বিশ্বকাপের অধিনায়কেরা

দরজায় কড়া নাড়ছে ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৯। ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের মাটিতে ৩০ মে দামামা বাজবে মহাযুদ্ধের। যেখানে অংশ নিতে প্রস্তুত সেরা ১০টি দল। আর সেনাপতির মতো সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দিতে তৈরি অধিনায়কেরাও। অন্যান্য যেকোনো খেলার চেয়ে ক্রিকেটের অধিনায়কত্ব দলকে বেশি প্রভাবিত করে। তাই দলগুলো যখন প্রতিপক্ষকে ঘায়েলের ছক কষে, মাথায় রাখে তাদের অধিনায়কের কথা। বিশ্বকাপ শুরুর আগে আমরাও সংক্ষেপে জেনে ফেলি এই ১০ ক্যাপ্টেনের কথা।

অস্ট্রেলিয়া-অ্যারন ফিঞ্চ

ফিঞ্চের অধিনায়কত্বের বয়স মাত্র সাত মাস। ২০১৮ সালের অক্টোবরে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া ওয়ানডে ক্যাপ্টেন হিসেবে ঘোষণা করে তাঁর নাম। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত নেতৃত্ব দিয়েছেন ১৮টি ম্যাচে, যার ১০টিতেই করেছেন জয়লাভ। জয়ের হার ৫৬ শতাংশ। অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর ফিঞ্চের ব্যাট সেভাবে কথা বলেনি। মার্চের পাকিস্তান সিরিজে এসে দুটো সেঞ্চুরি এবং হাফ সেঞ্চুরির পর খানিকটা স্বস্তিতে আছেন এই অজি। দলে তাঁর ভূমিকা ওপেনার বা টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে। ডানহাতি এই খেলোয়াড় ক্যারিয়ারে ১০৯টি ওয়ানডে খেলে ১৩টি সেঞ্চুরি ও ২১টি হাফ সেঞ্চুরিতে করেছেন ৪০৫২ রান, গড় ৩৯.৩৩, স্ট্রাইকরেট ৮৮.১৬।

আফগানিস্তান-গুলবাদিন নাইব

এবারের বিশ্বকাপে সবচেয়ে অনভিজ্ঞ অধিনায়ক আফগানিস্তানের ডানহাতি বোলিং অলরাউন্ডার গুলবাদিন নাইব। বিশ্বকাপের দল ঘোষণার শুরুতেই আফগান বোর্ড চমক হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয় তাদের নতুন এই অধিনায়কের সঙ্গে। আগে কোনো ধরনের নেতৃত্বের অভিজ্ঞতাহীন নাইবের অধিনায়কত্বের অভিষেক হচ্ছে এবারের বিশ্বকাপে। এত বড় আসরে কীভাবে দলকে নেতৃত্ব দেন সেটাই দেখার অপেক্ষায় ক্রিকেটবিশ্ব। ৫৫ ওয়ানডে ম্যাচ খেলে তাঁর ঝুলিতে আছে ৫০ উইকেট এবং ৫ হাফ সেঞ্চুরিতে রান করেছেন ৮৩০।

ইংল্যান্ড-এউইন মরগান

আইসিসির ওডিআই র‍্যাঙ্কিংয়ে ১ নম্বরে থাকা ইংল্যান্ডের নেতৃত্বের ব্যাটন এউইন মরগানের হাতে। ২০১৫ তে গ্রুপ স্টেজ থেকে বিদায় নেওয়া দলটিরও অধিনায়ক ছিলেন তিনি। তবে তারপর ব্রিটিশরা ঘুরে দাঁড়িয়েছে তাঁর নেতৃত্বেই। এসেছে র‍্যাঙ্কিংয়ের ১ নম্বরে। তাই তো এবারের আসরে অন্যতম ফেবারিট মরগানের ইংল্যান্ড। দলে খেলে থাকেন মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে। ২২২ ওয়ানডে ম্যাচে ৩৯.৬৪ গড়ে এবং ৯০.৩৮ স্ট্রাইক রেটে ৬৯৭৭ রান করেছেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। সেঞ্চুরি আছে ১২টি ও হাফ সেঞ্চুরি ৪৫টি।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ-জেসন হোল্ডার

গেইল, পোলার্ড, রাসেলদের অভিজ্ঞতা ও হেটমেয়ার, হোপদের মতো তরুণদের মিশেলে দল গড়া উইন্ডিজ এবারের ডার্ক হর্স। আর তাদের নিয়মিত অধিনায়ক ২৭ বছর বয়সী জেসন হোল্ডার। নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ২০১৫ বিশ্বকাপেও। ফলে বড় আসরের চাপ সামলানোর অভিজ্ঞতা ভালোই জানা আছে তাঁর। সম্প্রতি তাঁর নেতৃত্বেই ঘরের মাঠে শক্তিশালী ইংল্যান্ডের সঙ্গে পাঁচ ম্যাচ সিরিজ ড্র করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দলের প্রয়োজনে বল কিংবা ব্যাট হাতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে পিছপা হন না তিনি। ৯৫ ম্যাচে ২৬.২৩ গড়ে রান করেছেন ১৫৭৪ এবং বল হাতে নিয়েছেন ১২১ উইকেট। আইসিসির অলরাউন্ডারদের র‍্যাঙ্কিংয়ে আছেন আটে।

দক্ষিণ আফ্রিকা-ফাফ ডু প্লেসিস

তালিকার সবচেয়ে সফল ক্যাপ্টেন হিসেবে বলতে হবে এই প্রোটিয়ার নাম। তাঁর নেতৃত্বে ৩০ ওয়ানডেতে কেবল পাঁচটি ম্যাচ হেরেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। জয়ের শতকরা হার ৮৩.৩৩। স্টাইলিশ মিডলঅর্ডার এই ব্যাটসম্যান খেলতে পারেন ব্যাটিং অর্ডারের সবখানেই। চোকার হিসেবে পরিচিত হয়ে যাওয়া দক্ষিণ আফ্রিকা এবার ভরসা নিয়ে তাকিয়ে থাকবে তাঁর দিকেই। কেননা ৪৬.৫৪ গড়ে ৫১২০ রান করা ডু প্লেসিস দলের অন্যতম ব্যাটিং স্তম্ভ। ১৩৪ ম্যাচে তাঁর হাফ সেঞ্চুরি ৩২টি এবং সেঞ্চুরি ১১টি।

নিউজিল্যান্ড-কেন উইলিয়ামসন

২০১৫ তে রানার্সআপ হওয়া কিউইদের নির্ভরযোগ্য একজন ছিলেন এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। কাছ থেকে দেখেছেন ব্রেন্ডন ম্যাককালামের নেতৃত্বে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠা নিউজিল্যান্ডকে। শান্ত ও ধীশক্তির অধিকারী উইলিয়ামসন এক সুতায় বেঁধেছেন দলকে। প্রতিপক্ষকে বিশ্লেষণ করে সুনিপুণ কৌশলে ঘায়েল করতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। দলের অন্যতম স্তম্ভ এই ব্যাটসম্যান ১৩৯ ওয়ানডেতে ৪৫.৯০ গড়ে করেছেন ৫৫৫৪ রান। স্ট্রাইক রেট ৮২.৬১, সেঞ্চুরি ১১টি এবং হাফ সেঞ্চুরি ৩৭টি।

পাকিস্তান-সরফরাজ আহমেদ

পাকিস্তানকে ২০১৭ সালে অনুষ্ঠিত আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি এনে দিয়েছেন এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান। ৩৫ ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দিয়ে দলকে জয় এনে দিয়েছেন ২১টি ম্যাচে। জয়ের হার ৬১.৭৬ শতাংশ। দলের প্রয়োজনে প্রায়ই হাল ধরতে জানেন সরফরাজ। উইকেট কিপিংয়ের পাশাপাশি ব্যাটিং করেন মিডলঅর্ডারে। তাঁর ক্যারিয়ারে ১০৬ ওয়ানডেতে ৩৪.৮৮ গড়ে রান ২১২৮। ১০টি হাফ সেঞ্চুরির পাশাপাশি আছে দুটি সেঞ্চুরিও।

বাংলাদেশ-মাশরাফি বিন মুর্তজা

দলের অন্যতম অভিজ্ঞ খেলোয়াড় মাশরাফি দ্বিতীয়বারের মতো দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিশ্বকাপের মঞ্চে। তাঁর অধিনায়কত্বে ২০১৫ তে প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছিল বাংলাদেশ। দলের ঐতিহাসিক সব জয় এসেছে তাঁর হাত ধরেই। নেতৃত্বগুণে বর্তমানের অন্যতম সেরা অধিনায়ক মাশরাফি। ৭৩ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়ে ৪৩টিতে জেতা তিনিই বাংলাদেশের সফলতম ক্যাপ্টেন। ডানহাতি পেস বোলিং এবং ইনিংসের শেষে মারকুটে ব্যাটিংয়ে বরাবরই উজ্জীবিত করেন টাইগারদের। ২০৯ ওয়ানডে খেলে ঝুলিতে আছে ২৬৫ উইকেট এবং ১৭৫২ রান।

ভারত-বিরাট কোহলি

সময়ের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান কোহলির ভারত র‍্যাঙ্কিংয়ে আছে ইংল্যান্ডের পেছনেই। ৭৩.৮৮ শতাংশ জয়ের হার তাঁকে দিচ্ছে অন্যতম সেরা অধিনায়কের তকমাও। ৬৮ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়ে দলকে জিতিয়েছেন ৪৯টিতে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে পরিপক্ব করা এই ভারতীয়কে নজরে রাখবে সবাই। ২২৭ ওয়ানডে খেলা এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানের রান ১০৮৪৩। গড় ৫৯.৫৭ এবং স্ট্রাইক রেট ৯২.৯৬। সেঞ্চুরির সংখ্যা ৪১ এবং হাফ সেঞ্চুরি ৪৯টি।

শ্রীলঙ্কা-দিমুথ কারুনারত্নে

২০১৫ সালে সর্বশেষ ওডিআই খেলা কারুনারত্নেকে ক্যাপ্টেন হিসেবে ঘোষণা দিয়ে বেশ চমকই দেখিয়েছে শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট বোর্ড। তবে নিয়মিত টেস্ট খেলা এই ব্যাটসম্যানের নেতৃত্বের অভিজ্ঞতা একেবারেই শূন্য নয়। সর্বশেষ টেস্ট সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২-০ ব্যবধানে হারানো শ্রীলঙ্কা দলের অধিনায়ক ছিলেন তিনি। নড়বড়ে অবস্থানে চলে যাওয়া শ্রীলঙ্কার হাল কতখানি শক্ত হাতে ধরে রাখতে পারেন, সেটাই দেখার বিষয়। বাঁহাতি ওপেনিং ব্যাটসম্যান কারুনারত্নে ১৪টি ওয়ানডে খেলে ২০.৫৩ গড়ে করেছেন মাত্র ২৬৭ রান। যার মধ্যে হাফ সেঞ্চুরি আছে ২টি।

তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট