দ্বীপ বিভীষিকা

অ্যাডভেঞ্চারের দিকে অনন্তর ঝোঁক চিরদিনের। বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়াতে তার খুব ভালো লাগে। একটা ট্যানারি আর কয়েকটা ব্রিকফিল্ড থেকে যে টাকা আসে, তা দুহাতে ওড়ালেও শেষ হয় না। বাবা-মা নেই, বিয়ে করেনি এখনো, ঝামেলামুক্ত জীবন তার। তাই সুযোগ পেলেই সে বেরিয়ে পড়ে নতুন নতুন দেশ দেখতে। ভ্রমণে ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে পড়লে তার আরও ভালো লাগে। আর ভালো লাগে বিচিত্র অভিজ্ঞতাসম্পন্ন মানুষের সঙ্গে আড্ডা দিতে। মোটকথা, অ্যাডভেঞ্চারের গন্ধ পেলেই অনন্ত সেখানে আছে।

এবার সে বেরিয়েছে গ্রিসের উদ্দেশে। সপ্তাহ খানেক হলো ভূমধ্যসাগর ধরে চলেছে তাদের জাহাজ। গত কয়েক দিনে অনন্ত বেশ আলাপ জমিয়েছে জাহাজের সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে।

একদিন তিনি বললেন, ‘মি. অনন্ত, আপনি তো অ্যাডভেঞ্চার খুব পছন্দ করেন, ক্যাপ্টেনের কাছে কোনো গল্প শুনেছেন?’

‘না তো, কী গল্প?’

‘গল্প বলেননি এখনো? কেউ তাঁর মতো গল্প বলতে পারে না। অনেক অ্যাডভেঞ্চার করেছেন তিনি, অনেক বিপজ্জনক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন। তবে ইদানীং দশ ভাগ অ্যাডভেঞ্চারের সঙ্গে নব্বই ভাগ গুল মিশিয়ে চমত্কার আষাঢ়ে গল্প চালিয়ে যাচ্ছেন।’

‘এই ধরনের গল্প শুনতে আমার খুব ভালো লাগে। তাঁকে কীভাবে রাজি করানো যায় বলুন তো?’

‘কোনো কষ্ট করতে হবে না। গল্প বলার জন্য ক্যাপ্টেন এক পায়ে খাড়া। একটু চেপে ধরলেই কাজ হবে।’

প্রতিদিন বিকেলে যাত্রীদের সঙ্গে দেখা করেন ক্যাপ্টেন। পোশাক-আশাক সাদাসিধে হলেও চলাফেরা, আচার-ব্যবহারে দারুণ অভিজাত একটা ভাব রয়েছে তাঁর। পরদিন বিকেলে ডেকের ওপর বসে আছে অনন্ত। একটু পর এসে পাশের ফাঁকা চেয়ারটায় হাত-পা ছড়িয়ে বসলেন ক্যাপ্টেন।

‘ক্যাপ্টেন, ওটা কী?’ দূর দিগন্তে আবছা স্থলরেখার দিকে আঙুল তুলে দেখাল সে।

‘একই প্রশ্নের জবাব আর কতজনকে দেব,’ কপট রাগের ভান করলেন ক্যাপ্টেন। ‘ওটা গ্রিসের দ্বীপপুঞ্জ। আমরা যে দ্বীপের পাশ দিয়ে যাব সেটার নাম জানেট।‘

‘গ্রিসের চেহারাই অন্য রকম’, বলল অনন্ত। ‘সত্যিই এটা বীর আর দানবদের উপযুক্ত জায়গা। একমাত্র এখানেই বাস করতে পারে হারকিউলিস, পার্সিউস, গর্গন, হাইড্রা।’

ঠান্ডা চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে প্রশ্ন করলেন ক্যাপ্টেন, ‘আপনি তো বাংলাদেশি, গ্রিক মিথলজি পড়েছেন কখনো?’

‘পড়েছি। পুরোটাই।’

‘হুঁঁ। তা কেমন লেগেছে?’

‘মজার। রূপকথার মতো।’

‘রূপকথাকে হেসে উড়িয়ে দিতে পারি না আমি’, বললেন তিনি। ‘সব রূপকথারই সম্ভবত কোনো না কোনো ভিত্তি আছে। আমি একটা ঘটনা জানি...কিন্তু...থাক, সে অনেক কথা।’

অনন্ত বুঝতে পারল ফাঁদে পা দিয়েছেন ক্যাপ্টেন। সে পীড়াপীড়ি শুরু করল। খুব বেশি করতে হলো না। ক্যাপ্টেন গল্প শুরু করলেন।

৩০ বছর আগের কথা। আমি তখন এই কোম্পানিরই হ্যাসলার নামের এক জাহাজের ফোর্থ অফিসার ছিলাম। এপ্রিল মাস। একদল যাত্রী নিয়ে এই এলাকায় প্রমোদ ভ্রমণে এসেছি আমরা। কুয়াশাচ্ছন্ন এক রাতে আমাদের ক্যাপ্টেন দিক ভুল করে জাহাজ তুলে দিল জানেট দ্বীপের তীরে।

ভীষণ হইচই। সবাই ভাবল, জাহাজ ডুবে যাবে। তবে অতটা খারাপ অবস্থা হয়নি। সকালে দেখা গেল, পাথরে লেগে সামান্য চিড়ে গেছে জাহাজের তলা। পানি ঢুকছে, তবে ভয়ের কোনো কারণ নেই। বয়লার কয়টা খুলে মেরামত করলেই আবার চালানো যাবে জাহাজটা। আমাদের ঘাড়ে পড়ল মেরামতের দায়িত্ব।

যাত্রীদের পাঠিয়ে দেওয়া হলো স্থলপথে। আমরা, অফিসাররা থেকে গেলাম জানেটতে। জঘন্য দ্বীপ। ডিউটির পর হয় পাখি শিকার, নয়তো নৌকায় দ্বীপের চারপাশে ঘোরা, এই হলো কাজ। এভাবেই দিন কাটতে লাগল। একদিন আমাদের সেকেন্ড অফিসার বলল, দ্বীপের পুব দিকে সে একটা গ্রাম দেখতে পেয়েছে। সেই গ্রামে একটা পাহাড়ে গুহা আছে, গ্রামবাসীরা সেখানে যেতে নিষেধ করেছে। তবে এখানকার ভাষা ভালো জানা না থাকায় ব্যাপারটা পুরোপুরি বুঝতে পারেনি।

গুহাটার প্রতি আগ্রহ হলো। জাহাজের ইঞ্জিনিয়ার ট্র্যাভার্স আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। সে-ও খুব উত্সাহ দেখাল। স্থানীয় ভাষাটা জানে ট্র্যাভার্স, ফলে সে সঙ্গে থাকলে অনেক সুবিধে। এক ছুটির দিনে বেরিয়ে পড়লাম আমরা।

গ্রামটায় পৌঁছাতে বেশ সময় লাগল। পাহাড়ের চূড়ায় উঠতেই নিচের উপত্যকায় কিছু কুঁড়েঘর দেখতে পেলাম। গ্রামটার পেছনে আরেকটা পাহাড়। সেটার গায়ে বড় বড় ফাটল, মনে হয় ভূমিকম্পে ফেটে গেছে। ফাটলগুলোর মাঝখানে একটা গিরিসংকট। পাহাড়টার গায়ে এখানে-সেখানে ছায়া পড়েছে। ছায়াগুলো সম্ভবত গুহার প্রবেশপথ।

ট্র্যাভার্সকে বললাম, ‘ওই পাহাড়েই সম্ভবত গুহাটা আছে। কিন্তু কোন গুহা তা চিনব কীভাবে?’

এ সময় একজন গ্রামবাসী উঠে এল চূড়ায়। আমাদের দিকে অবাক চোখে তাকাল সে। কারণ, এই দ্বীপে বাইরের লোক আসে না বললেই চলে। স্থানীয় ভাষায় কী যেন বলল সে। এক বর্ণও বুঝলাম না। ট্র্যার্ভাস কিন্তু লোকটার সঙ্গে দিব্যি আলাপ জুড়ে দিল। পরে ট্র্যাভার্স বুঝিয়ে দিল আলোচনার বিষয়বস্তু।

ট্র্যাভার্সের এক প্রশ্নের জবাবে লোকটা বলল, ‘ও, আপনারা ভুতুড়ে গুহা খুঁজছেন? ওই গিরিসংকট ধরে গেলেই পাবেন।’

‘ভুতুড়ে গুহা নাম হলো কেন?’

‘ওখানে গেলে কেউ আর জীবন্ত ফিরে আসে না। অবশ্য ফিরে আসে না বলাটাও ঠিক নয়। কারণ, মৃত অবস্থায়ও তাদের আর পাওয়া যায় না। আসলে ওখানে গেলে মানুষ অদৃশ্য হয়ে যায়।’

‘কেন? কী আছে ওখানে?’

‘তা জানি না। আজ পর্যন্ত কেউ ফিরে এসে জানাতে পারেনি। অনেক লোক এই রহস্যের সন্ধানে গেছে, তাদের কেউই আর ফেরেনি। একবার নাকি একদল সৈন্য ডাকাত ধরার জন্য ওখানে ঢুকেছিল, তাদের একজনকেও আর দেখা যায়নি। তারপর থেকে গুহাটার বদনাম হয়ে গেছে। ওদিকে আর কেউ যায় না। মাঝেমধ্যে কোনো যুবক মাথা গরম করে ভুতুড়ে গুহার দিকে গেছে। আর ফেরেনি।’

‘বুঝলাম। কিন্তু কারণটা কী?’

‘জানি না। আমি কিছুদূর গিয়েছিলাম। একটা উপত্যকা, তাতে বড় বড় কালো পাথর ছড়ানো। আর কিছু চোখে পড়েনি।’

‘যত সব আজেবাজে কথা!’ মুখ বেঁকিয়ে আমার দিকে ঘুরল ট্র্যাভার্স। ‘চলো, আর দেরি করে কোনো লাভ নেই।’

পাহাড়ের পাদদেশে গ্রাম। সেখানে এক বুড়োর সঙ্গে দেখা হলো। ট্র্যাভার্স ভুতুড়ে গুহার কথা জিজ্ঞেস করতেই ফ্যাকাশে হয়ে গেল বুড়ো।

‘ভুতুড়ে গুহা! আপনারা সেখানে যাচ্ছেন নাকি?’ কথা বলতে গিয়ে কেঁপে গেল বুড়োর গলা।

‘তাই তো মনে হচ্ছে’, রসিকতার সুরে বলল ট্র্যাভার্স। ‘আপনি পথ দেখিয়ে না দিলেও আমরা ঠিকই খুঁজে বের করব।’

ইতিমধ্যে আমাদের অ্যাডভেঞ্চারের কথা প্রচার হয়ে গেছে। গ্রামবাসী সবাই ওখানে যেতে নিষেধ করল, কিন্তু আমরা অটল। ধীরে ধীরে এগোলাম গিরিসংকটের দিকে। পেছন পেছন খানিকটা এসে ফিরে গেল গ্রামবাসী। গিরিসংকটে ঢুকলাম আমি আর ট্র্যাভার্স। দুপাশে প্রাচীরের মতো উঠে গেছে দুর্গম পাহাড়। ঠান্ডা, স্যাঁতসেঁতে বাতাস বইছে। সূর্য ঢলে পড়েছে পশ্চিম দিকে, ফলে পর্যাপ্ত আলো নেই এখানে। পাহাড়ঘেরা একটা উপত্যকায় এসে পৌঁছালাম আমরা। জমিটা সমতল। শুধু এখানে-সেখানে ছড়ানো বড় বড় সব কালো পাথর। পাথরগুলো মোটামুটি একই মাপের। উপত্যকার একদিকে মুখ ব্যাদান করে আছে একটা গুহা। সেখানে পাথরের সংখ্যা বেশি।

সন্ধ্যার ম্লান আলোয় ভয়ংকর দেখাচ্ছে গুহামুখটা। শীর্ণ একটা পানির ধারা বয়ে যাচ্ছে পাথরগুলোর ফাঁকে ফাঁকে। জায়গায় জায়গায় পানি জমে আছে। কোনো পাখি চোখে পড়ল না। কেমন অশুভ এক নীরবতায় যেন থমথম করছে চারদিক। পথটা ক্রমশ সংকীর্ণ হয়ে আসায় আমি আগে, পেছনে পেছনে আসছে ট্র্যাভার্স। আস্তে আস্তে আমার সাহস কমতে লাগল। ভয়ের একটা ঠান্ডা স্রোত অনুভব করলাম শিরদাঁড়ায়। কাঁটা দিয়ে উঠল সারা শরীরে। ট্র্যাভার্সের প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য পেছন ফিরলাম। একটুও ভয় পায়নি সে। কৌতুক আর কৌতূহল তার দুচোখে।

‘থামলে কেন? চলো, চলো। ফিরে গিয়ে দারুণ গল্প ফাঁদা যাবে।’

তাকে বলতে লজ্জা করল যে গুহাটার দিকে যেতে ভয় লাগছে আমার। ভিতু আমি কোনো দিনই ছিলাম না। তবে সেদিন প্রথম বুঝলাম, ভয় কাকে বলে। কোনো যুক্তিবুদ্ধিই যেন আর খাটছে না, অসাড় হয়ে আসছে হাত-পা। মাথায় শুধু একটাই চিন্তা, জায়গাটা ছেড়ে এখনই যদি পালাতে পারতাম! কিন্তু বন্ধুর উত্সাহের বহর দেখে কিছু বলতে পারলাম না। তবু কিছুটা দেরি করিয়ে দেওয়ার জন্য বললাম, ‘এই পাথরগুলো কেমন যেন অন্য ধরনের, আশপাশের পাহাড়ে কিন্তু এ ধরনের পাথর নেই।’

‘ওসব বাদ দাও তো’, বলল ট্র্যাভার্স। ‘এখন পাথর দেখার সময় নেই। আগে গুহাটা দেখে আসি। অন্ধকার নেমে আসছে।’

সে আমার পাশ কাটিয়ে সামনে গেল। অনিচ্ছা সত্ত্বেও চললাম তার পিছু পিছু। এবার একটা খোলা জায়গায় পৌঁছালাম আমরা। পেছনে ফিরেছি কেবল, হঠাত্ চিত্কার করে উঠল ট্র্যাভার্স। ভয়, বিস্ময়, যন্ত্রণা মেশানো অদ্ভুত সেই চিত্কার।

‘দেখো, ব্র্যান্ডার! দেখো!’

ঝট করে তাকালাম তার দিকে। ট্র্যাভার্স নেই!

মাত্র এক মুহূর্তের জন্য চোখ ফিরিয়েছিলাম। এর মধ্যে গেল কোথায় ও? আমার পাশের কালো পাথরটার ওপর ভর দিয়ে ওপাশে উঁকি মারলাম, যদি ট্র্যাভার্সকে দেখতে পাই। হাতের নিচে পাথরটা গরম! থরথর করে কেঁপে উঠল সারা শরীর, কেন যে অত ভয় পেলাম, জানি না। পাথরগুলোর মাঝে দৌড়াদৌড়ি করে চেঁচিয়ে ডাকলাম ট্র্যাভার্সকে। পাহাড়ে প্রতিধ্বনিত হতে লাগল আমার ডাক। কোনো সাড়া নেই! অজানা আতঙ্কে এত দিনের বন্ধুকে হারিয়ে তালগোল পাকিয়ে গেল মাথা। হঠাত্ চোখ পড়ল একটা জিনিসের ওপর।

আমার পায়ের কাছে জমিটা সামান্য ঢালু, তাতে পানি জমে আছে। ইঞ্চি দুইয়ের বেশি গভীরতা হবে না। সেই পানিতে প্রতিফলিত হয়েছে গুহার মুখ। রক্ত হিম হয়ে গেল আমার! গুহামুখের ঠিক ওপরে একটা জিনিস পড়ে আছে। তারই ছায়া প্রতিফলিত হয়েছে পানিতে। ছাগলের চামড়ার একটা বহু পুরোনো থলি। সেই থলি ফেটে বেরিয়ে এসেছে একটা মাথা। মাথাটা মানুষের, গলার কাছ থেকে কাটা। সেখানে দগদগ করছে ঘা। একটি মেয়ের মাথা, অপরূপ সুন্দরী। এ রকম সৌন্দর্যের কথা রূপকথায় শোনা যায়, দেখা যায় বিখ্যাত শিল্পীর ছবিতে। অথচ তার মুখের ভাব ভীষণ যন্ত্রণাময়। যুগ যুগ ধরে যেন সে ভোগ করছে নরকযন্ত্রণা। কপালের চামড়া কুঞ্চিত, রক্তশূন্য, ফ্যাকাশে চাপা ঠোঁট। চোখজোড়া জ্বলছে ধকধক করে। মাথায় চুলের বদলে ফণা তুলে আছে অসংখ্য বিষধর সাপ, যেন এখনই ছোবল মারবে।

আমার রক্ত চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে গেল। অনুভব করলাম মৃত্যুর হিমশীতল স্পর্শ। মনে হলো, ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে তাকিয়ে আছি সেই ভয়ংকর মুখের প্রতিফলনের দিকে। মেডুসা! তিন গর্গনের মধ্যে সবচেয়ে

রূপসী। সবচেয়ে ভয়ানক। অর্ধেক নারী, অর্ধেক ইগল। পৃথিবীর সব প্রাণীর মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর। এর চোখে চোখ পড়লেই পাথর হয়ে যায় মানুষ। গ্রিক বীর পার্সিউস একে হত্যা করেছিল। 

বুঝতে পারলাম, পেছন ফিরে তাকালেই আমার অবস্থাও হবে ট্র্যাভার্সের মতো। অথচ এমনই আকর্ষণ সেই মুখের, যে বারবার মনে হলো ঘুরে ভালো করে দেখি। সমস্ত ইচ্ছাশক্তি একত্রিত করে মুখ ফিরিয়ে রাখলাম। তারপর কখন জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়েছি, জানি না।

যখন জ্ঞান ফিরল তখন গভীর রাত, ঝকঝকে আকাশে ভাসছে চাঁদের ভেলা। চারদিক ঝলমল করছে জ্যোত্স্নায়। জলাশয়ের পাশে পড়ে আছি আমি। ধীরে ধীরে সব মনে পড়ল। পেছন ফিরে তাকানো চলবে না। কারণ, এখনো অপেক্ষা করছে সেই দানবী। চিরদিন অপেক্ষা করবে হতভাগ্যদের জন্য। সারা উপত্যকায় ছড়ানো কালো পাথরগুলো তারই প্রমাণ। ধীরে ধীরে উঠে পড়লাম। ফেরার সময় একটু দাঁড়ালাম সেই পাথরটার পাশে, যেটা একদিন ট্র্যাভার্স নামে জন্মগ্রহণ করেছিল মানুষের সংসারে।

হাত রাখলাম পাথরটার ওপর। ঠান্ডা হয়ে গেছে!

চুপ করলেন ক্যাপ্টেন ব্র্যান্ডার। কিছু একটা বলতে গিয়ে থেমে গেল অনন্ত। জাহাজটা তখন এগিয়ে চলেছে জানেট দ্বীপের তীর ঘেঁষে।

বিদেশি গল্প অবলম্বনে

অলংকরণ: বিপ্লব চক্রবর্তী