দুইটি গরু রাত্রে ছিল গোয়াল ঘরে রাখা
সকাল বেলা দেখা গেল গোয়াল পুরাই ফাঁকা
গরুর মালিক চাপড়ে মাথা করছে আহাজারি
তার বিলাপ আর ক্রন্দনে হায় বাতাস হলো ভারি।
গাঁয়ের মোড়ল, প্রতিবেশী সবাই হলো জড়ো
মোড়ল বলে, ‘কোথায় গরু খুঁজে তা বের করো’
খুঁজতে গেল বৃদ্ধ-জোয়ান, সিকনি ঝোলা ছেলে
খুঁজতে গেল কিষাণ বধু কোলের শিশু ফেলে
শত খুঁজেও গরুর হদিস যায় না কোথাও পাওয়া
আজব ব্যাপার দুটো গরু কী করে হয় হাওয়া!
সবাই যখন গরুর খোঁজে বেড়াচ্ছে গাঁ চষে
আলসে হাবুল খুঁটছিলো নখ উঠোন কোণে বসে
কাজে কর্মে তার অরুচি, অ্যালার্জি, অনীহা
নানা রোগে ভুগে নাকি বর্ধিত তার প্লীহা!
আর তা ছাড়া হাতে পায়ে পায় না সে বল মোটে
একটু শ্রমে বুক নাকি তার ধড়ফড়িয়ে ওঠে!
গরু নিয়ে শুরু হলো তুমুল আলোচনা
আসছে উঠে তাতে হরেক ভয় ও সম্ভাবনা
আলোচনায় ব্যস্ত সবাই ভুলে দানা-পানি
হাবুল বলে, ‘কে নিয়েছে গরু আমি জানি’
সবাই বলে, ‘জানিস যদি শিগগিরি বল ওরে’
হাবুল বলে, ‘গরু দুটো নিয়ে গেছে চোরে’।
ভীষণ রেগে মোড়ল বলে, ‘ওরে গাধা থাম!
জানিস যদি এক্ষুনি বল তবে চোরের নাম’।
হাবুল বলে, ‘চোরের নামও বলা কঠিন নয়
বলতে পারি মুরুব্বিরা দেন যদি অভয়’।
মোড়ল বলে, ‘চোরের নামটা বলতে কি ভয় তোর?
ভয় কারে কয় কত প্রকার টের তো পাবে চোর’।
আলগা খানিক ভাব নিয়ে সে বলল তখন জোরে —
‘আমি শিওর, গরু নিয়ে গেছে গরু চোরে’।
‘আবার বলতো নামটা চোরের পাজি হতচ্ছাড়া’
বলেই মোড়ল লাঠি নিয়ে করলো তাকে তাড়া
দৌড়ে হাবুল পেরোয় গো-পাট, মটরশুঁটির ভুঁই
মোড়ল বলে, ‘বাঁদর পাঁজি কোথায় যাবি তুই
ধরতে পেলে তুলে নেব আজকে পিঠের ছাল’।
প্রাণের ভয়ে সাঁতরে হাবুল নিমেষে পার খাল।
সেই থেকে সে আর বলে না ফালতু কথা মোটে
আলসেমিটাও কেটে গেছে, এখন সে চটপটে।
অলংকরণ : সালমান সাকিব শাহরিয়ার