কিউআর কোড কী

একসময় রাজা-বাদশাহরা বিভিন্ন দাপ্তরিক কাজে গুপ্ত সংকেত  ব্যবহার করতেন। রোমান সেনাপতি জুলিয়াস সিজার গোপন লেখনীর ক্ষেত্রে সবচেয়ে সহজ পথ বেছে নিয়েছিলেন। ইংরেজি বর্ণমালাকে তিন ঘর পিছিয়ে লিখতেন তিনি। ব্যাপারটা খুব সহজ ও মজার। ধরা যাক, ইংরেজিতে APPLE লিখতে হবে। জুলিয়াস সিজারের সূত্র অনুযায়ী, অক্ষরগুলো তিন ঘর পিছিয়ে দিলে শব্দটি XMMIB হবে। এই তিন ঘর পেছানোর মতো সূত্রগুলোকেই গুপ্ত সংকেতের ‘কি’ বা চাবি বলা হয়। যাঁর উদ্দেশে বার্তা লেখা হবে শুধু তিনিই জানবেন এই গোপন সূত্র। কোনো যুগেই গুপ্ত সংকেতের ব্যবহার থেমে ছিল না।

বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগ গুপ্ত সংকেত বা ক্রিপ্টোগ্রাফির ব্যবহার ছাড়া প্রায় অচল। কম্পিউটার প্রোগ্রামিং, পাসওয়ার্ড, ব্যাংকে অর্থ লেনদেনের তথ্য সংরক্ষণ, এটিএম কার্ড, পণ্যের বারকোড বা কিউআর কোড ইত্যাদিতে ক্রিপ্টোগ্রাফি প্রয়োগ করা হয়। সংশ্লিষ্ট তথ্য গোপনীয় লেখনীতে রূপান্তর করাকে বলে এনক্রিপশন। যার সাহায্যে এই কাজটি করা হয় তাঁকে বলে ‘কিফার’। বর্তমানে বহুল কিফার হচ্ছে ‘ডিইএস’ বা ডাটা এনক্রিপশন স্ট্যান্ডার্ড। এ পদ্ধতিতে প্রতিটি অক্ষরকে ৬৪ বিট আয়তনের একটি চারকোনা বাক্সে  রূপান্তর করা হয়। একটি পণ্যের নাম, পরিচিতি এবং অন্যান্য তথ্য এই পদ্ধতিতে রূপান্তর করলে একটি খাঁজকাটা চৌকো বাক্সের মতো দেখায়। এটা বর্তমানে ‘কিউআর কোড’ হিসেবে পরিচিত। ডিইএস বা ডাটা এনক্রিপশন স্ট্যান্ডার্ড ব্যবহূত হয় ব্যংকের এটিএম কার্ডে। গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট নম্বরকে এনক্রিপশনের মাধ্যমে গোপন ডিইএস নম্বরে রূপান্তর করা হয়। এ নম্বরকে ডিক্রিপশন বা পাঠোদ্ধারের মাধ্যমে আবার একটি নম্বরে রূপান্তর করা হয়, যাকে বলে পিন নম্বর। এই ন্যাচারাল বা আসল পিন নম্বর গ্রাহক পান না। ন্যাচারাল পিন নম্বরকে এনক্রিপশনের মাধ্যম আরেকটি পিন নম্বরে রূপান্তর করা হয়, যেটাকে অফসেট পিন বলে। এই অফসেট পিন আবার এনক্রিপশনের মাধ্যমে কাস্টমার পিনে     রূপান্তর করা হয়। অর্থাত্ ধরা যাক ন্যাচারাল পিন হলো ০১২৩। জুলিয়াস সিজারের তিন ঘর পেছানো সূত্র ব্যবহার করে এটাকে এনক্রিপশন করলে অফসেট পিন হিসেবে পাওয়া যায় ৭৮৯০। এটাকে আবার রূপান্তর করলে পাওয়া যাবে ৪৫৬৭। এই কাস্টমার পিন নম্বরটি ব্যবহার করেই গ্রাহক এটিএম কার্ডের মাধ্যমে অর্থ লেনদেন করবেন। গ্রাহক তাঁর পিন নম্বর পরিবর্তন করলেও ব্যাংকের আসল পিন নম্বরে কোনো পরিবর্তন হবে না। দিনবদলের সঙ্গে সঙ্গে প্রযুক্তির উন্নয়ন ক্রিপ্টোলজি বা গোপন লেখনীর ব্যবহারকে বৈচিত্র্যময় করে তুলছে।