হাচিকোর মতো এমন দৃষ্টান্ত খুব বেশি নেই। তাই হাচিকো এখন বিশ্বস্ততার জাতীয় প্রতীকে পরিণত হয়েছে জাপানে। শিবুয়া স্টেশন গেটে স্থাপন করা হয়েছে হাচিকোর ব্রোঞ্জ মূর্তি। সেই জায়গার নাম এখন হাচিকো গুচি (হাচিকো প্রবেশপথ)। এখন প্রতিবছর ৮ এপ্রিল ঘটা করে শিবুয়া স্টেশনে হাচিকোর আত্মত্যাগের ঘটনা স্মরণ করা হয়। সেখানে ভিড় জমায় কুকুরপ্রেমীরা।

এই সত্যি ঘটনা অবলম্বনে ২০০৯ সালে হলিউড বানানো হয়েছিল হাচি: আ ডগ টেল নামের মুভিটি। তবে মূল ঘটনার সঙ্গে মুভিটির কিছু পার্থক্যও আছে। ঘটনাটি জাপানে ঘটলেও মুভিটি বানানো হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পটভূমিতে। রিচার্ড গিয়ার অভিনীত এ ছবিতে কোনো মারদাঙ্গা অ্যাকশন নেই। নেই রোমহর্ষক অ্যাডভেঞ্চার। এমনকি সুড়িসুড়ি দেওয়া হাসির কিছুও নেই এতে। কিন্তু তারপরও ছবিটি দেখতে বসলে শেষ না করে উঠতে পারবে না, এটা গ্যারান্টি দিয়েই বলা যায়।