দ্য বাইসাইকেল থিফ

দ্য বাইসাইকেল থিফ

প্রথম প্রকাশ: ১৯৪৮

ভাষা: ইতালিয়ান, ইংরেজি

ব্যাপ্তি: ৯৩ মিনিট

রেটিং: ৮.৪ (আইএমডিবি)

সাইকেল আছে অথচ তা নিয়ে দু-একবার চুরির অভিজ্ঞতা হয়নি এমন সাইকেল-মালিক বোধ হয় হাতের আঙুল গুনেই বের করা সম্ভব। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৪ সালে খোদ লন্ডনেই প্রায় ৭০ হাজার বাইসাইকেল চুরি হয়। অন্যদিকে চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে অবস্থা নাকি আরও খারাপ। এ শহরটিতে মোট সাইকেলের সংখ্যা ১ কোটি ৩০ লাখ, যার মধ্যে ৯০ লাখ সাইকেলই চুরি করা। তাহলেই বোঝো অবস্থা। ওদিকে যুক্তরাষ্ট্রেও বিভিন্ন শহরে কিন্তু সাইকেল চোরের অভাব নেই। আর বাংলাদেশের সাইকেল চুরি নিয়ে সঠিক পরিসংখ্যানটি যে কে জানে, তা জানা নেই। পরিসংখ্যানে সাইকেলের ক্ষয়ক্ষতি মাপার চেয়ে আমরা বরং এক হৃদয়ছোঁয়া সাইকেল চুরির গল্প শুনতে পারি। 

তখন সবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়েছে। প্রায় সোয়া এক কোটি মানুষকে হত্যা করে আর অন্তত ৩০টি দেশ তছনছ করে মিটতে শুরু করেছে পরাশক্তিদের রক্তপিপাসা। কিন্তু দেশে দেশে সাধারণ মানুষের পেটের ক্ষুধা তাতে কমেনি একটুও। বরং যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোতে তত দিনে শুরু হয়েছিল আরেক যুদ্ধ। আর্থিক সংকট, বেকার সমস্যা, খাদ্য আর নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের তীব্র অভাবে জেরবার হচ্ছিল সাধারণ মানুষ। খেয়ে না খেয়ে ধুঁকতে ধঁুকতে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল তারা। এমন পরিস্থিতি ছিল ফ্যাসিবাদী নেতা বেনিতো মুসোলিনির দেশ ইতালিতেও। দেশটির রাজধানী রোমে সে সময় স্ত্রী মারিয়া আর ছোট দুটি সন্তান নিয়ে বাস করতেন অ্যান্টনিও রিক্কি। ঘরে চারটি ক্ষুধার্ত পেট থাকা সত্ত্বেও রিক্কি চালচুলোহীন নিধিরাম বেকার (সর্দার)। 

তাই মারিয়ার চাপ আর কিছুটা বোধ হয় দায়িত্ববোধ থেকে রাজধানীর পথে পথে আরও হাজারো বেকারের মতো কাজ খুঁজতে শুরু করলেন রিক্কি। কিন্তু চাকরি তো আর হাতের মোয়া নয় যে চাইলেই পাওয়া যাবে। তবে রিক্কির ভাগ্য ভালোই বলতে হবে, কীভাবে কীভাবে যেন একটা চাকরি জুটে গেল। রাস্তায় রাস্তায় বিজ্ঞাপনের পোস্টার লাগানোর কাজ। কাজ হিসেবে মন্দ নয়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এ কাজটি পেতে হলে একটি সাইকেল থাকতেই হবে। আর সেটি জোগাড় করে নিতে হবে নিজেকেই। যেখানে সামান্য খাবার কেনারই সামর্থ্য নেই, সেখানে এখন সাইকেল কোথায় পাবেন রিক্কি! সমাধান অবশ্য দিলেন স্ত্রী মারিয়া। বিয়েতে পাওয়া একটা চাদর বিক্রি করে স্বামীকে সাইকেল কিনে দিলেন তিনি। ব্যস! চাকরি পাক্কা! 

সাইকেল নিয়ে মনের আনন্দে পোস্টার লাগিয়ে বেড়াতে লাগলেন রিক্কি। কিন্তু একদিন চুরি হয়ে গেল সাধের নাকি অবশ্য প্রয়োজনীয় সেই সাইকেলটি। চোখে অন্ধকার দেখতে শুরু করলেন রিক্কি। কারণ, ওই সাইকেলের সঙ্গেই তাঁর পুরো পরিবারের খাওয়াপরার যোগ। এক বন্ধু আর ছেলে ব্রুনোকে নিয়ে হেথায় হোথায় খুঁজতে লাগলেন সেই সাইকেল। কিন্তু সবই শেষ পর্যন্ত বৃথা হলো। এখন উপায় কী! ব্রুনোকে নিয়ে নোংরা ফুটপাতে বসে তাই ভাবতে লাগলেন রিক্কি। আচমকা একটি উপায় ঘূর্ণি দিয়ে গেল তাঁর মাথায়। একটু দ্বিধা, একটু শঙ্কা আর একটু সাহস নিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে লাগলেন বেপরোয়া রিক্কি। কিন্তু কী সেটি? তা জানতে দেখতে হবে ইতালিয়ান পরিচালক ভিত্তোরিও ডি সিকার লাডরি দ্য বাইসাইক্লিত। ইংরেজিতে অনুবাদ করলে দাঁড়ায় দ্য বাইসাইকেল থিফ। আর সোজা বাংলায় সাইকেল চোর

 আরেকটি কথা জানলেও ক্ষতি নেই যে নিওরিয়ালিজম ঘরানার এই ছবিটি দেখেই একদিন ছবি বানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন আমাদের পথেরপাঁচালীর পরিচালক সত্যজিৎ রায়। সত্যজিৎ ছাড়াও এই ছবিটি বিশ্বখ্যাত অনেক পরিচালককে প্রভাবিত করেছে। কারণ , ১৯৪৮ সালে মুক্তি পাওয়ার চার বছর পর এক জরিপে ছবিটি জায়গা পেয়েছিল সর্বকালের সেরা ছবির তালিকায়। এ ঘটনার ৫০ বছর পর আরেক জরিপেও ছবিটিকে ওই তালিকা থেকে সরানো যায়নি। বরং সর্বকালের সেরা ছবির তালিকায় ওপরের দিকে (৬ নম্বর) নিজের আসন পোক্ত করেছে ৬৭ বছর আগের সাদাকালো যুগের ছবিটি। আর ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউটের তৈরি একটি তালিকায় ১৪ বছর বয়স হওয়ার আগেই দেখার মতো ছবির তালিকায় সেরা দশে আছে দ্য বাইসাইকেল থিফ।