সাত বছরে পা রাখল কিশোর আলো

কিশোর আলোর ষষ্ঠ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শিশু-কিশোরদের সঙ্গে নিয়ে কেক কাটেন কিআ সম্পাদক আনিসুল হক ও অতিথিরা। গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সিএ ভবন মিলনায়তনে।  ছবি: প্রথম আলো
কিশোর আলোর ষষ্ঠ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শিশু-কিশোরদের সঙ্গে নিয়ে কেক কাটেন কিআ সম্পাদক আনিসুল হক ও অতিথিরা। গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সিএ ভবন মিলনায়তনে। ছবি: প্রথম আলো

১০ তলার বড় হলঘরটি কানায় কানায় ঠাসা কিশোর–কিশোরীতে। মূল মঞ্চে দাঁড়ানো কিশোরীদের হাতে একটি করে মোমবাতি। আর কিশোরদের হাতে গিটার। সবাই একসুরে গেয়ে উঠল রবীন্দ্রসংগীত ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্যসুন্দর’। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে কিশোর আলোর (কিআ) ষষ্ঠ জন্মদিনের অনুষ্ঠানটা শুরু হলো এভাবেই।

ছয় পেরিয়ে সাত বছরে পদার্পণ উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে দেশের বিভিন্ন স্কুল ও কলেজে পড়ুয়া কিশোর আলোর পাঠক ও স্বেচ্ছাসেবকেরা। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের সিএ ভবনের মিলনায়তনে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে জন্মদিনের অনুষ্ঠান শুরু হয়। নাচ, কাব্যনাট্য, গান, কুইজসহ নানা আয়োজনে কিশোর–কিশোরীরা মেতে ছিল সন্ধ্যা পর্যন্ত।

অনুষ্ঠানের শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন কিশোর আলোর সম্পাদক আনিসুল হক। অনুষ্ঠানে সহযোগিতায় ছিল এক্সিম ব্যাংক লিমিটেড। ব্যাংকটির হেড অব করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড ব্র্যান্ডিং সঞ্জীব চ্যাটার্জি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমরা স্মার্টফোন কম ব্যবহার করবে। বই পড়ায় বেশি মন দেবে। কিশোর আলোর পথচলার শুরু থেকে এক্সিম ব্যাংক পাশে ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে।’

প্রথম আলোর ফিচার সম্পাদক সুমনা শারমীন বলেন, ‘মানুষ হওয়ার জন্য কিশোর আলো সহযোগিতা করে। নানা রকম বুদ্ধি দেয়, নানাভাবে ভাবতে শেখায়।’

চলচ্চিত্রনির্মাতা রেদওয়ান রনি বলেন, ‘আমার আফসোস, কেন আমি কিশোর বয়সে এমন একটি ম্যাগাজিন পেলাম না। পেলে হয়তো আমার এখনকার জীবনটা অন্য রকম হতো।’

২০১৩ সালের ১ অক্টোবর থেকে নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে শিশু–কিশোরদের প্রিয় এই মাসিক সাময়িকী। এতে কেউ গল্প, ছড়া, ফিচার লেখে; কেউ আঁকে ছবি, কার্টুন। গান, নাচ, অভিনয়সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক আয়োজনেও আছে কিশোর আলোর পাঠকদের নিয়মিত অংশগ্রহণ। ষষ্ঠ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রতিবারের মতো এবারও দেশের তিনটি জেলায় হবে ‘লাভেলো–কিআনন্দ উৎসব’। অক্টোবরের ১১, ১৮ ও ২৫ তারিখে যথাক্রমে রংপুর, চট্টগ্রাম ও ঢাকায় আয়োজন করা হবে শিশু–কিশোরদের জন্য দেশের সবচেয়ে বড় এই উৎসব। আজ শুরু হচ্ছে ঢাকা পর্বের নিবন্ধন। 

গতকাল ​জন্মদিনের অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কিশোর আলোর স্বেচ্ছাসেবক শেখ লোকমান গালিব ও তাসফিয়া আফরা। অনুষ্ঠানে বলা হয়, সারা দেশে ছড়িয়ে আছে কিশোর আলোর ৫৫টি বুক ক্লাব, যেখানে এর পাঠকেরা বই আদান–প্রদান করে, পড়ে ও লেখে। এ ছাড়া কিশোর আলোর ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি ক্লাবের ছেলেমেয়েরা নিজেরাই বানিয়ে ফেলছে দারুণ সব স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র, তুলছে চমৎকার সব ছবি। কিশোর আলো তাই হয়ে উঠেছে কিশোর-কিশোরীদের এক পরিবার, অন্য রকম এক প্ল্যাটফর্ম। 

দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ৬০০ শিক্ষার্থী গতকালের অনুষ্ঠানে অংশ নেয়। কেউ কেউ অনুষ্ঠানে তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে করে এনেছিল। তেমনই একজন অভিভাবক রেখা আক্তার। তাঁর মেয়ে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে পড়ে। রেখা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার মেয়ে ক্লাস সেভেন থেকে ​নিয়মিত কিশোর আলো পড়ে। এটি কিশোর–কিশোরীদের জন্য উপযোগী একটি ম্যাগাজিন। কিশোর-কিশোরীদের জন্য এমন আয়োজন আরও হওয়া উচিত।’

জন্মদিন উপলক্ষে ঝলমলে এই আয়োজনে আরও ছিল রবীন্দ্রসংগীত, আধুনিক গান, স্ট্যান্ডআপ কমেডি, বিটবক্স পারফরম্যান্স, কোরিয়ান ও ইংলিশ ফিউশন পরিবেশনা এবং কথোপকথন পর্ব। এসব পরিবেশনায় ছিল কিশোর আলোর পাঠক ও স্বেচ্ছাসেবকেরা​। অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে একটি বড় কেক কাটা হয়।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলো বন্ধুসভার সভাপতি সাইদুজ্জামান রওশন, মহাব্যবস্থাপক (বিজ্ঞাপন) রশিদুর রহমান, স্পেশাল অ্যাফেয়ার্স কো-অর্ডিনেটর ফিরোজ জামান চৌধুরী, কিশোর আলোর প্রতিষ্ঠাকালীন নির্বাহী সম্পাদক সিমু নাসের, জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক মহিতুল আলম, সহসম্পাদক আদনান মুকিত ও জ্যেষ্ঠ নির্বাহী (মার্কেটিং অ্যান্ড অপারেশন) শাহাদাত ফয়েজ। অনুষ্ঠান শেষ হয় কিশোর আলোর স্বেচ্ছাসেবকদের তিনটি লোকসংগীত ও ব্যান্ড দল আফটারম্যাথের পাঁচটি গান পরিবেশনার মধ্য দিয়ে। এই আয়োজনে বিনা মূল্যে আইসক্রিম দেয় লাভেলো।