প্রথম গোয়েন্দাগিরি

আমি যখন ক্লাস থ্রিতে পড়ি তখন থেকেই গোয়েন্দা কাহিনির প্রতি অনেক আগ্রহ আমার। বন্ধুদের সঙ্গে প্রায়ই গোয়েন্দাদের মতো বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গবেষণা করতাম। স্কুলে ছুটি পেয়েই আম্মুর সঙ্গে নানা-নানির বাড়িতে বেড়াতে গেলাম আমি। বর্ষাকাল। টিপটিপ বৃষ্টি হচ্ছিল সারা দিন। তাই ঘরেই বসে ছিলাম। শুনলাম, আমাদের আসার খবর শুনে বাজার থেকে মাছ এনেছিলেন নানা। কিন্তু সকালে উঠে দেখি পাতে মাছ নেই। সবার ধারণা, বিড়াল হয়তো সব মাছ খেয়ে ফেলেছে। কিন্তু আমার তো গোয়েন্দামন! বিষয়টি নিয়ে গবেষণার কথা ভাবলাম আমি। সহায়ক হিসেবে কিছু গোয়েন্দা কাহিনিও পড়লাম। বই পড়ে মনে হলো, গোয়েন্দারা চোর বা আসামি ধরার জন্য প্রথমে হাত বা পায়ের ছাপ সংগ্রহ করে। ছাপ সংগ্রহের জন্য একধরনের স্প্রেও ব্যবহার করে তারা। তারপর তা ম্যাগনিফাইনিং গ্লাস দিয়ে দেখে তদন্ত শুরু করে। কিন্তু এই দুটি জিনিসের একটিও আমার ছিল না। ছাপ সংগ্রহের জন্য বিকল্প কিছু ভাবা শুরু করলাম আমি। একটা বুদ্ধি এল মাথায়। যেখানে মাছ রাখা হবে, তার চারপাশ দিয়ে রঙের গুঁড়া ছিটিয়ে দেব হালকাভাবে। চোর বা বিড়াল যে-ই হোক, বাইরে থেকে মাছ চুরির জন্য এলে অবশ্যই রঙে পা দিতে হবে তাকে। আর আমি পাব কাঙ্ক্ষিত পায়ের ছাপ। পরদিন আবার মাছ কিনে আনেন নানা। নির্ধারিত জায়গায় রাখেন মাছটা। সঙ্গে সঙ্গে সেটার চারপাশে সুন্দরভাবে লাল রং ছিটিয়ে দিই আমি।

কিছুক্ষণ পর শুনি আবারও চুরি গেছে মাছ! যাবেই, কারণ গোয়েন্দা কাহিনিতে পড়েছি, চোর ফাঁদে পা দেবেই। ছুটে গেলাম ঘটনাস্থলে। কী আশ্চর্য, সবাই আমার দিকে অদ্ভুতভাবে তাকাচ্ছে। মানে কী! আমাকেই সন্দেহ করছে নাকি? আরে তাই তো! সবাই ভাবছে, আমিই সরিয়েছি মাছ। কারণ, রঙের ওপরের ছাপটা আমার পায়ের সঙ্গে হুবহু মিলে যায়।

সবাইকে বলে বোঝালাম, চোর ধরার জন্য রং ছিটিয়েছিলাম আমি। আর রঙের ওপর পায়ের ছাপ ঠিকভাবে পড়ে কি না, দেখার জন্য সেখানে পা রেখেছিলাম আমি নিজেই। তাড়াহুড়ার মধ্যে নিজের পায়ের ছাপটা মোছা হয়নি, তাই আমার পায়ের ছাপটাই রয়ে গেছে।

আসল চোর কে, তা ধরা পড়ল না। কিন্তু আমার এই কাণ্ড দেখে খুব হাসাহাসি করল বাড়ির সবাই। এরপর থেকে যেকোনো গবেষণা অনেক ভেবেচিন্তে ঠান্ডা মাথায় করি আমি।

ইফতেখার আহমেদ

অলংকরণ : রাকিব রাজ্জাক