মজার আবিষ্কার স্যাকারিন

টলুইন একটি যৌগিক পদার্থ। ফালবার্গ নামে এক তরুণ রসায়নবিজ্ঞানী টলুইনের কথা শুনে এ নিয়ে গবেষণা করেন। ফালবার্গ বয়সে তরুণ ছিলেন, উত্সাহ ছিল অদম্য এবং পরিশ্রমও করতেন প্রচুর। গবেষণা করতে করতে তিনি সবকিছু ভুলে যেতেন। থাকতেন একজনের বাড়িতে, পেয়িং গেস্ট হিসেবে।

একবার খাওয়ার সময় অতিবাহিত হয়ে যাওয়ায় গৃহকর্ত্রী বিরক্ত হয়ে ফালবার্গের গবেষণাগারে ঢুকে তাঁকে দু-চার কথা শুনিয়ে দিলেন আর ভয় দেখালেন, এখনই খেতে না এলে তাঁর জিনিসপত্র সব ভেঙে গুঁড়িয়ে দেবেন।

বিজ্ঞানী ফালবার্গ
বিজ্ঞানী ফালবার্গ

খেতে বসে হাতের গ্রাস মুখে তুলতে গিয়ে ফালবার্গ অনুভব করলেন, যা-ই মুখে তুলছেন, তা-ই মিষ্টি লাগছে। তিনি আবার একদমই মিষ্টি পছন্দ করতেন না। গৃহকর্ত্রী রান্নায় চিনি ব্যবহার করেছেন মনে করে প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি মুখ ভার করলেন। কিন্তু গৃহকর্ত্রী তো রান্নায় মিষ্টি ব্যবহার করেননি! অতএব প্রতিবাদ সহ্য করবেন কেন? দৃঢ় কণ্ঠে বললেন, ‘তোমার মুখটাই আজ খারাপ হয়ে আছে। আমি রান্নায় একটুও মিষ্টি ব্যবহার করিনি।’

ফালবার্গ বিশ্বাস করলেন না তাঁর কথা। দু-চার গ্রাস মুখে পুরে রাগে গরগর করতে করতে বেরিয়ে গেলেন এবং বসলেন তাঁর সেই গবেষণাগারেই। কিন্তু এত রেগে গিয়েছিলেন যে পুনরায় গবেষণায় মনঃসংযোগ করতে পারলেন না।

কেটে গেল কতক্ষণ! মাথাটা একটু ঠান্ডা হতে ভাবতে শুরু করলেন গৃহকর্ত্রীর কথা। তিনি যদি মিষ্টি ব্যবহার করে না থাকেন, তাহলে এত মিষ্টি এল কোথা থেকে! তা ছাড়া রান্নায় মিষ্টি ব্যবহার করলেও কেউ কি এত মিষ্টি দেয়।

ভাবতে ভাবতে কখন নিজের হাতের কড়ে আঙুলটা মুখে ঠেকিয়ে দিলেন মনে নেই। হঠাত্ চমকে উঠলেন তিনি। একি! হাতের আঙুলে এত মিষ্টি এল কোথা থেকে!

এতক্ষণে বুঝতে পারলেন দোষটা গৃহকর্ত্রীর নয়। যত দোষ সব তাঁরই।

এবার মনে পড়ল খেতে বসার আগে হাতটা ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করেননি। সম্ভবত গবেষণা করতে করতে আপন অজান্তে তিনি এমন একটা জিনিস তৈরি করে ফেলেছেন, যা চিনির চেয়ে শত শত গুণ মিষ্টি।

টেবিলের ওপর থরে থরে সাজানো জিনিসপত্র নিয়ে পুনরায় গবেষণা শুরু করলেন। বিশেষ বেগ পেতে হলো না। অতি অল্পায়াসেই সন্ধান লাভ করলেন সেই অত্যাশ্চর্য পদার্থটির এবং সেই পদার্থটিই স্যাকারিন যার ফর্মুলা C7H5NO3S।