ছায়াপথের সঙ্গে অ্যান্ড্রোমিডার সংঘর্ষ কেন অনিবার্য?

আমাদের ছায়াপথের সবচেয়ে কাছের প্রতিবেশী অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি
আমাদের ছায়াপথের সবচেয়ে কাছের প্রতিবেশী অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি

মহাকাশ সত্যিই রহস্যময়। কত তারা, কত গ্যালাক্সি। আমাদের সৌরজগৎ যে নিহারিকাপুঞ্জ বা গ্যালাক্সির মধ্যে রয়েছে, তার নাম ছায়াপথ (মিল্কিওয়ে)। এর খুব কাছের গ্যালাক্সি হলো অ্যান্ড্রোমিডা। এটা প্রায় ২৫ লাখ আলোকবর্ষ দূরে। আলো এক সেকেন্ডে যায় ১ লাখ ৮৬ হাজার মাইল। এই গতিতে এক বছরে আলো যে দূরত্ব অতিক্রম করে, সেটাই হলো ১ আলোকবর্ষ দূরত্ব। আমরা যখন বলি, মহাকাশের ওই তারাটি খুব কাছের, তখন কিন্তু আমাদের প্রচলিত দূরত্বের মাপকাঠিতে অনেক দূরের হলেও সেটা মহাজাগতিক (কসমিক) দূরত্বের হিসেবে ‘কাছে’। সেই অর্থে অ্যান্ড্রোমিডা আমাদের ছায়াপথের খুব কাছে। এরা একটি ছোট গ্যালাক্সি গ্রুপের দুই সদস্য। মহাকাশ বিজ্ঞানীরা বলেন, এই দুই গ্যালাক্সি একে অপরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এর পরিণতিতে একসময় এ দুটি গ্যালাক্সির মধ্যে সর্বনাশা এক মহাজাগতিক সংঘর্ষ ঘটবে। যেহেতু গ্যালাক্সিগুলো হলো অ্যাটমের মতো মূলত শূন্যের মধ্যে অবস্থান করে, তাই এ ধরনের সংঘর্ষে সময় আসলে দুই গ্যালাক্সি প্রায় ধোঁয়ার মধ্য দিয়ে একে অপরের মুখোমুখি হবে। কিন্তু মহাকর্ষ বলের কারণে নক্ষত্রগুলোর গাঁথুনি ভেঙে পড়বে। বিজ্ঞানীরা হাবল স্পেস টেলিস্কোপের মাধ্যমে হিসাব করে এই সিদ্ধান্তে এসেছেন যে এই মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটবে প্রায় ২০০ কোটি বছর পর।

শিল্পীর কল্পনায় দুটি গ্যালাক্সির মহাজগতিক সংঘর্ষ
শিল্পীর কল্পনায় দুটি গ্যালাক্সির মহাজগতিক সংঘর্ষ

এ বিষয়ে দুঃসংবাদের পাশাপাশি সুসংবাদও অবশ্য আছে। হয়তো এ সংঘর্ষ এক মহাজাগতিক উৎসবে পরিণত হবে। ভেঙে পড়া নীহারিকাপুঞ্জ থেকে জন্ম নেবে নতুন কোনো সৌরজগৎ!

কিন্তু এই দুই গ্যালাক্সির মধ্যে সংঘর্ষ কি অনিবার্য? আমরা তো জানি, মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হচ্ছে ত্বরণ গতিতে। তাহলে তো বলতে হয় গ্যালাক্সিগুলো একে অপরের থেকে ক্রমেই দূরে সরে যাচ্ছে। তাই যদি হবে, তাহলে আমাদের এ দুই গ্যালাক্সিরে মধ্যে কেন সংঘর্ষ ঘটবে? এ বিষয়ে মহাকাশ বিজ্ঞানীরা বলছেন, সাধারণভাবে গ্যালাক্সিগুলো একে অপরের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু সেটা কাছাকাছি গ্যালাক্সিগুলোর জন্য প্রযোজ্য নয়। কারণ সে ক্ষেত্রে বরং তাদের মধ্যে মহাকর্ষ বলের প্রভাব বেশি কাজ করে। তাই ছায়াপথ ও অ্যান্ড্রোমিডার মতো দুই ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী দূরে সরে না গিয়ে কাছাকাছিই আসবে। তাহলে তো সংঘর্ষ অনিবার্যই বটে।

শিল্পীর চোখে আমাদের ছায়াপথ
শিল্পীর চোখে আমাদের ছায়াপথ

আমাদের দুই গ্যালাক্সির সংঘর্ষ না-হয় অনিবার্য, কিন্তু সম্প্রসারমাণ মহাবিশ্বের শেষ পরিণতি কী হবে? এ প্রশ্নটিও মহাকাশ বিজ্ঞানীদের কাছে একটি বড় প্রশ্ন।

বিজ্ঞানীরা আগে থেকেই জানতেন যে মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হচ্ছে। তবে সেটা যে ত্বরণ গতিতে বাড়ছে, তা বার্কলের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সল পার্লমুটার, অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ব্রায়ান স্মিড এবং জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির অ্যাডাম রিয়েস আবিষ্কার করেন। তাঁরা ১৯৯৮ সাল থেকে সুপারনোভার বিস্ফোরণ নিয়ে গবেষণা করছিলেন। তাঁরা লক্ষ করেন, দূরের এক সুপারনোভার বিস্ফোরণ থেকে আলো আসতে যে সময় নেওয়ার কথা, বাস্তবে তার চেয়ে বেশি সময় নিচ্ছে এবং আলোকরশ্মিও অনেকটা ম্লান হয়ে আসছে। এ থেকেই তাঁদের ধারণা হয়, আগে যেভাবে ভাবা হতো, বাস্তবে তা নয়, বরং ত্বরণ গতিতে মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ ঘটছে। এই অসামান্য আবিষ্কারের জন্য ২০১১ সালে এই তিন বিজ্ঞানীকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়।

ছায়াপথে আমাদের সৌরজগত
ছায়াপথে আমাদের সৌরজগত

বিগ ব্যাংয়ের পর প্রায় ১৪০০ কোটি বছর কেটে গেছে এবং মহাবিশ্ব ত্বরণ গতিতে সম্প্রসারিত হয়ে চলেছে। এর শেষ কোথায়? বিজ্ঞানীদের অনেকে বলেন, শেষ পর্যন্ত অগ্নিপিণ্ডে পরিণত হবে মহাবিশ্ব। তবে বেশির ভাগ বিজ্ঞানী বলেন, শেষ পর্যন্ত হয়তো মহাবিশ্ব বরফে পরিণত হবে। কারণ সম্প্রসারণের ফলে তাপমাত্রা হ্রাস পায়। ত্বরণ গতিতে সম্প্রসারণ ঘটছে ডার্ক এনার্জির কারণে। এই ডার্ক এনার্জি যে কী, তা এখনো বিজ্ঞানীদের কাছে দুর্বোধ্য। শুধু এটুকু জানা গেছে যে ডার্ক এনার্জি মহাবিশ্বের তিন-চতুর্থাংশ জুড়ে বিরাজমান।