বাড়িটায় কে যেন থাকে

মনজু।
ডাক শুনে আমি একটু চমকালাম। কে ডাকল? এ রকম নির্জন জায়গায় কে ডাকবে আমাকে? এতক্ষণ মাঠের ওপর দিয়ে হেঁটে এসেছি। দুদিকে শুধুই ফসলের মাঠ ছিল। মাঠের মাঝখান দিয়ে রিকশা চলার মতো পথ। দু–একটা রিকশা এল–গেল। আমি আসছিলাম হেঁটে হেঁটে। বাস থেকে নেমেছি রতনপুর বাসস্ট্যান্ডে। চৈত্র মাসের বিকেলটা বড় ভালো লাগছিল। রিকশা না নিয়ে হেঁটেই রওনা দিলাম। কাঁধে হালকা ধরনের ব্যাগ। পরনে জিনস টি–শার্ট। পায়ে হালকা ধরনের স্নিকার। ঘণ্টাখানেকের পথ সোনাতলা গ্রাম। আমার ছোট ফুফুর বাড়ি। বহুদিন পর ফুফুর বাড়ি বেড়াতে এলাম। হাঁটতে ভালো লাগছে।
মাঠ পেরোনোর আগেই সন্ধ্যা হয়ে গেল। খোলা জায়গায় অন্ধকার জমতে সময় লাগে। সূর্য ডোবার পরও অনেকটাক্ষণ আলোকিত ভাব থাকে। গ্রামে ঢোকার আগেই সেই ভাব মিলিয়ে গেল। ভালো রকম অন্ধকার চেপে এল চারদিক থেকে।
দূর থেকেই দেখেছিলাম গ্রামে ঢোকার মুখে সেই ধসে পড়া জমিদার বাড়ি। হাতের বাঁ দিকে নানা রকমের গাছপালা আর বাঁশঝাড়ের ফাঁকে দেখা যাচ্ছিল বহু বহু বছরের পুরোনো ধসে পড়া দালানের মাথা। ডান দিকে ফসলের মাঠ। জমিদার বাড়ি ঘেঁষে রাস্তা। সেই রাস্তায় ঢোকার আগেই ঘোরতর অন্ধকার।
অন্ধকারে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। সঙ্গে টর্চ নেই, মোবাইল তো আছে। মোবাইলই এখন টর্চের কাজ দেয়। তা ছাড়া ডরভয় আমার একটু কমই। ভূতপ্রেতে বিশ্বাস করি না। চোর–ডাকাত বা ছিনতাইকারীরা যদি ধরে, তাহলেই বা ক্ষতি কী করবে? ব্যাগে দু–চারটা জামাকাপড় আছে, সঙ্গে কিছু টাকা আর মোবাইল। আমি ঘড়ি পরি না। এখন ঘড়ি পরার দরকার হয় না। মোবাইলেই টাইম দেখা যায়। নিলে মোবাইল আর টাকাগুলো নেবে। দিয়ে দেব।
মনজু, ও মনজু।
প্রথমবার একটু যেন আবছামতো শুনেছিলাম ডাকটা, এবার একদম স্পষ্ট। পরিষ্কার আমার নাম ধরে ডাকল। এবং ডাকটা এল জমিদারবাড়ির ভেতর থেকে। নারীকণ্ঠের ডাক। আওয়াজটা মিহি ধরনের। সুন্দর।
কাছে কোথাও কেউ নেই। খাঁ খাঁ নির্জন চারদিক। সোনাতলা এখনো মিনিট কুড়ির পথ। এ রকম নির্জন জায়গায় কে ডাকবে আমার নাম ধরে?
কে?
সঙ্গে সঙ্গে বাড়ির ভেতর থেকে সাড়া এল। আমি বাবা, আমি।
কে আপনি?
ভেতরে আসো বাবা। এলেই দেখতে পাবে।
মোবাইলের আলো ফেলে ফেলে বাড়ির ভেতরে ঢুকলাম। ঝোপঝাড় আগাছায় ভর্তি বাড়ি। ভাঙা দালানের একটা দিকে দেখি হারিকেন জ্বলছে টিমটিম করে। সাদা শাড়ি পরা এক মহিলা দাঁড়িয়ে আছেন হারিকেনের সামনে। মাথায় ঘোমটা দেওয়া। মুখটা দেখা যায় না। বুঝতে পারলাম তিনিই আমাকে ডেকেছেন?
এগিয়ে গেলাম। আপনি আমাকে চেনেন?
চিনি বাবা। তুমি মনজু। সোনাতলা গ্রামে তোমার ছোট ফুফুর বাড়ি। তোমার ফুফা–ফুফুকেও আমি চিনি। তাদের ছেলেমেয়েদেরও চিনি। তোমার ফুফুর নাম ফরিদা।
জি। ফুফুর নাম ফরিদা। কিন্তু আপনি এই বাড়িতে কী করছেন? এই বাড়িতে তো কেউ থাকত না।
আমি থাকি। তবে ইচ্ছা করে থাকি না বাবা। আমাকে আটকে রেখেছে।
কে আটকে রেখেছে?
জমিদার বাবু। বহু বছর ধরে আটকে রেখেছে। তুমি আমাকে মুক্ত করো বাবা। দরজাটা বাইরে থেকে তালা মারা। তালাটা ভাঙো। দরজাটা খুলে দাও। আমি বেরিয়ে আসি।
কোথায় তালা? কোথায় দরজা? আপনি তো খোলা জায়গাতেই দাঁড়িয়ে আছেন...
আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই দমকা একটা হাওয়া এল। হারিকেনটা উল্টে পড়ে নিভে গেল। আমি মোবাইল জ্বাললাম। আরে, ভদ্রমহিলা গেলেন কোথায়?
ভেতরে ঢুকে এদিক–ওদিক মোবাইলের আলো ফেলে তাঁকে খুঁজতে লাগলাম। কোথায় আপনি? কোথায় গেলেন?
সাড়া নেই। তাঁকে আর খুঁজেই পেলাম না। চারদিকে ঝিঁঝি ডাকছে। গাছপালায় হাওয়ার শব্দ। বাঁশঝাড় শনশন করছে।
এবার আমার গা কাঁটা দিল। ব্যাপারটা কী? ভদ্রমহিলা কি ভদ্রমহিলা নন? আর ওই যে বললেন জমিদার বাবু তাঁকে আটকে রেখেছেন! সোনাতলার এই জমিদারের নাম ছিল প্রাণগোপাল রায়চৌধুরী। তাঁর আমল শেষ হয়ে গেছে দেড়–দুই শ বছর আগে। মহিলা কি তাহলে দেড়–দুই শ বছর ধরে বন্দী হয়ে আছেন?
আর কিছু ভাবতেই পারি না। বুঝে গেলাম কী ঘটেছে আমার সঙ্গে। তারপরও সাহস হারালাম না। প্রায় দৌড়ে এলাম বাকিটা পথ। তবে ফুফুর বাড়ির কাউকেই ঘটনা বললাম না।
রাতের বেলা ব্যাপারটা নিয়ে খুব ভাবলাম। ছোট ফুফুর বাড়িতে এলাম অনেক বছর পর। দশ–এগারো বছর হবে। কারণ হলো ফুফা–ফুফু প্রায়ই ঢাকায় যান। ওঠেন আমাদের ফ্ল্যাটে। তখনই দেখা–সাক্ষাৎ হয়। এ জন্য তাঁদের গ্রামের বাড়িতে আর আসা হয় না। এবারও আসা হতো না, হলো সামুর জন্য। সামু হচ্ছে ফুফুর ছোট ছেলে। এসএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ পেয়েছে। এখন ঢাকায় গিয়ে নামকরা কোনো কলেজে ভর্তি হবে। আমারও সেমিস্টার গ্যাপ চলছে। সামু ফোনে বলল, কয়েক দিন আমাদের এখানে এসে থেকে যাও। খুব ঘুরব, আড্ডা দেব, গল্প করব। আমার বন্ধু শামিম আর টিপুও থাকবে। চারজনে বেশ জমবে।
এই লোভে এসেছি।
দশ–এগারো বছরে এলাকাটা অনেক বদলেছে। পল্লী বিদ্যুৎ তো এখন ঘরে ঘরে। দেশের প্রতিটি গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। সুতরাং গ্রামে সেই আগের মতো হারিকেন আর কুপিবাতির ব্যবহার বলতে গেলে নেই। কোনো কোনো গ্রাম তো প্রায় শহর।
তবে সোনাতলা শহর হয়ে ওঠেনি। বিদ্যুৎ আছে অনেক বাড়িতেই। গাছপালা ঝোপজঙ্গল বেশি বলে, মাঠ পুকুর বেশি বলে এখনো অনেকটাই গ্রামের পরিবেশ আছে। এই তো রাতের বেলা ঝিঁঝির ডাকে কান ঝালাপালা হচ্ছে।
জমিদার বাড়িটা গ্রামের বাইরের দিকে। গ্রাম থেকে কিলোমিটারখানেক দূরে। ওদিকে রতনপুর থেকে সোনাতলায় ঢোকার দেড়–দুই কিলোমিটার মতো মাঠের ওপর দিয়ে আসতে হয়। সব মিলিয়ে ওদিকটা নির্জন, নিরিবিলি।
জমিদার বাড়ি নিয়ে অনেক ঘটনা প্রচলিত আছে। এই ধরনের ধসে পড়া জঙ্গুলে বাড়ি নিয়ে যেমন থাকে আরকি। জ্যোত্স্না রাতে সাদা শাড়ি পরা কাকে নাকি ঘুরতে দেখা যায়। রাতের বেলা কিংবা নির্জন দুপুরে, সন্ধ্যায় একা কেউ বাড়ির ওদিকটায় গেলে তার নাম ধরে নাকি ডাকে এক নারীকণ্ঠ। এসব আমি শুনেছি। বয়স কম ছিল। বিশ্বাস করেছি। বড় হওয়ার পর মোটেই বিশ্বাস করি না। এবার সোনাতলায় আসার সময় জমিদারবাড়ির কথাটা আমার মনেও হয়নি। বাড়ির কাছাকাছি আসার পরও কিছু মনে হয়নি। নারীকণ্ঠ নাম ধরে ডাকল। দ্বিতীয়বার ডাক শুনে বাড়িতে ঢুকলাম। তার পরের ঘটনা বিস্ময়কর। আমার জীবনে না ঘটলে আমি বিশ্বাসই করতাম না।
এমন ঘটনা কি সত্যি সত্যি ঘটে?
পরদিন সকালবেলা সামুর বন্ধু দুজন এল। শামিম আর টিপু। একই গ্রামের, একই বয়সী। ওরাও এসএসসি দিয়েছিল। সামুর মতো ভালো রেজাল্ট হয়নি। এ জন্য ঢাকায় যাবে না। রতনপুর কলেজেই পড়বে। তা ছাড়া ঢাকায় থেকে পড়াশোনার খরচ ইত্যাদিরও সমস্যা আছে। গ্রামের বেশির ভাগ মানুষই গরিব। আমার ফুফা আর দু–একজন আছেন, যাঁরা অবস্থাপন্ন। তবে ফুফা, হাসেম হাওলাদার প্রচুর জায়গা–সম্পত্তির মালিক। বাজারে অনেকগুলো দোকান আছে, ধান–চালের আড়ত আছে। ফুফার নগদ টাকাও আছে যথেষ্ট।
নাশতা শেষ করে চা খাচ্ছি। সামু এসে বলল, চলো, বেরোই।
কোথায় যাবি?
গ্রামের এদিক–ওদিক ঘুরি। বাজারের দিকে যাই। নদীর দিকটায়ও যেতে পারি। শামিম আর টিপু এসে পড়েছে।
কোথায় ওরা?
ওই তো জামতলায় দাঁড়িয়ে আছে।
ফুফুর বাড়িতে ঢোকার মুখে বহু পুরোনো একটা জামগাছ। জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি শামিম আর টিপু দাঁড়িয়ে আছে। পরনে জিনস টি–শার্ট, পায়ে কেডস। অর্থাৎ হাঁটাচলার প্রস্তুতি নিয়েই এসেছে।
চা শেষ করে বেরোলাম। ওদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিল সামু। দুজনেই বেশ বিনয়ী, ভদ্র ছেলে। কথাও বলে সুন্দর করে। ছেলে দুটিকে আমার খুব ভালো লাগল।
কোনদিকে যাব, ততক্ষণে প্ল্যান করে ফেলেছি। হাঁটতে হাঁটতে বললাম, সামু, জমিদারবাড়ির দিকটায় যাওয়া যায় না?
যাবে না কেন? চলো।
শামিম বলল, আমরা চারজন আছি। দল বেঁধে গেলে কোনো অসুবিধা নেই?
যেন কিছুই জানি না এমন ভঙ্গিতে বললাম, একা গেলে অসুবিধা কী?
টিপু বলল, আপনি জানেন না?
না তো! কী হয়েছে?
ওরা তিনজন একে অন্যের দিকে তাকাল। সামু বলল, ওই বাড়িতে ভূত আছে।
ধুত! কী বাজে কথা বলছিস।
বাজে কথা না। সত্য কথা।
শামিম বলল, হ্যাঁ, মনজু ভাই। কিছু একটা ওই বাড়িতে আছে।
টিপু কম কথা বলে। সে কথা বলল না। মুচকি একটু হাসি দেখা দিল তার মুখে। হাসিটা আমি খেয়াল করলাম।
হাসছ কেন, টিপু?
টিপু কথা বলল না। জবাব দিল সামু। ও কথা বলছে না ঠিকই কিন্তু আমাদের মধ্যে ওরই আসল অভিজ্ঞতা আছে।
তাই নাকি, টিপু?
এবার কথা বলল টিপু। জি, মনজু ভাই।
কী রকম অভিজ্ঞতা, শুনি।
শামিম বলল, বল টিপু, বল।
হাঁটতে হাঁটতে দূরের জমিদার বাড়িটার দিকে একবার তাকাল টিপু। তারপর বলতে লাগল তার অভিজ্ঞতার কথা...


ওই বাড়ির পশ্চিম পাশে বড় একটা মাঠ আছে। জমিদারদেরই মাঠ ছিল ওটা। শুধু ওই মাঠই না, আশপাশের সব জমিই ছিল জমিদার বাবুর। বাড়ির পাশ দিয়ে রতনপুরের দিকে গেছে যে রাস্তা, ওই রাস্তার ধারের সব জমি, পুকুর, খাল–বিল সবই তাদের। এলাকার কেউ ওই মাঠে খেলতে যায় না। দুবছর আগে রতনপুর হাইস্কুলের সঙ্গে সোনাতলা হাইস্কুলের ক্রিকেট খেলা হলে। দুপক্ষই ঠিক করল খেলা হবে জমিদারবাড়ির মাঠে। দুই স্কুলের ছেলেরা থাকবে। এত মানুষ থাকলে ভয় কী!
তা–ই হলো। আমাদের ক্লাস থেকে আমি চান্স পেয়েছি। সকাল নয়টায় খেলা শুরু হলো। টসে জিতে আমরা প্রথমে ব্যাটিং করলাম। রান হলো এক শ তিপ্পান্ন। ওদের করতে হবে এক শ চুয়ান্ন। ওরা ব্যাটিং শুরু করল। আমরা প্রাণপণে ফিল্ডিং করতে লাগলাম। রান তুলতেই দিচ্ছি না। ওদের টিমে ক্লাস নাইনে পড়া লম্বামতো একটা ছেলে আছে। নাম বুলবুল। ব্যাটিং করে খুব ভালো। নেমেই চার মারতে লাগল, ছক্কা মারতে লাগল। একবার এমন এক ছক্কা মারল, বল চলে গেল জমিদার বাড়ির ভেতর, বাঁশঝাড়ের ওদিকটায়। আমি দৌড়ে গেলাম বল আনতে। গিয়ে দেখি জড়াজড়ি করে থাকা দুটো বাঁশের মাঝখানে আটকে আছে বল। অনেকটা উঁচুতে। আমি তো বেঁটে। লম্বা মানুষ না হলে ওই বল হাত দিয়ে আনা যাবে না। কী করি? ওদিকে মাঠ থেকে সবাই চিত্কার করছে। কী হলো টিপু, বল আনছিস না কেন? এ সময় দেখি সাদা শাড়ি পরা এক মহিলা দাঁড়িয়ে আছে বাঁশঝাড়তলায়। মাথায় ঘোমটা। মুখও ঘোমটায় ঢাকা। মুখ দেখা যাচ্ছে না। শুধু চোখ দুটো দেখা গেল। তবে আমার দিকে সে তাকাল না। বলটা যেখানে আটকে আছে, সেদিকটায় হাত বাড়িয়ে বলটা সে নামিয়ে আমার হাতে দিল। দিয়েই উধাও। চোখের পলকে যেন হাওয়া হয়ে গেল। এদিক–ওদিক তাকিয়ে কোথাও তাকে আমি আর দেখলামই না। এই বাড়িতে সাদা শাড়ি পরা একজনকে নাকি দেখা যায়, এমন গল্প বহুবার শুনেছি। এ কি তাহলে সে? ভয়ে আমার দম বন্ধ হয়ে এল। এক দৌড়ে মাঠে এলাম। খেলায় আমরা হেরে গেলাম। কারণ, বুলু দুর্দান্ত ব্যাটিং করছিল। চার আর ছয় মেরেই যাচ্ছিল। আমার দিকটাতেই ওর বল আসছিল বেশি। আমি ফিল্ডিং করতেই পারছিলাম না। সহজ সহজ বলও আটকাতে পারছিলাম না। যে বলে এক–দুই রান হওয়ার কথা, সেই বলও বাউন্ডারি পেরিয়ে যাচ্ছিল।
খেলা শেষ হওয়ার পর সবাই ধরল আমাকে। কী ব্যাপার? তুই তো ভালো খেলিস! আজ এত খারাপ ফিল্ডিং করলি কেন?
ঘটনা বললাম। শুনে সবাই হাসাহাসি শুরু করল। কেউ আমার কথা বিশ্বাসই করল না। শুধু শামিম আর সামু বিশ্বাস করল। ওরা খেলছিল না, খেলা দেখছিল। দর্শক। কিন্তু জমিদারবাড়ি থেকে বল আনার পর থেকে আমি যে অন্যমনস্ক, এটা ওরা খেয়াল করেছে। দুজনেই আমার পক্ষ নিল। তখন বিকেল শেষ হয়ে আসছে। রতনপুরের ছেলেরা আনন্দ করতে করতে ফিরে গেল। আমাদের স্কুলের ছেলেরা বলল, চল, ঢুকি জমিদারবাড়িতে। দেখি সাদা কাপড় পরা কোন মহিলা থাকে বাড়িতে!
এত মানুষ একসঙ্গে থাকলে ভয়ের কিছু নেই। ঢুকলাম বাড়িতে। তন্নতন্ন করে খোঁজা হলো বাড়ি। না, কেউ নেই। কেউ কোথাও নেই...
কথা শেষ করে আমার দিকে তাকাল টিপু। হাসল। এই হচ্ছে আমার অভিজ্ঞতা মনজু ভাই। বিশ্বাস করুন, একটি শব্দও আমি বানিয়ে বলিনি। একটি শব্দও মিথ্যা না। সাদা শাড়ি পরা এক মহিলা বাঁশঝাড়ে আটকে থাকা বলটা নামিয়ে আমার হাতে দিয়েছিল।
টিপুর কথা শুনে মনে মনে বললাম, আমি তোমার কথা পুরোপুরি বিশ্বাস করি, টিপু। মুখে বললাম, তারপর ওই মাঠে আর খেলতে যাও না তোমরা?
না, একা একা ওই দিকটায় কেউ যায়ই না। আশপাশের জমি যারা চাষ করে, তারাও একা যায় না। দু–তিনজন একসঙ্গে হয়ে মাঠে যায়।
বলো কী?
হ্যাঁ। এই যে দিনের বেলা দেখুন, ওদিকটায় বলতে গেলে লোকজনই নেই। খালি রিকশা নিয়েও রিকশাওয়ালারা আসতে চায় না। সওয়ারি থাকলে তবে আসে।
অদ্ভুত ব্যাপার। এই, তোমাদের তিনজনকেই একটা প্রশ্ন করি।
জি, নিশ্চয়ই।
জমিদার প্রাণগোপাল রায়চৌধুরীর তো অনেক জায়গা–সম্পত্তি। এলাকার লোকজন ওসব দখল করেনি?
শামিম বলল, সরকার নিয়ে নিয়েছে সব। সরকারের কাছ থেকে লিজ নিয়েছে কেউ কেউ। তারাই চাষ করে।
বাড়িটা নেয়নি?
বাড়িও নিয়েছিল পুবপাড়ার মদন সাহা। কিন্তু দখল নিতে পারেনি।
কেন?
যখনই ওই বাড়িতে গেছে, বাড়ির ভেতর থেকে সাতজন বিশাল সাইজের লোক নাকি সড়কি, বল্ল­ম আর লাঠি নিয়ে তাড়া করেছে।
দিনের বেলা?
হ্যাঁ, দিনের বেলা। সবার চোখের সামনে। মদন সাহার বংশই নাকি নির্বংশ হতে চলেছিল ওই বাড়ির কারণে। মদন সাহা এখন আর বেঁচে নেই। তার নাতিরা আছে। ভুলেও তারা ওই বাড়ির দিকে যায় না।
আশ্চর্য ব্যাপার তো!
সামু বলল, আরেকটি ঘটনা শুনবে?
বলো, বলো।
বাড়ির দক্ষিণ দিককার মাঠে আখ চাষ করেছিল নবু হালদার। আখ বড় হয়েছে। হঠাৎ একদিন দেখে জমিদার বাড়ির লাগোয়া দিককার অনেকখানি জায়গা ফাঁকা হয়ে গেছে। আখ নেই। নবু অবাক! আখ কে নিল? খেত থেকে আখ কখনো চুরি হয়েছে, এমন ঘটনা তো আগে কখনো ঘটেনি। ফসল চুরির ব্যাপার এই এলাকায় নেই। ছেলেপুলেরা দু–চারটা আখ তুলে নিয়ে খায়, সেটা অন্য কথা। কিন্তু এতখানি জায়গার আখ কে তুলে নিয়ে গেল?
নবু তার দুই ছেলেকে নিয়ে রাতে গেল আখখেত পাহারা দিতে। লম্বা লম্বা আখের আড়ালে লাঠি নিয়ে বসে আছে। ফকফকে জ্যোত্স্না রাত। হঠাৎ দেখে জমিদার বাড়ি থেকে সাতজন বিশাল তাগড়া জওয়ান বেরিয়ে আসছে। তাদের হাতে চকচকে রামদা। নবু আর তার ছেলেদের ওরা দেখতে পেল না। আগে আখখেতের যেদিকটা ফাঁকা হয়েছিল, এবার আর সেদিক না, অন্যদিক থেকে আখ কাটতে লাগল তারা। দেখতে দেখতে অনেক আখ কাটল। সেই আখ বোঝা বেঁধে মাথায় করে বাড়ির ভেতর নিয়ে গেল। দুই ছেলে নিয়ে নবু তখন হতবাক হয়ে আছে।
আমরা ততক্ষণে জমিদার বাড়ির কাছাকাছি চলে এসেছি।
বেলা এগারোটার মতো বাজে। রোদে ঝকঝক করছে চারদিক। বসন্তকাল। জমিদার বাড়িতে কৃষ্ণচূড়া, জারুল এসব ফুল ফুটেছে। বুনো ফুলও ফুটেছে ঝোপঝাড়ে। হাওয়ায় ফুলের গন্ধ। পাখি ডাকছে, বাঁশঝাড় শনশন করছে। আশপাশে কোনো লোকজন নেই। ঝিঁঝি ডাকছে সমানে। ভারি নিরিবিলি নির্জন পরিবেশ। দূরের রাস্তায় একটা রিকশা দেখা যাচ্ছে। সোনাতলা বাজারের দিকে চলেছে।
শামিম বলল, আমার বড় চাচার অভিজ্ঞতার কথা বলি। সামু আর টিপু জানে। এসব ঘটনা এলাকার সবাই জানে। এই বাড়ি নিয়ে যত ঘটনা, এলাকার লোকের মুখে মুখে সেসব ঘটনা শোনা যায়। ওসব শুনে শুনে এমন ভৌতিক একটা অবস্থা তৈরি হয়েছে বাড়িটা নিয়ে, লোকের ডরভয় যেন আরও বেড়ে গেছে। দল বেঁধেও কেউ আর আসার সাহস করে না। আজকালকার দিনে এ রকম বাড়ি, পুকুর আর বিশাল বিশাল গাছ এভাবে পড়ে থাকে না। লোকে দখল করত, গাছ কেটে বিক্রি করে দিত। পুকুরে বড় বড় মাছ আছে, ধরে খেয়ে ফেলত। আবার প্রভাবশালী কেউ দখল করে মাছের চাষ করত। কেউ সাহসই পায় না ওসব কাজ করতে। প্রত্যেকেরই ধারণা, বাড়িটায় কেউ একজন থাকে। জমিদারের আমল থেকেই আছে। ভূত, প্রেতাত্মা যা–ই বলি, তেমন কেউ। একা কেউ বাড়িতে ঢোকে না। বাড়ি দখল করতে এসে মদন সাহা সাত জওয়ানকে দেখেছে সড়কি, বল্ল­ম নিয়ে, দিনের আলোয় বাড়ি থেকে বেরোতে। নবু হালদার আর তার দুই ছেলে দেখেছে জ্যোত্স্না রাতে আখ কেটে নিচ্ছে খেত থেকে। জানের মায়া সবারই আছে। কে মরবে প্রেতাত্মার হাতে! 
সামু বলল, বড় চাচার অভিজ্ঞতাটা বলো।
বলছি, বলছি। আমার বড় চাচা তখন স্কুলে পড়েন। বোধ হয় ক্লাস এইটে না নাইনে। বিকেল চারটার দিকে স্কুল থেকে ফিরছেন। তখন সোনাতলা স্কুল হয়নি। রতনপুর হাইস্কুলে গিয়ে পড়তে হয়। যেতে–আসতে হয় এই রাস্তা দিয়ে। জমিদার বাড়ির পাশ দিয়ে। তবে একা কেউ এই রাস্তায় যায় না। যায় দল বেঁধে। বড় চাচা সেদিন একা ফিরছিলেন। বোধ হয় কাউকে সঙ্গে পাননি। যাহোক, ভয়ে ভয়েই ফিরছেন। যতটা সম্ভব দ্রুত পা চালিয়ে হাঁটছেন। জমিদারবাড়ি পেরিয়ে যাচ্ছেন, হঠাৎ পেছন থেকে নারীকণ্ঠের ডাক। মজিদ, ও মজিদ।
আমার বড় চাচার নাম মজিদ। তাঁর নাম ধরে ডাকছে। চাচা ফিরে তাকিয়েছেন। দেখেন সাদা শাড়ি পরা এক মহিলা দাঁড়িয়ে আছেন বাঁশঝাড়তলায়। মাথায় ঘোমটা। সেই ঘোমটায় মুখও ঢাকা। শুধু চোখ দুটো দেখা যায়।
চাচা ফিরে তাকাতেই মহিলা বলেন, বাবা মজিদ, আয়, ভেতরে আয়। জমিদার আমাকে বন্দী করে রেখেছে। ঘরে তালা মেরে রেখেছে। তালা ভেঙে আমাকে উদ্ধার কর বাবা।
কোথায় তালা? কোথায় ঘর? দাঁড়িয়ে আছেন বাঁশঝাড়তলায় আর বলছেন জমিদার আমাকে বন্দী করে রেখেছে। তালা ভেঙে আমাকে উদ্ধার কর বাবা।
চাচা এমন ভয় পেলেন! প্রাণপণে দৌড়াতে দৌড়াতে বাড়ি ফিরলেন। 
শামিম থামল। আমি মনে মনে বললাম, ঘটনা সত্য। আমি তার প্রমাণ। মুখে বললাম, এই ধরনের পরিস্থিতির পর নাকি প্রবল জ্বরে আক্রান্ত হয় লোকে। তোমার বড় চাচার জ্বর হয়নি?
শামিম হাসল। হয়েছিল। দশ–বারো দিন নাকি জ্বরে ভুগেছেন।
টিপু বলল, এসব ঘটনা যাদের জীবনে ঘটে, তারা কেউ কেউ নাকি গলা দিয়ে রক্ত উঠে মারাও যায়।
সামু বলল, হ্যাঁ, সবই প্রচলিত ঘটনা। পুরোনো জমিদারবাড়ি মানেই হচ্ছে ভূতপ্রেতের আড্ডা। প্রেতাত্মারা ঘুরে বেড়ায়। আগের জমিদারেরা অনেকেই অত্যাচারী ছিল। নারী নির্যাতন করত। সুন্দরী মেয়েদের ধরে এনে বাড়িতে আটকে রাখত। এই বাড়ির ঘটনাও তেমন। সেসব মেয়ের বা মহিলার কোনো একজনের আত্মা হয়তো এখনো এই বাড়িতে রয়ে গেছে। সাদা শাড়ি পরে সে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
টিপু বলল, আর ওই সাত জওয়ান?
তারাও হয়তো প্রেতাত্মা হয়ে বাড়ি পাহারা দিচ্ছে। 
শামিম বলল, তাহলে কি বাড়ির ভেতরে ঢোকা আমাদের ঠিক হবে? 
আমি হেসে ফেললাম। তুমি ভয় পাচ্ছ নাকি?
না, মানে...
কিচ্ছু হবে না। আমরা চারজন আছি। চলো ঢুকি।
আমরা ভেতরে ঢুকলাম। পাচিলটাচিল তেমন কিছু আর এখন নেই। ধসে পড়া দালানটা আছে। দোতলা উঁচু দালান ছিল। একটা মাথা উঁচু হয়ে আছে, বাকিটা ধসে ইটের স্তূপ। সোঁদা গন্ধ আছে ইট–সুরকির। শেওলা জমেছে সেসবের ওপর। আগাছা জন্মেছে প্রচুর। বট–অশত্থের চাড়া যেমন জন্মায় এসব দালানে তা জন্মেছে, বেশ বড় হয়েছে একেকটা। টিয়া পাখি, জালালি কবুতর বাসা বেঁধেছে খোঁড়লে। ইঁদুর, বাদুড়, বেজি এসবও নিশ্চয়ই আছে অনেক। পাখির বিষ্ঠা পড়ে আছে এদিক–ওদিক। ঝোপঝাড় আগাছায়, শুকনা পাতায় ভরে আছে বাড়ি। বিষধর সাপেরও নিশ্চয়ই অভাব নেই। ইঁদুরের লোভে সাপ থাকবেই।
ঢোকার সময় আমার একটু একটু ভয় করছিল। কাল রাতের অভিজ্ঞতায় পা আড়ষ্ট করে দিচ্ছিল। যদিও শামিমকে সাহস দিয়েছি। সেটা না করে উপায়ও ছিল না। আমি ওদের চেয়ে বয়সে বড়। আশ্চর্য ব্যাপার, বাড়িতে ঢোকার পর ভয়টা হঠাৎ করেই যেন কেটে গেল। কী রকম চনমনে একটা ভাব হলো শরীরে। মনে বেশ ফুর্তি। যেন কোনো আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসেছি। এখনই বাড়ি থেকে বেরিয়ে লোকজন অভ্যর্থনা জানাবে। আমার তিন সঙ্গীরও একই অবস্থা। মুখ দেখে মনে হচ্ছে ডরভয় কিছুই তাদের নেই। বেশ আমোদ–ফুর্তি নিয়েই বাড়িটায় ঢুকেছে। এই বাড়ি নিয়ে প্রচলিত ভৌতিক ঘটনা ইত্যাদি কিছুই যেন কারও মনে নেই। আমি এক ফাঁকে বেমালুম ভুলে গেলাম কাল রাতের কথা।
প্রায় চল্লি­শ মিনিট বাড়িটায় কাটালাম আমরা। বিশাল বাড়ি, বাগানভর্তি গাছপালা আর পুকুর। বাঁশবাগানটা যেন আর ফুরাতেই চায় না। বাঁধানো ঘাটলা এখন আর সেভাবে নেই। ধসে পড়েছে। চারদিক থেকে পুকুরের পানিতে এসে নেমেছে বেত ঝোপ আর অচেনা সবুজ লতা। জলজ উদ্ভিদও আছে বিস্তর। পুকুরের পানি প্রায় দেখাই যায় না। অন্যরা খেয়াল করল কি না, জানি না, আমি করলাম, ঘাটলার সামনের কিছুটা অংশ পরিষ্কার। অল্প একটুখানি জায়গায় কচুরিপানা বা ওই জাতীয় কিছু নেই। যেন এই জায়গাটা নিয়মিত ব্যবহার করা হয়। গৃহস্থ বাড়ির কচুরিপানাভর্তি পুকুরের যে অংশ বাড়ির বউ–ঝিরা ব্যবহার করে, সেই জায়গাটা যেমন হয়, পুকুরের এই জায়গাটা তেমন।
কেউ ব্যবহার করে নাকি?
দালানের একটা অংশও যেন একটু পরিষ্কার মনে হলো। মেঝেতে ময়লা নেই। যেন কেউ থাকে ওখানটায়। কাল রাতে কি এখানটায় হারিকেন জ্বলছিল? সাদা শাড়ি পরা মহিলা কি এখানটায়ই দাঁড়িয়ে ছিলেন?
সামু একসময় ব্যস্ত গলায় বলল, সব তো দেখা হলোই। মনজু ভাই, চলো তাহলে এখন ফিরি।
চলো।
বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসছি, নারীকণ্ঠের হালকা একটু হাসির শব্দ যেন আমার কানে এল। আমি একবার মুখ ফিরিয়ে তাকালাম। শামিম আর টিপু তখন কী নিয়ে কথা বলছে, ওরা বোধ হয় খেয়াল করল না। সামু আছে সবার আগে। বেশ দ্রুত হাঁটছে সে। আমাদের আগেই যেন বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে চাইছে।
রাস্তায় এসে সামু কেমন যেন একটা স্বস্তির হাঁপ ছাড়ল।
কী হলো রে সামু?
হয়েছে কিছু একটা।
শামিম বলল, মানে?
টিপু বলল, বল কী হয়েছে?
আমি তাকে দেখেছি।
কাকে দেখেছিস তুই?
ওই সাদা শাড়ি পরা তাকে।
শামিম বলল, কী বলছিস? কোথায় দেখলি? কখন দেখলি? 
ওই দালানের ভেতর দেখেছি। যখন আমরা বেরিয়ে আসছিলাম, তখন এক পলকের জন্য দেখেছি। পরিষ্কার মেঝেটুকুর ওপাশটায় হঠাৎ করেই একটুখানি দেখলাম। চোখের পলক ফেলতেই উধাও হয়ে গেল। এ জন্যই আমি একটু বেশি তাড়াতাড়ি, তোদের আগে আগে বেরিয়ে এলাম। ভয় লাগছিল। 
শামিম বলল, আমি তোর কথা বিশ্বাস করি।
তুইও দেখেছিস?
না, তা দেখিনি। ওই পরিষ্কার মেঝেটা দেখে আমার মনে হয়েছে ওখানে কেউ থাকে। নয়তো এমন ভাঙাচোরা ধসে পড়া ময়লা নোংরা বাড়ির শুধু ওইটুক অংশ অমন পরিষ্কার থাকবে কেন? থাকার কোনে কারণ নেই।
টিপু বলল, আমিও একমত। আমার মনে হয়েছে পুকুরঘাট দেখে। ভাঙা ঘাটটা নিশ্চয়ই কেউ ব্যবহার করে। নয়তো পুরো পুকুর কচুরিপানা আর জল ঘাসে ভর্তি, বেত ঝোপে ভর্তি, শুধু ঘাটলার কাছটা অমন পরিষ্কার থাকবে কেন? কেউ ব্যবহার না করলে এমন থাকার কথা না।
এবার কথা বললাম আমি। প্রথমে বললাম কাল রাতের অভিজ্ঞতার কথা। শুনে ওরা তিনজন হতভম্ব হয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। কেউ কোনো কথা বলতে পারল না। তারপর বললাম কিছুক্ষণ আগে পাওয়া নারীকণ্ঠের হাসির শব্দের কথা। এ কথা শুনে ওরা যেন আরও হতভম্ব। কে কী বলবে বুঝতে পারছে না। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। বললাম, তোরা যে যা দেখেছিস বা অনুভব করেছিস, আমার কাল রাতের অভিজ্ঞতা আর হাসির শব্দ শোনা অথবা এই বাড়ি নিয়ে বহু বহু বছর ধরে যেসব ঘটনা ঘটে আসছে, সেসবের অনেকটাই সত্য। এসব হচ্ছে প্রকৃতির অদ্ভুত খেলা। অনন্ত রহস্যময় খেলা। প্রকৃতি এই খেলা দীর্ঘদিন ধরে কোথাও কোথাও চালিয়ে যায়। এই বাড়িতে এই রহস্যময় খেলা চলতেই থাকবে।

অলংকরণ: তুলি