বালির দেশে রকেট

বালি দ্বীপের নিটি ম্যান্ডেলা মাঠে চলছে ওয়াটার রকেট প্রতিযোগিতা
বালি দ্বীপের নিটি ম্যান্ডেলা মাঠে চলছে ওয়াটার রকেট প্রতিযোগিতা

মাস দুয়েক আগে নানা ধাপে নির্বাচিত হয়েছিলাম ওয়াটার রকেট ইভেন্ট ‘এপিআরসাফ-২২’, অর্থাৎ ২২তম এশিয়া প্যাসিফিক রিজিওনাল স্পেস এজেন্সি ফোরাম ২০১৫ প্রতিযোগিতায়। জাপান অ্যারোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সি (জাক্সসা) এবং ইন্দোনেশিয়ান ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যারোনেটিকস অ্যান্ড স্পেসের (লাপান) যৌথ প্রযোজনায় এ অনুষ্ঠানটি প্রতিবছর এশিয়ার বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত হয়। এবার এর আসর বসেছিল ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপে।

নানা ঝামেলার পর ২৬ নভেম্বর রাতে বাংলাদেশ দলের সবাই ঢাকা ছেড়ে গেলাম। পরদিন সিঙ্গাপুরে ট্রানজিট হয়ে ইন্দোনেশিয়ায় পৌঁছে দেখলাম সেখানকার ঘড়িতে সময় দুপুর সাড়ে ১২টা। বিমানবন্দরের সামনে ‘বাংলাদেশ’ লেখা একটি ব্যানার নিয়ে অপেক্ষমাণ প্রতিনিধিদল আমাদের সাধুবাদ জানিয়ে মাইক্রোবাসে উঠিয়ে দিল।

বালির রাজধানী ড্যানপাসারের রাস্তা দিয়ে চলার সময় দেখলাম, রাস্তায় কোনো ট্রাফিক পুলিশ নেই। রাস্তায় কোনো ঝরা পাতাও খুঁজে পেলাম না।

নিটি ম্যান্ডেলা মাঠে ওয়াটার রকেট প্রতিযোগিতার প্রস্তুতি
নিটি ম্যান্ডেলা মাঠে ওয়াটার রকেট প্রতিযোগিতার প্রস্তুতি

বাংলাদেশ দলের শিক্ষক মোহাম্মদ মোফাক্কারুল ইসলামের নেতৃত্বে আমরা ড্রিমল্যান্ড বিচে দুপুরের খাবার খেয়ে হাঁটতে লাগলাম। কাছেই ছিল ডাবের দোকান। সেগুলো আবার আমাদের দেশের ডাব থেকে দুই-তিন গুণ বড়। সেই ডাব খেতে আমাদের আটজনের গুনতে হয়েছিল পাক্কা ১ লাখ ২০ হাজার রুপিয়া। মুদ্রাস্ফীতির কারণেই কিনা বাংলাদেশি মুদ্রায় সেটা মোটে ৬৬২ টাকা।

রুমে ফেরার পর নেপালি বন্ধু জেমস আমাদের রুমে এল। তার সঙ্গে কথা বলে জানতে পারলাম বাংলা আর নেপালি ভাষার প্রতীকের উচ্চারণ একই, তবে লেখার ধরন ভিন্ন।

২৮ তারিখ সকালে নির্ধারিত কমলা রঙের টি-শার্ট পরে বের হলাম। অডিটোরিয়ামে গিয়ে বাংলাদেশ দলের সবাই বসে পড়লাম একটি টেবিলে। সমন্বয়ক ও পরিচালকের বক্তব্য শেষে যখন সব দলের সদস্যরা নিজের দেশ সম্পর্কে বলা শুরু করল, তখন আমরা বললাম বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দৃশ্য ও ঐতিহ্যের কথা। এর পরপরই আমাদের পুলিশি নিরাপত্তায় সাংস্কৃতিক ট্যুরে গাড়ুয়া, উইনশু ক্যানকানা কালচারাল পার্কে নিয়ে যাওয়া হলো। আমরা গেলাম ইন্দোনেশিয়ান দলের সঙ্গে। গাইড লাপানের সংগঠক কুইনসি এসমেবালা উইলান। পরে গাড়ুয়ার মর্দান মার্কেটে কেনাকাটা শেষে গেলাম জিম্বারানে সমুদ্রসৈকতে। রাতে আমাদের আঁকিয়ে ফেসবুক বন্ধু দেখা করতে এল। ভার্চুয়াল জগতের বাইরে আমরা অনেকক্ষণ গল্প-গুজব করলাম।

ওয়াটার রকেট হাতে সবাই এভাবেই ছবি তুলতে বসে পড়েছিলাম অডিটরিয়ামের সামনে
ওয়াটার রকেট হাতে সবাই এভাবেই ছবি তুলতে বসে পড়েছিলাম অডিটরিয়ামের সামনে

পরদিন ভোরে উঠে আবার গেলাম অডিটোরিয়ামে। রকেট বানানোর সব সরঞ্জাম নিয়ে নিজ নিজ সিটে বসে দুই ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যেকে দুটি করে রকেট বানিয়ে ফেললাম। টানা পরিশ্রম শেষে গ্রুপ ছবি তুললাম সব বাংলাদেশি মিলে। একে একে সবাই দুপুরের খাবার শেষ করে রকেটগুলো নিয়ে বাসে চড়ে গেলাম নিটি ম্যান্ডেলার মাঠে। উদ্দেশ্য রকেট উৎক্ষেপণ। তিন ধাপে রকেট উক্ষেপণ শেষে আমাদের অবস্থান দাঁড়াল পঞ্চম। এরপর উটামা ম্যান্ডেলার মূল ভবনের জাদুঘর ঘুরে দেখলাম। ওই ভবনের সর্বোচ্চ স্তর থেকে পুরো এলাকা দেখা যায়। দ্বিতীয় তলায় ৩৩টি ইউনিটে জাকার্তার জাতীয় জাদুঘরের একটি অংশ রয়েছে। বালির রাজত্ব, হিন্দু সভ্যতা, স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম আর বর্তমান পর্যন্ত নানা সভ্যতার মূর্তি রাখা হয়েছে এখানে।

বালির রাস্তা এমনই ঝকঝকে পরিস্কার
বালির রাস্তা এমনই ঝকঝকে পরিস্কার

রাতের খাওয়া শেষে শুরু হলো সনদ বিতরণ পর্ব। এ পর্ব শেষে বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরা তাদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক নৃত্য ও নানা ধরনের গান গেয়ে তাদের দেশকে তুলে ধরল। এরপর সকল দলের সদস্যরা একে অপরকে নানা উপহার দিল। আমরা দিলাম নিজ দেশের পতাকায় সজ্জিত কাপড়ের টুকরো। সবশেষে এজ্যুস হিদায়েতের বক্তব্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটল।

এই প্রতিযোগিতায় আমাদের সঙ্গে ছিল মুনতাজির বিল্লা, রাশিক ইসমাম, খন্দকার নাসরিন ইসমত আরা ও খন্দকার নুজহাত রাফা ইসলাম। আরও ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার সহকারী শিক্ষা অফিসার আ ফ ম হাসান।

ছবি: মনন মাহমুদ