তোমাদের জন্য ছবি

ফিলো ফার্নওয়ার্সথকে চেনো? কৈশোরে বয়স যখন মাত্র ১৪ বছর, সে সময় তাঁর মাথায় ঢুকেছিল টেলিভিশন আবিষ্কারের পোকা। তারপর রীতিমতো খাতার পাতায় টেলিভিশনের একটা খসড়া এঁকে তিনি শিক্ষককে দেখিয়েছিলেন! আরেকজনের গল্প বলি। জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে তো সবারই পরিচয় আছে। তোমাদের প্রিয় এই লেখক তাঁর জীবনের প্রথম লেখাটি লিখেছিলেন কৈশোরে, প্রিয় কুকুরের স্মৃতি নিয়ে লেখা, সেই লেখার নাম ‘বেঙ্গল টাইগার’।

কৈশোর সময়টাই আসলে এমন, নতুন কিছু করার, জানার, শেখার। বিজ্ঞানের ভাষায়, মস্তিষ্কের ধূসর কোষগুলোর গঠন পুরোদমে ঘটে কৈশোরের বছরগুলোতে। তাই ভবিষ্যতে কে কীভাবে ভাববে, কাজ করবে তার ভিতটাও গড়া হয়ে যায় কৈশোরেই। সে জন্যই এ সময়টা খুব মজার, তুমি তোমার নিজেকে গড়ে নেওয়ার সবচেয়ে ভালো সুযোগটা পাবে এই কটা বছরে। আর কে না জানে, অসাধারণ একটা চলচ্চিত্র আনন্দের পাশাপাশি গড়ে দিতে শেখায় জীবনের গভীর মূল্যবোধ। তাই ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট এমন ৫০টি চলচ্চিত্রের একটা তালিকা করেছে। তাদের মতে, ১৪ বছর পেরোনোর আগেই দেখা উচিত এই চলচ্চিত্রগুলো।

৭০ জনের বেশি বিশেষজ্ঞ মিলে তৈরি করেছেন তালিকাটি। যাঁদের মধ্যে আছেন শিক্ষক, লেখক, সমালোচক, চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজকও। ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট মনে করে, এই চলচ্চিত্রগুলো ছেলেমেয়েদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই অভিভাবক, শিক্ষকদের প্রতি তাদের অনুরোধ, অন্য শিক্ষা উপকরণের মতো এই চলচ্চিত্রগুলোকেও যেন গুরুত্ব দেন তাঁরা। সেই তালিকায় থাকা কিছু চলচ্চিত্রের কথা বলব আজ।

ইতালির রোম শহরে স্ত্রী আর দুই সন্তানকে নিয়ে থাকেন বেকার অ্যান্টোনিও রিচি। অনেক কাঠখড় পোড়ানোর পর শহরের মোড়ে মোড়ে পোস্টার সাঁটানোর একটা চাকরি জোটে। কিন্তু শর্ত একটাই, থাকতে হবে নিজের সাইকেল। সেটাও জোগাড় হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্য, কাজের প্রথম দিনই সাইকেলটা চুরি করে নিয়ে যায় এক ছিঁচকে চোর। চুরি যাওয়া সাইকেল খুঁজতে রাস্তায় ঘুরে বেড়ান বাবা আর ছেলে। সাইকেলটা কি পাওয়া যাবে? জানতে হলে দেখতে হবে লুইজি বারতোলিনির উপন্যাস থেকে ভিত্তোরিও দে সিকার পরিচালনায় ইতালির চলচ্চিত্র বাইসাইকেল থিভস।

এমন আরেকটি মন ছুঁয়ে যাওয়া চলচ্চিত্র হচ্ছে পথের পাঁচালী। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের একই নামের উপন্যাস থেকে চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেন সত্যজিত্ রায়। অপু আর দুর্গা, দুই ভাইবোনের মধ্যে খুব ভাব। বাড়িতে প্রতিদিনই অভাব লেগে আছে, তাতে কী? তারা দুজন চুপচাপ গাছের নিচে বসে সামনের আকাশ দেখে, কখনো গ্রামের মাটির পথে ছুটে বেড়ায় ফেরিওয়ালার পিছু পিছু। গ্রামে যাত্রাপালা হলে সেখানেও পাওয়া যায় দুই ভাইবোনকে। সন্ধ্যাবেলা দূরের ট্রেনের বাঁশি শুনে ঘর পালিয়ে সেই ট্রেনও একদিন দেখে আসে দুজন। মজার একটা বিষয় জানো? জনপ্রিয় পরিচালক সত্যজিত্ রায় পথের পাঁচালী নির্মাণের অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন বাইসাইকেল থিভস দেখে।

ব্যারি হাইনজের অসাধারণ গল্প থেকে কেন লোয়াচ নির্মাণ করেছিলেন চলচ্চিত্র কেস। স্কুল আর বাড়ি, সবখানেই অত্যাচারিত ১৫ বছরের বিলি ক্যাসপার। ঘরে সত্ভাই জাডের খবরদারি আর ক্লাসরুমে সহপাঠীদের অপমান, কোথাও এতটুকু শান্তিতে থাকার জো নেই তার। এ কারণে পড়াশোনাতেও মন নেই। এভাবেই হয়তো দিন কেটে যেত, কিন্তু পাশের খামারে একদিন একটা পাখি খুঁজে পেল বিলি। তারপর সেই পাখিটাই আস্তে আস্তে হয়ে উঠল বিলির সবচেয়ে বড় বন্ধু। আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়ে বিলিও আগের চেয়ে চটপটে হয়ে উঠল। একদিন সত্ভাই জাড তাকে টাকা দিল রেসের মাঠে বাজি ধরার জন্য। তারপরই কাহিনিতে একটা মোচড়। সেই অংশটা জানতে হলে দেখতে হবে পুরো ছবি।

এবার বলি অন্য ধরনের একটা চলচ্চিত্রের গল্প। স্কুল থেকে ফেরার পথে বা ছুটির দিনে, বন্ধুর কাছ থেকে পড়া বুঝে নিতে অথবা নিছক বেড়াতে তো সবাই যায়। কিন্তু কাণ্ড দেখো, আহমেদ তার বন্ধুর বাড়িটাই যে চেনে না! কিন্তু যেভাবে হোক, বন্ধুর বাড়ি তো খুঁজে বের করতেই হবে, তার হোমওয়ার্কের খাতাটাই যে রয়ে গেছে আহমেদের কাছে। আগামীকাল স্কুলে এই খাতা না দেখালে স্কুল থেকে বহিষ্কৃত হয়ে যেতে পারে আহমেদের বন্ধু। তাই বন্ধুর খাতাটা হাতে নিয়ে পথে নেমে পড়ে আহমেদ, বন্ধুর বাড়ির খোঁজে। আহমেদ কি খুঁজে বের করতে পারল বন্ধুর বাড়িটা? সেটা জানতে দেখো আব্বাস কিয়ারোস্তামির পরিচালিত চলচ্চিত্র হোয়্যার ইজ দ্য ফ্রেন্ডস হোম?

স্টিভেন স্পিলবার্গের ইটি দ্য এক্সট্রা টেরেস্ট্রিয়াল চলচ্চিত্রটাও বন্ধুত্বের গল্প নিয়ে। তবে সেটা মানুষের সঙ্গে ভিনগ্রহের এক আশ্চর্য প্রাণীর। ক্যালিফোর্নিয়ায় মা আর ছোট দুই ভাইবোনের সঙ্গে থাকে ১০ বছরের এলিয়ট। খেলার ফাঁকে পিজা আনতে গিয়ে তার দেখা হয় ভিনগ্রহের ইটির সঙ্গে। ইটি এক দুর্ঘটনায় আটকা পড়ে গেছে পৃথিবীতে। অনেক অমিল, তারপরও ভীষণ বন্ধুত্ব হয়ে যায় এই দুজনের।

ফ্রান্সের কিশোর অ্যান্টোইনের দুরন্ত কৈশোরের ভাগ নিজে পেতে চাইলে দেখতে পারো দ্য ফোর হানড্রেড ব্লোজ। সুইডেনের চলচ্চিত্র মাই লাইফ অ্যাজ আ ডগ দেখলে বুঝতে পারবে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া এক কিশোর কীভাবে নিজের জীবনে ঘুরে দাঁড়ায়। শেষ যে ছবিটার কথা বলব তার নাম দ্য রেলওয়ে চিলড্রেন। তিন ভাইবোন লন্ডন শহরের আরাম-আয়েশ ছেড়ে তাদের মায়ের সঙ্গে থাকতে আসে গ্রামে। সেখানে তাদের মজার সব অ্যাডভেঞ্চার আর দুরন্তপনা নিয়ে এগিয়েছে ছবির গল্প।

যারা এখনো কৈশোরের মজার সীমানায় ঘুরে বেড়াচ্ছ, তাদের কাছে এই ছবিগুলো ভালো লাগবেই! আর শুধু ভালো লাগাই নয়, তার সঙ্গে সঙ্গে যদি কিছু শেখাও যায়, তাহলে মন্দ কী বলো তো?

ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউটের করা তালিকার প্রথম ১০টি ছবি

বাইসাইকেল থিভস 

ই টি দ্য এক্সট্রা টেরেস্ট্রিয়াল

কেস

দ্য নাইট অব হান্টার

দ্য ফোর হানড্রেড ব্লোজ

শো মি লাভ

স্পিরিটেড অ্যাওয়ে

টয় স্টোরি

হোয়ার ইজ দ্য ফ্রেন্ডস হোম?

দ্য উইজার্ড অব অজ

নাজিয়া শারমিন

উইকিপিডিয়া, ইডব্লিউ, কমনসেন্স মিডিয়া অবলম্বনে