আপালাচিয়ান ট্রেইলের পোড়োবাড়ি

ঘণ্টা খানেক হাঁটছে তারা আপালাচিয়ান ট্রেইলের হালকা বনানীর ভেতর। চারজনের এ হাইকার টিমের মেয়ে দুটির নাম ভেরোনিকা ও আগাথা। তাদের সঙ্গে জোর কদমে হাইক করছে দুটি ছেলে—জাস ও লেন্স। তারা ভিন্ন ভিন্ন স্কুলের ছাত্র হলেও সবাই এবার এইটথ গ্রেড থেকে উঠবে নাইনথ গ্রেডে। সমাপনী পরীক্ষা শেষ। গ্রীষ্মের ছুটিতে তারা হাইকিং ক্যাম্পে এক সপ্তাহের প্রশিক্ষণ নেয়। তখন পরস্পরের সঙ্গে পরিচয়। প্রশিক্ষণে বনে কীভাবে তাঁবু খাটাতে হয়, কী রকম রান্না করতে হয় বা ফার্স্টএইড ব্যবহার করতে হয়—এসব শিখতে গিয়ে তাদের মাঝে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। তখনই আপালাচিয়ান ট্রেইলে একসঙ্গে হাইক করে তাঁবু খাটিয়ে রাত কাটানোর সিদ্ধান্ত নেয় তারা। যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের ভিন্ন ভিন্ন ছোট্ট শহরে তাদের বাস। আপালাচিয়ান ট্রেইল হচ্ছে পৃথিবীর দীর্ঘতম হাইকিং করার পায়ে চলার পথ। সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ এ পথ শুরু হয়েছে জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের স্প্রিংগার পর্বত থেকে। শেষ হয়েছে মেইন অঙ্গরাজ্যের কাটাডিন পাহাড়ে। এ ট্রেইলের খানিকটা এঁকেবেঁকে চলে গেছে ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের ভেতর দিয়ে। চারজনের ছোট্ট হাইকিং টিম সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আজ মাইল দশেক হেঁটে বনানীর ভেতর তাঁবু খাটিয়ে ক্যাম্পিং করবে।

একটু আগে মা-বাবা তাদের ড্রপ করে দিয়েছে ট্রেইলহেডে। একটি কাঠের ফলকে পরিষ্কার লেখা আপালাচিয়ান ট্রেইলের নাম। এখান থেকে গাছপালার ভেতর দিয়ে তাদের হাইকের শুরু। তারা পিঠের ভারী ব্যাকপ্যাকে বহন করছে তাঁবু, রান্নার জন্য গ্যাস স্টোভ, শুকনা খাবার, পানীয় জল ও ফার্স্টএইডের বাক্স। বনানী তেমন গভীর না। যেতে যেতে শোনা যাচ্ছে পাখপাখালির ডাক। তাদের সঙ্গে টিলার নিচ দিয়ে চলছে ছোট্ট ছড়া নদী। তার চলাচলে নুড়িপাথরে জলের ঘর্ষণে সুন্দর শব্দ হচ্ছে। গাছপালার ফাঁক দিয়ে রুপালি জলধারা দেখা যাচ্ছে পরিষ্কার। তার কিনারার অগভীর জলে দীর্ঘ পায়ে সাবধানে হাঁটছে ব্লু হিরণ বলে এক বড়সড় পাখি। এদের মধ্যে আগাথার পাখি পর্যবেক্ষণে বেশ আগ্রহ। সে আপালাচিয়ান ট্রেইলে বাস করে, এ রকম ১০০টি পাখির নামের একটি চেকলিস্ট ব্যাকপ্যাক থেকে বের করে। তাতে ব্লু হিরণের পাশে টিক মার্ক দিতে থামলে লেন্স মৃদু শিস দিয়ে তাকে ইশারায় কী যেন বলে। তাতে হাইকার টিমের সবাই থেমে পড়ে। লেন্স গাছপালার ফাঁক দিয়ে দূরে মাঠের দিকে বাইনোকুলার তাক করে। ততক্ষণে সবার হাতে উঠে এসেছে বাইনোকুলার। তারা দেখে মাঠের ওপারে এক সুনসান খামারবাড়ি। লেন্স আবিষ্কার করে, খামারবাড়ির আঙিনায় এক গাছের ডালে ঝুলছে ভারী বুট জুতা। বিষয়টি সন্ধানে সে খামারবাড়ির কাছে যেতে চায়। খামারবাড়িতে একটু ঢুঁ মেরে আসতে সবাই রাজি হয়।

খামারবাড়ির আঙিনায় গাছে ঝুলছে আস্ত এক জুতা
খামারবাড়ির আঙিনায় গাছে ঝুলছে আস্ত এক জুতা

মাঠটি ছোট্ট দেখালেও তা পাড়ি দিতে লাগে আটাশ মিনিট। পাথরে তৈরি খামারবাড়িতে কোথাও লোকজন নেই। গাছের ডাল থেকে সত্যিই ঝুলছে ভারী বুট জুতা। জাস ঢিল ছোড়ে। লেন্স বলে—নিশ্চয়ই কোনো পর্যটক বেলুনে করে উড়ে যাচ্ছিল, তখন জুতার ফিতা লুজ হয়ে খুলে পড়েছে। পাখির সন্ধানে আগাথা চারদিকে তাকাচ্ছিল। হঠাত্ সে চেঁচিয়ে বলে—দেখো, কী সুন্দর একটি ঘোড়া ছোট্ট বাচ্চা নিয়ে চরছে! সত্যিই ঘোড়াটির কাঁধে সিংহের কেশরের মতো দীর্ঘ নরম পশম। তা ছুঁয়ে আদর করতে চায় ভেরোনিকা। জাসও ঘোড়া আর বাচ্চার ছবি তুলতে চায়। সবাই ছোটে খামারবাড়ির পেছনের মাঠে। ঘোড়ার কাছে পৌঁছামাত্র বাচ্চাটি অবাক হয়ে তাদের দিকে তাকায়। ঠিক তখনই মা-ঘোড়া ঘাড় বাঁকিয়ে চিঁ-হি-হি-হি আওয়াজ তুলে তেড়ে আসে। ঘোড়াটি বাতাসে দুই পা তুলে লাথি ছোড়ার ভঙ্গি করলে তারা চারজন পড়িমরি দৌড়াতে থাকে। অনেক দৌড়ে মাঠ পেরিয়ে চলে আসে ছড়া নদীর তীরে। খ্যাপা ঘোড়ার ভয়ে উল্টোদিকে ফেরার প্রশ্নই ওঠে না। তাই তারা জুতা খুলে হাঁটু অবধি জলে ডুবিয়ে নদী পাড়ি দেয়।

ছড়া নদীর ওপারে ঘণ্টা খানেক ঘন বনের ভেতর দিয়ে ঝরাপাতা মাড়িয়ে হেঁটে তারা অবশেষে চলে আসে হাইকিং ট্রেইলে। পথটি ঘন পাইন বনের ভেতর দিয়ে চলে গেছে সুনসান। গাছের ডালে একধরনের ব্যাঙ ডাকছে ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ করে। পুরো পরিবেশ ছমছমে। ট্রেইলে অন্য কোনো হাইকার নেই দেখে তাদের অস্বস্তি হয়। এক জায়গায় কাঠের খুঁটির ওপর দাঁড় করানো কাচের বুককেসে কয়েকটি বই রাখা। এটা হাইকিং ট্রেইলের লাইব্রেরি। এখানে বই বিনিময় করা যায়। অর্থাত্ পড়া হয়ে যাওয়া একটি বই শোকেসে রেখে তুলে নেওয়া যায় নতুন আরেকটি বই। তারা দাঁড়িয়ে নেড়েচেড়ে পাতা খুলে বইগুলো পরীক্ষা করে। বড়দের বই বলে বিনিময় করার তেমন একটা আগ্রহ পায় না। লেন্স হাইকিং ট্রেইলের মানচিত্র খুঁটিয়ে দেখে। তাতে ট্রেইলে কোথায় কী তার বিশদ বর্ণনা আছে। সে বর্ণনায় ট্রেইল লাইব্রেরির উল্লেখ দেখতে না পেয়ে চিন্তায় পড়ে যায়। আরেকটি বিষয় তাদের ভাবনায় ফেলে, তা হচ্ছে—এদিকের বনানীতে ওক ও ফার গাছ থাকার কথা। মানচিত্রে কোথাও পাইন বনের বর্ণনা নেই। তবে কি তারা ভুল ট্রেইল ধরে হাঁটছে?

পিকনিক টেবিলে বসে আছে ভালুক
পিকনিক টেবিলে বসে আছে ভালুক

হাঁটতে হাঁটতে তারা চলে আসে বনের প্রান্তে। এখানে বেশ কয়েকটি গাছ ঝড়ে শিকড় উপড়ে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। তার খোলামেলা ওপেনিং দিয়ে তারা দেখতে পায় দূরে পাথুরে পাহাড়। রোদের আলোয় পাহাড়ের সাদাটে পাথর ঝলমল করছে। লেন্স পাহাড়টি চিনতে পারে, বুলরান মাউন্টেন। কিছুদিন আগে সে তার মা-বাবার সঙ্গে বুলরান পাহাড়ে হাইক করেছে। তাঁবু খাটিয়ে কাটিয়েছে দুই রাত। কিন্তু তাদের ট্রেইলে তো বুলরান মাউন্টেন থাকার কথা নয়! তবে কি তারা উল্টোদিকে হাঁটছে? জাস বিষয়টা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়। হাঁটার দিক নির্ণয়ে ভুল হলে এমন কিছু সমস্যা হবে না। দশ-বারো মাইল হাঁটতে পারলে বুলরান মাউন্টেনের পাশেই পাওয়া যাবে লোকালয়। সবাই বেশ ক্লান্ত। তাই পিঠ থেকে ব্যাকপ্যাক মাটিতে নামিয়ে একটু দাঁড়ায়। আগাথা কুলার থেকে বের করে সবার হাতে স্প্রাইটের ক্যান দেয়। ঠান্ডা পানীয়তে চুমুক দিতে গিয়ে তারা শুনতে পায় বিচিত্র শব্দ। যেন টিনের কৌটায় শুকনা শিমের বিচি ভরে নাড়াচাড়া করা হচ্ছে। সবাই সাবধানে চারদিকে তাকায়। খুব একটা খুঁজতে হয় না। পাথরের ওপর কুণ্ডলী পাকিয়ে শুয়ে এক র্যাটল সাপ। সে লেজ নাড়িয়ে চড়মড় শব্দ করে তাদের ভয় দেখাচ্ছে। র্যাটল সাপ খুব বিষাক্ত। তাদের কাছাকাছি এলে প্রথমে এ রকম শব্দে সাবধান করে দেয়। সবাই আবার কাঁধে ব্যাকপ্যাক তুলে হাঁটতে যায়। কিন্তু জাস পেছন ফিরে ক্যামেরায় সাপের ছবি তোলে। তখন সাপটি কুণ্ডলী খুলে তেড়ে আসে তার দিকে। বিপজ্জনক ব্যাপার। তাই সবাই পড়িমরি করে দৌড়াতে শুরু করে।

বেলা পড়ে আসছে। সারা দিন বনেবাদাড়ে এলোপাতাড়ি ঘুরে তারা ক্লান্ত হয়ে একটি টিলার কিনারায় বসে। কথা ছিল দুপুর নাগাদ স্টোন-পয়েন্ট বলে এক জায়গায় পৌঁছে তাঁবু খাটাবে। তারপর লাঞ্চের জন্য আগুনে ঝলসিয়ে চিকেন বারবিকিউ বানাবে। কিন্তু কম্পাস ব্যবহার করেও তারা স্টোন-পয়েন্ট খুঁজে পায়নি। বনানীতে গাছপালা ও ঝোপঝাড় এত ঘন যে তাঁবু খাটানোর জন্য কোনো খোলা জায়গা তারা খুঁজে পায়নি। এদিকে আলো কমে আসছে। সন্ধ্যার আগে তাঁবু খাটাতে না পারলে মুশকিল। চারটি আলাদা ছোট্ট তাঁবু খাটানোর জন্য চাই বেশ খানিকটা খোলা জায়গা। ভেরোনিকা প্যাকেট ছিঁড়ে বের করে বিফ-জার্কি। সবাই কাজুবাদাম, ক্রিম ক্রেকার ও বিফ-জার্কি চিবায়। লেন্স বাইনোকুলার হাতে উঠে যায় মস্ত এক ম্যাপলগাছের ডালে। টিলার নিচে বেশ দূরে বয়ে যাচ্ছে ছোট্ট নদী। ভেরোনিকা স্যান্ডউইচ চিবাতে চিবাতে বলে, দেখো! কয়েকটা বিড়াল। জাস বাইনোকুলারে চোখ লাগিয়ে চিত্কার করে বলে, জেসাস ক্রাইস্ট! বিড়াল না, একটি ভালুক পরিবার! সবাই বাইনোকুলার বের করে নদীর দিকে তাকায়। লেন্সও নেমে এসেছে ম্যাপলগাছ থেকে। হাঁটুপানিতে দাঁড়িয়ে মা-ভালুক মাছ ধরে ধরে ছুড়ে দিচ্ছে তিন ছানার দিকে। একটি ছানা জলে নেমে মায়ের মতো চেষ্টা করছে মাছ শিকার করতে।

মাঠে চরছে বাচ্চাসহ মা ঘোড়া
মাঠে চরছে বাচ্চাসহ মা ঘোড়া

ম্যাপলগাছের ডালে চড়ে লেন্স দেখতে পেয়েছে, খানিক দূরে জঙ্গলের ভেতর একটি পোড়োবাড়ি। সে বাইনোকুলারে বেশ দূরের একটি পাহাড়ে ফায়ার কন্ট্রোল বিভাগের একটি টাওয়ারও দেখতে পেয়েছে। ফায়ার কন্ট্রোলের টাওয়ারে বন বিভাগের গার্ডরা পালা করে পাহারা দেয়। তারা বনের চারদিকে বাইনোকুলারে নজর রাখে কোথাও আগুন লাগল কি না। ধোঁয়া বা আগুনের শিখা দেখতে পেলে তারা ওয়্যারলেসে দমকল বাহিনীকে খবর দেয়। ফায়ার টাওয়ারে পৌঁছাতে পারলে সঠিক পথের সন্ধান বা কোথায় তাঁবু খাটানো যায়—সব তথ্য পাওয়া যাবে। কিন্তু অন্ধকার হয়ে আসছে। অতদূর হেঁটে পৌঁছা যাবে না। এদিকে ভালুক পরিবার দেখার পর থেকে সবার বুকের ভেতর কেমন খালি খালি লাগছে। তারা সিদ্ধান্ত নেয় দ্রুত হেঁটে পোড়োবাড়িতে পৌঁছার।

পোড়োবাড়িটি পুরো পাথরের। অনেক দিন কেউ বাস করেনি বলে দরজা-জানালায় পাল্লা নেই। তবে পেছন দিকে দুটি কামরায় দরজা-জানালার কপাট এখনো নষ্ট হয়নি। কামরা দুটি পরিষ্কার করতে করতে সন্ধ্যার অন্ধকারে বনানী ছেয়ে যায়। হারিকেন জ্বালিয়ে মেয়েরা এক কামরায় ও ছেলেরা অন্য কামরায় স্লিপিং ব্যাগ পাতে। খুব ক্লান্ত, তাই রান্নার জোগাড় করতে ইচ্ছে হয় না। ভেরোনিকা তাড়াতাড়ি চিজ স্যান্ডউইচ বানায়। তা খেয়ে সবাই শুয়ে পড়ে। চারদিকে ডাকছে হাজার হাজার ঝিঁঝি পোকা। মাঝেমধ্যে হরিণেরও ডাক শোনা যায়।

সকালে সবার আগে লেন্স ও আগাথার ঘুম ভাঙে। তারা মার্কার দিয়ে কার্ডবোর্ডে বড় বড় করে লিখে ‘লস্ট’ (হারিয়ে গেছি) শব্দটি। লেন্স কার্ডবোর্ড হাতে গাছ বেয়ে উঠে যায় মগডালে। ওখান থেকে দূরের পাহাড়ে ফায়ার কন্ট্রোল বিভাগের টাওয়ার পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। সে প্রথমে নিজেকে গাছের ডালের সঙ্গে শক্ত করে দড়ি দিয়ে বাঁধে। তারপর বাইনোকুলারে দেখে টাওয়ারের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে একজন ফরেস্ট গার্ড সবদিকে নজর রাখছে। লেন্স তার দিকে ‘লস্ট’ লেখা কার্ডবোর্ডটি তুলে ধরে। মিনিট পাঁচেক অপেক্ষার পর সে দেখে টাওয়ারের গার্ড তার দিকে বাইনোকুলার তাক করে তাকিয়ে। লেন্স টি-শার্ট খুলে নাড়ে। গার্ডও মনে হয় ছোট্ট আয়নায় আলো প্রতিফলিত করে তাকে কিছু বলতে চাইছে।

এই সেই পাথরের পোড়োবাড়ি
এই সেই পাথরের পোড়োবাড়ি

লেন্স গাছ থেকে নামতেই আগাথা চিত্কার করে তাকে টেনে নেয় কামরার ভেতর। ভেরোনিকা দরজার ছিটকিনি লাগায়। সবাই উত্তেজিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। লেন্স বুঝতে পারে না—ঘটনা কী? আগাথা তাকে জানালার ভাঙা কাচের ফোকর দিয়ে সাবধানে তাকাতে বলে। লেন্স তাকিয়ে দেখে—পেছনের আঙিনায় জানালার কাছেই পিকনিক টেবিলে আরামসে বসে একটি নাদুসনুদুস ভালুক। একে তাড়ানো না গেলে এখান থেকে বেরোনো যাবে না। জাস চেষ্টা করছে গুলতি বানানোর। গুলতি দিয়ে পাথর ছুড়তে চায়। ভালুকের নাকে তাক করতে পারলে বাছাধন পালাবে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে গুলতি খেয়ে ভালুক যদি খেপে গিয়ে দরজা ভেঙে কামরায় ঢুকে তারা গোদা গোদা থাবা দিয়ে জাসকে চটকনা কষায়।

আগাথা বলে—ভালুকেরা মরিচের গুঁড়ায় ভয় পায়। কথা ছিল গেল রাতে ভেরোনিকা মরিচের গুঁড়া দিয়ে মেক্সিকান ফুড রান্না করবে। কিন্তু রান্নাবান্না হয়নি বলে মরিচের গুঁড়ার পুরো প্যাকেট পড়ে আছে। এখন সমস্যা হচ্ছে, তা ভালুকের দিকে ছোড়া যায় কীভাবে? চিন্তাভাবনা করে তারা আগাথার স্প্রেয়ার লাগানো সেন্টের শিশি খালি করে। তাতে কুকিং ওয়েলের সঙ্গে মরিচের গুঁড়া মেশায়। জাসের তাক খুব ভালো। সে জানালা দিয়ে হাত বাড়িয়ে ভালুকের দিকে স্প্রে করে মরিচের গুঁড়া। প্রতিক্রিয়া হয় সঙ্গে সঙ্গে। ভালুকটি হাঁচতে হাঁচতে কেঁউ কেঁউ করে ছুটে পালায় বনের দিকে। আর এখানে থাকা নয়। চারজনে তাড়াতাড়ি স্লিপিং ব্যাগ গুটিয়ে ব্যাকপ্যাক কাঁধে বেরিয়ে পড়ে পোড়োবাড়ি থেকে। সবাই এখন খুব জোরে জোরে হাঁটছে ফায়ার টাওয়ারের দিকে।

প্রায় আধঘণ্টা পর তারা শুনতে পায় ঘোড়া ছোটানোর আওয়াজ। ঘোড়ায় চড়ে বন থেকে বেরিয়ে আসে দুই ফরেস্ট রেঞ্জার। ফায়ার টাওয়ারের প্রহরী ‘লস্ট’ লেখা কার্ডবোর্ড দেখতে পেয়ে ওয়াকিটকি দিয়ে ফরেস্ট রেঞ্জারদের জানায়। রেঞ্জাররা ছুটে এসেছে হারানো হাইকারদের খোঁজ নিতে। সদালাপী এক রেঞ্জার বলেন, পাথরের পোড়োবাড়িটি পঁয়ষট্টি বছর আগে ছিল জঙ্গলে টহলদার রেঞ্জারদের দপ্তর। অনেক বছর হলো বাড়িটি খালি। ভালুকের কথা শুনে রেঞ্জার মৃদু হাসেন। এই ট্রেইলে কালো ভালুকের সংখ্যা অনেক। হিংস্র হলেও হাইকারদের এরা তেমন ঘাঁটায় না। অন্য রেঞ্জার জানতে চান—তাদের কাছে বেয়ার-বেল আছে কি না? বেয়ার-বেল হচ্ছে একধরনের ঘণ্টা। হাইকাররা জঙ্গলে চলাফেরার সময় তা ব্যাকপ্যাকে ঝুলিয়ে রাখেন। তাতে রিকশার ঘণ্টির মতো টুংটাং শব্দ হয়। এতে বিরক্ত হয়ে ভালুকেরা পায়ে চলা হাইকিং ট্রেইল ছেড়ে সরে দাঁড়ায়।

চারজনের কারও কাছে বেয়ার-বেল নেই শুনে রেঞ্জাররা তাঁদের দুটি বেয়ার-বেল ধার দেন। তাঁরা আগে আগে আস্তে ঘোড়া চালিয়ে তাঁদের নিয়ে আসেন সঠিক ট্রেইলে। বার্চগাছের ঘন বনানীর ভেতর দিয়ে বয়ে চলা এ ট্রেইলে আছে কিছু দূর পরপর গাছের কাণ্ডে লাল রঙে আঁকা তিরচিহ্ন। এ পথ ধরে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা হাঁটলে পৌঁছা যাবে যে ট্রেইলহেড থেকে গতকাল তারা হাইকিং শুরু করেছিল সেখানে। আজ পাঁচটার দিকে তাদের মা-বাবারা গাড়ি নিয়ে ওখানে আসবেন। ট্রেইলহেডের সাইনবোর্ডের সঙ্গে লাগানো আছে একটি কাচের কৌটা। ওখানে রাখা আছে হাইকিং ট্রেইলের মানচিত্র। কথা হয় যে—ট্রেইলহেডে পৌঁছে তারা বেয়ার-বেল দুটি ওই কৌটায় রেখে দেবে। পরে রেঞ্জাররা ওখান থেকে তুলে নিতে পারবে বেল দুটি। সবাই আন্তরিকভাবে রেঞ্জার দুজনকে ধন্যবাদ জানিয়ে হাইকিং ট্রেইলে পা বাড়ায়। এবার তাদের সঙ্গে আছে দুটি বেয়ার-বেল। হাঁটার সময় তা থেকে টুংটাং আওয়াজ হতে থাকে।