কমিকস চরিত্রের বিস্ময়কর মিল!

তোমরা তো কমিকস পড়তে ভালোবাসো। সকালে সুপারম্যান তো সন্ধ্যায় ব্যাটম্যান হতে চাও মন থেকেই। মাঝে মাঝে ভাবো, ইশ, কত বছর আগে যাত্রা শুরু করেছিল এই কমিক চরিত্রগুলো, অথচ এখনও কী দারুণ আকর্ষণ তাদের! নতুন কোনো সুপারহিরো বানাতে চাইলেও আমাদের মধ্যে রয়ে যায় সেই সুপারম্যান-ব্যাটম্যানের প্রভাব। মজার ব্যাপার হচ্ছে জনপ্রিয় এই কমিকস চরিত্রগুলোও কিন্তু প্রভাবিত হয়েছে আগের কোনো কমিকস চরিত্র দ্বারা। চলো দেখি তেমন কিছু কমিক চরিত্রের কথা।

দ্য এক্স-মেন

তারা সবাই বিভিন্ন সুপার পাওয়ারের অধিকারী। আর এই সুপার পাওয়ারের জন্যই পৃথিবীর মানুষ তাদের ভয় পায়,  ঘৃণাও করে কেউ কেউ। কিন্তু এই সুপার পাওয়ারধারীদের একত্র করে হুইলচেয়ারে বসা একটা মানুষ, যার উদ্দেশ্য তাদের মাধ্যমে পৃথিবীকে রক্ষা করা। এটাই তো মার্ভেল কমিকসের এক্স-মেন সিরিজের মোদ্দাকথা, তাই না?

কিন্তু আমি যদি বলি, মার্ভেল কমিকসের মিউট্যান্টদের কথা বলছি না, তাহলে কি চোখ পাকাবে?

আচ্ছা, তাহলে শোনো অন্য এক মিউট্যান্ট বাহিনীর গল্প, যাদের প্রকাশ হয় পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় মিউট্যান্ট বাহিনী এক্স-মেন প্রকাশের মাস তিনেক আগেই।

১৯৬৩ সালের জুন মাসে প্রকাশ হওয়া এই সুপার পাওয়ারওয়ালা বাহিনীর নাম ডুম পেট্রোল। মার্ভেল কমিকসের সব থেকে বড় প্রতিদ্বন্দ্ব্বী কমিকস পরিবার ডিসি কমিকসের হাত ধরেই এই ডুম পেট্রোলারদের জন্ম।

ডুম পেট্রোলাররা একসময় সাধারণ মানুষের মতোই ছিল, কিন্তু একবার একটা দুর্ঘটনা তাদের করে দেয় কদাকার। তবে তার সঙ্গে কিছু সুপার পাওয়ারও ঢুকে যায় তাদের মধ্যে। পৃথিবীবাসী তাদের পরিহার করতে শুরু করে শুধু তাদের কুিসত চেহারার জন্য। এরপর তারা ড. কউল্ডারের মাধ্যমে একত্রিত হয়। যিনি মনে করেন, তাদের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে এই সাধারণ জনগণকে রক্ষা করা যাবে।

আর তোমরা নিশ্চয় জানো, সবার প্রিয় এক্স-মেনের  কাহিনি অনেকটা এ রকমই।

সুপারম্যান

সুপারম্যান! শুনেই তোমরা হয়তো চমকে উঠবে, আসলেই! অন্যতম জনপ্রিয় কমিকস চরিত্র তো বটেই, সুপারহিরোদের মধ্যে সব থেকে প্রথমে তো সুপারম্যানেরই আবির্ভাব ঘটেছিল। তবে সে কীভাবে অন্য কোনো কিছু দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে? তাই ভাবছ তো?

আসলে সুপারম্যান হয়তো প্রথম সুপারহিরো, কিন্তু কোনোভাবেই সুপার পাওয়ারওয়ালা প্রথম চরিত্র নয়।

হাইস্কুলের ছাত্র জেরি সাইজেল এবং জো সাউস্টে সুপারম্যানকে তৈরি করেছিলেন ১৯৩৩ সালে। একসময় তাঁরা তাঁদের সুপারম্যানকে বিক্রি করে দেন ডিসি কমিকসের কাছে, যাদের হাত ধরে ১৯৩৮ সালে প্রথম আবির্ভাব ঘটে এই সুপারহিরোর।

এদিকে আমেরিকান লেখক ফিলিপ উইলির লেখা গ্ল্যাডিয়েটর নামের একটা উপন্যাস প্রকাশিত হয় ১৯৩০ সালে, সুপারম্যান তৈরির তিন বছর আগে। এই গ্ল্যাডিয়েটর-এর নায়ক হুগো ড্যানারের ছিল সুপার পাওয়ার। তার বাবা একটা গোপন ফর্মুলা আবিষ্কার করেন এবং সেটা ইঞ্জেক্ট করেন ছেলের শরীরে। যার ফলে হুগো পায় বুলেটপ্রুফ চামড়া, এক লাফে উঁচু বিল্ডিং পেরোনোর মতো অতিমানবীয় শক্তি। হুগো উড়তে পারত না সুপারম্যানের মতো, তবে লাফাতে পারত হাল্কের মতো। ওদিকে সুপারম্যানও কিন্তু প্রথম দিকে উড়তে পারত না, শুধু লাফাতে পারত অনেক উঁচুতে।

তোমরা হয়তো দাবি করবে, কল্পগল্পে সুপার পাওয়ার তো সর্বজনীন একটা বিষয়, আর অতিমানবীয় শক্তি? সে তো হারকিউলিসেরও ছিল। তাহলে কি তাকে প্রভাবিত বলা যায়?

কিন্তু সুপারম্যান আর হুগো ড্যানারের মিল এখানেই শেষ নয়, তারা দুজনেই বেড়ে ওঠে কৃষিকেন্দ্রিক ছোট্ট শহরে, সুপারম্যান কানসাসে, আর হুগো কলোরাডোতে। দুজনেই আশপাশের মানুষগুলোর কাছে নম্র এবং দুর্বল হিসেবেই পরিচিত ছিল নিজেদের ভেতরের সুপার পাওয়ারগুলো ঠিকঠাক বোঝার আগ পর্যন্ত। দুজনেরই বিশেষ স্থান ছিল একা সময় কাটানোর জন্য। সুপারম্যানের ছিল বরফাচ্ছন্ন আর্কটিকে, আর হুগো ড্যানারের ছিল উত্তর কানাডাতে।

এমনকি সুপারম্যানের প্রথম অ্যাকশন কমিকসের কভারের সেই গাড়ি তুলে মারার দৃশ্যটাও মিলে যায় গ্ল্যাডিয়েটর -এর একটা দৃশ্যর সঙ্গে।

কী দারুণ মিল তাই না?

দ্য লায়ন কিং

বিখ্যাত জাপানি কিংবদন্তি মাঙ্গা আর্টিস্ট ওসামু তেজুকা। জাপানি অ্যানিমে এবং মাঙ্গাকে সারা দুনিয়ায় জনপ্রিয় করে তোলার পেছনে তাঁর ভূমিকা অনেক। এই ওসামু তেজুকার হাতেই জন্ম হয় অন্যতম জনপ্রিয় অ্যানিমেটেড কার্টুন ‘জাংগুরু তাইতেই’র, ইংরেজিতে যাকে বলা হয় ‘কিম্বা দ্য হোয়াইট লায়ন’।

কিম্বা নামটা শুনতে অনেকটা লায়ন কিংয়ের সিম্বার মতো শোনায় তাই না? ডিজনির অ্যানিমেটেড মুভি দ্য লায়ন কিংকে এই কিম্বা দ্য হোয়াইট লায়ন-এর রিমেক মুভি বলা যায়।

কিম্বা দ্য হোয়াইট লায়ন-এ মূল ভিলেন কিম্বার চাচি থাকলেও ডিজনির দ্য লায়ন কিং-এ মূল ভিলেন থাকে সিম্বার চাচা। এ রকম ছোটখাটো অদলবদল ছাড়া দ্য লায়ন কিং-এর আর সবকিছুকেই জাংগুরু তাইতেইর ইংরেজি ভার্সন বলে চোখ বুজে স্বীকার করে নেওয়া যায়।

ব্যাটম্যান

এল জোরো, তরবারি হাতের মানুষটি!

জনসন ম্যাককিউলি ১৯১৯ সালে তৈরি করেন এই জোরোকে। মজার বিষয় হলো, এর ২০ বছর পর প্রকাশ হওয়া ব্যাটম্যানের সঙ্গে তার বেশ মিল রয়েছে। জোরোর ছিল এক গোপন গুহা, যেখানে সে তার ঘোড়া এবং মিশনের যাবতীয় জিনিস লুকিয়ে রাখত, আর ব্যাটম্যানে এসে সেটা হয়ে গেছে ব্যাটকেভ।

ব্যাটম্যান তথা ব্রুস ওয়েনের বিশ্বস্ত কাজের লোক আলফ্রেডকে নিশ্চয় জানো তোমরা। জোরোরও ছিল এ রকম একজন বিশ্বস্ত লোক, তার নাম বার্নার্ডো! তবে আলফ্রেডের সঙ্গে তার পার্থক্য হলো, সে বোবা এবং কালা ছিল।

ব্যাটম্যান মুভিতে ছোটবেলায় যখন ব্রুস ওয়েন তার বাবা-মায়ের সঙ্গে সিনেমা দেখতে যায়, তখন কি একবারও সিনেমার পোস্টারটার দিকে খেয়াল করে দেখেছ? না দেখে থাকলে পরের বার দেখে নিও, ব্যাটম্যান ছোটবেলায় তার মা-বাবার সঙ্গে দেখতে গিয়েছিল জোরো কে নিয়ে বানানো সিনেমা ‘মাস্ক অব জোরো’।

গ্রিন ল্যান্টার্ন

ডিসি কমিকসের অন্যতম জনপ্রিয় কমিকস গ্রিন ল্যান্টার্ন। আঙুলে পরা ছোট্ট একটা আংটি থেকে নিজের কল্পনাকে কাজে লাগিয়ে ইচ্ছেমতো শক্তি বের করে অপর পক্ষকে ঘায়েল করার ক্ষমতাওয়ালা এই গ্রিন ল্যান্টার্নদের আন্তগ্যালাক্টিক পুলিশও বলা চলে। তাদের কাজই মূলত পুরো বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের নিরাপত্তা অক্ষুণ্ন্ন রাখা।

কিন্তু গ্রিন ল্যান্টার্নের প্রথম প্রকাশের এক বছর আগেই প্রকাশিত হয় ল্যান্সম্যানের প্রথম গল্প। এই ল্যান্সম্যান তৈরি করে অ্যারাসিয়ানসরা, যারা  সবকিছুতে সব থেকে এগিয়ে থাকা এলিয়েন, আর গ্রিন ল্যান্টার্ন তৈরি হয় ওয়ানসদের হাত ধরে, ল্যান্সম্যান নির্বাচন করা হয় সাহসী এবং সেদর মধ্য থেকে, গ্রিন ল্যান্টার্নও নির্বাচন করা হয় একই পদ্ধতিতে। উভয়কেই তাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে দেওয়া হয় বিশেষ ক্ষমতা ও শক্তি, যা কি না শুধু সে এবং সে যাকে দেবে সেই ব্যবহার করতে পারবে।

যদিও গ্রিন ল্যান্টার্নের উদ্ভাবকরা দাবি করেন, তাঁরা ল্যান্সম্যান সম্পর্কে কিছু জানতেনই না, তবু এত এত মিল দেখে নিন্দুকদের ভ্রু যে একটু কুঁচকবেই, সেটা তো স্বাভাবিকই!