চক্রবৃদ্ধির চক্করে

‘এই যা ! ছুইট্যা গেল তো। ধর, ধর ! দরজা বন্ধ কর। পলাইতে যেন না পারে!’

বিটলা মামুনের গলায় এই হুঁশিয়ারি বাণী শুনে আমরা একযোগে ক্লাসের পেছনের বেঞ্চে তাকাই। দেখি কি, একটা ছোটখাটো জটলা ভেঙে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। এক দঙ্গল পিঁপড়ার মাঝখানে ছোট্ট একটা ঢিল ফেললে যেমন চারদিকে পিঁপড়া ছড়িয়ে যায়, অনেকটা সে রকম। এখানে মধ্যমণি পিঁপড়াটি হচ্ছে বিটলা মামুন।

আমাদের ক্লাসে মামুন দুইটা। একটা থাকে দত্তপাড়ায়, মোটাসোটা আর গোলগাল। ওকে আমরা ডাকি মোটকু অথবা বোতল মামুন। আর দ্বিতীয়টা এই বিটলা মামুন, থাকে নিশাত জুট মিলের কোয়ার্টারে। দুনিয়ায় এত অমায়িকভাবে কেউ বিটলামি করতে পারে, ওকে না দেখলে বোঝা সম্ভব না। বিটলামিতে যদি নোবেল প্রাইজ থাকত, তাহলে ওটা ওর নামেই চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হয়ে যেত।

বিটলা মামুন অবশ্য ‘ইন্দুর ব্যাপারী’ নামেও ক্লাসে খ্যাতি পেয়েছে। কারণ, ও বাসায় বেশ কিছু সাদা ইঁদুর পোষে। এই সাদা রঙের ইঁদুরগুলোকে আমরা বলি বিলাতি ইঁদুর। মাঝেমধ্যেই ওর নিজস্ব খামারে উত্পাদিত ইঁদুরছানা পকেটে পুরে ক্লাসে নিয়ে আসে। সেই নাবালক ইঁদুরটা মনিবের পকেট থেকে উঁকি মেরে জ্বলজ্বল দৃষ্টিতে আমাদের দেখে। বড় মায়া লাগে। তারপর দরদাম করে কোনো বন্ধু সেই ইঁদুর কিনে নিয়ে যায়। লেখাপড়ার ফাঁকে বিটলা মামুনের সাইড বিজনেস বেশ ভালোই জমে উঠেছে।

আজকের কাহিনিও সে রকম। দুই দিন আগেই ক্লাসমেট ফারুক একটা ইঁদুরছানা বুকিং দিয়ে রেখেছিল। আজ মামুন সেটা পকেটে করে নিয়ে এসেছে। ওকে ঘিরে ছিল তিনজন। ক্রেতা ফারুক ছাড়াও দর্শক আলমগীর আর বনি আমিন। পকেট থেকে বের করে মামুন ওটা হস্তান্তরের সময় ‘দেখি, দেখি’ বলে তিনজনই একযোগে হাত বাড়ায়। ব্যস, মওকা পেয়ে ইঁদুর বাবাজি ছোট্ট একটা লাফ দিয়ে মেঝেতে পড়ল। তারপর দে ছুট! সঙ্গে সঙ্গে বিটলা মামুনের সেই হুঁশিয়ারি বাণী—ধর, ধর!  ফারুক আর মামুন হামাগুড়ি দিয়ে ঢুকল বেঞ্চের নিচে। বনি আমিন তিন লাফে এসে ক্লাসরুমের দরজা লাগিয়ে দিল। বিলাতি ইঁদুরছানাটি এখন ক্লাসরুমেই আটকা।

এতক্ষণে ক্লাসের সবাই জেনে গেছে ব্যাপারটা। চিড়িয়াখানার খাঁচা থেকে বাঘ বেরিয়ে গেলে যতটা প্রতিক্রিয়া হতে পারে—এক ইঁদুরছানা ততটাই হিট! পায়ের আঙুলে কামড়ায় কি না, এই ভয়ে অনেকেই বেঞ্চের ওপরে দাঁড়িয়ে গেছে। মেয়েরা তো বেঞ্চে দাঁড়িয়েই চোখ বুজে ক্ষণে ক্ষণে চিত্কার করছে। মনে হচ্ছে, হ্যামিলিনের বাঁশিওয়ালা যেন দরজার সামনে দাঁড়িয়ে তার মোহন সুর ঢেলে হাজারেবিজারে ইঁদুর চালান করে দিচ্ছে আমাদের ক্লাসে, আর সবগুলো ইঁদুর বেঞ্চে উঠে এসে একযোগে মেয়েদের পায়ে কামড়াচ্ছে!

 পুরো ক্লাসরুমে মিনিট পাঁচেক ব্যাপক হাউকাউ বাধিয়ে ধরা পড়ল ইঁদুর বেচারা। মামুনই ওটা ধরে পকেটে পুরে ফেলল। হাঁফ ছেড়ে বাঁচল সবাই। বাইরেই পড়ে ছিল মিষ্টির খালি প্যাকেটের একটা ঢাকনা। সেটা কুড়িয়ে এনে ক্লাসরুমের পেছনে উপুড় করে ইঁদুরছানাটি ঢেকে রাখা হলো। ছুটির পরে ফারুক বাসায় নিয়ে যাবে। আপাতত একটা সুরাহা হলো।

প্রথম ক্লাসে আসার কথা মফিজ চক্রবৃদ্ধি স্যারের। না, না, মফিজ চক্রবর্তী না, আমরা তাঁর নাম দিয়েছি মফিজ চক্রবৃদ্ধি। এই নামের কারণ হচ্ছে তিনি চক্রবৃদ্ধি হারে শাস্তির মাত্রা বাড়ান। তাঁর কাছে লেখাপড়ার চেয়ে শৃঙ্খলার গুরুত্ব বেশি। ক্লাসে ঢুকেই গাল ফুলিয়ে বলবেন—স্ট্যান্ড আপ! ছাত্রছাত্রীরা দাঁড়াবে। তারপর আবার গাল ফুলিয়ে কমান্ড ডেলিভারি—সিট ডাউন! সবাই তখন বসবে। এই ওঠা আর বসাটা কিন্তু একতালে হতে হবে। স্যার বাজপাখির মতো চোখ ফেলে ক্লাসরুমের আনাচকানাচ দেখেন। সেই সঙ্গে কোন ছেলের মাথায় চুল বড়, কার হাতের নখ কাটা হয়নি, কে ফুল শার্টের হাতা গুটিয়ে দুই ভাঁজ করে স্টাইল ঝাড়ছে, দাঁত মাজা হয়নি কার—এসব দিকেও স্যারের কড়া নজর। আমাদের ক্লাসমেট হোসেন আলী তারাকে তো একদিন ক্লাস থেকেই বের করে দিলেন। বলে দিলেন—বালু দিয়ে দাঁত মেজে তারপর ক্লাসে ঢুকতে! বেচারা বালু খুঁজতে খুঁজতে ওর বাসায়ই চলে গেল!

তো শৃঙ্খলার ব্যাপারে যদি কেউ একটু বেচাল হয়েছে, তার আর রক্ষে নেই। আসামিকে কবজি ধরে টেনে হিড়হিড় করে মফিজ স্যার সামনে নিয়ে আসেন। তারপর বলেন, ‘ডিসিপ্লিন ভঙ্গ করলে আর থাকলটা কী? তোমাকে এক হাজার বেতের বাড়ি দেব।’ ছাত্রটি যদি একটু গাঁইগুঁই করে আত্মপক্ষ সমর্থন করতে চায়, স্যার আরও রেগে বলেন, ‘পাঁচ হাজার বেত্রাঘাত।’ আরেকটু যুক্তি দাঁড় করাতে গেলে শাস্তির পারদও চড়চড়িয়ে বাড়ে, ‘পঁচিশ হাজার বেত।’ এরপর মাফ চাইলেও নিস্তার নেই, ঘোষণা আসে, ‘প...ঞ্চা...শ হাজার!’ কথা বললেই তিনি শাস্তির মাত্রা বাড়ান চক্রবৃদ্ধি হারে। এই আমাদের মফিজ চক্রবৃদ্ধি স্যার। তাঁর মাথার চুল যেন স্টেডিয়ামের ঘাস কাটার মেশিন দিয়ে ছাঁটা, দেখলে মনে হয় বড়সড় একটা কালো কদমফুল। মাঝারি উচ্চতা, স্বাস্থ্য ভালো, ভুঁড়িটাও বেশ পেল্লাই। সব মিলিয়ে শরীরটা বেশ গোলগাল।

চক-ডাস্টার, হাজিরা খাতা নিয়ে মফিজ স্যার ক্লাসরুমে ঢুকলেন। ঠিক যেন একটা পাঁচ নম্বরি ফুটবল গড়াতে গড়াতে দরজা গলে আমাদের সামনে এসে থামল! ক্লাসে পা দিয়েই তিনি বললেন—স্ট্যান্ড আপ! ঠিক একই সময় পেছন থেকে বিটলা মামুনের অস্ফুট গলা শোনা গেল, ‘আবার পলাইছে!’ যার ফলে আজ স্যারের স্ট্যান্ড আপের অ্যাকশনটাও হলো ডাবল। ছাত্রছাত্রী সবাই তো দাঁঁড়ালই, অনেকেই দাঁড়িয়ে গেল বেঞ্চের ওপরে! স্যার তো অবাক! এ আবার কোন ধরনের শৃঙ্খলা! ক্লাসরুমের নিয়ন্ত্রণ তাঁর বাইরে চলে যাচ্ছে আঁচ করতে পেরে স্যার হিটলারের মতো গম্ভীর হয়ে কমান্ড করলেন, ‘সিট প্রোপারলি’! কিসের কী প্রোপারলি? সিটেই তো কেউ নেই! কেউ লো বেঞ্চে, কেউ হাই বেঞ্চে দাঁড়ানো। কেউ উঁকি দিয়ে বেঞ্চের নিচে দেখছে, কেউ বেঞ্চের ওপরেই ভয়ে লাফাচ্ছে। স্যার এবার রেগেমেগে প্রশ্ন করলেন, ‘কী হচ্ছে এসব? ব্যাপারটা কী?’

: ‘ব্যাপার পরে জানবেন স্যার, আগে আপনিও টেবিলে উঠে পড়েন।’ ফস করে বলে ওঠে আলিনূর।

: ‘আহ্্, ঘটনা বলবে তো!’—অন্য সময় আলিনূরের এই বেমক্কা জবাবে মফিজ স্যার অন্তত পাঁচ হাজার বেত্রাঘাত ঘোষণা করতেন। ঘটনার আকস্মিকতায় আজ স্যারও নরম।

: ‘স্যার, ক্লাসরুমে একটা ক্ষুধার্ত ইঁদুর টহল দিচ্ছে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির, মানে বিলাতি ইঁদুর। শ্বেতাঙ্গ।’— ফার্স্ট বয় খোরশেদ ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে পরিস্থিতির জটিলতা ব্যাখ্যা করে।

: অ্যাই চুপ, একদম চুপ! ক্লাসে কেন ইঁদুর আসবে? আর যদি আসেও, এত ভয় কিসের?

স্যার ইঁদুরবিষয়ক তদন্ত শুরু করলে বিটলা মামুন ফেঁসে যাবে। তাই নিজের বিপদ কাটাতে সে প্রসঙ্গ ঘোরাতে চায়, ‘ভয়ের কিছু নাই। হয়তো পথ ভুলে চলে এসেছে, নিজেই চলে যাবে। তা ছাড়া সাদা ইঁদুর কামড়ায় না।’

: ‘কে বলেছে কামড়ায় না?’ মেয়েদের মধ্য থেকে মিনা ফোড়ন কাটে, ‘সাদা ইঁদুর কি দাঁত বাড়িতে জমা রেখে এসেছে?’

: ‘হুমম, কালো আর ধলো বাহিরে কেবল...’। আলিনূর তাল মেলায়।

: ‘অ্যাই ! কোনো কথা না। সব পাকনা হয়ে গেছো ?’ স্যার রেগে যান।

এই হট্টগোলের মধ্যে ইঁদুরটা যে কখন দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেছে, কেউ দেখেনি। মামুন আর ফারুক সব কটা বেঞ্চের তলায় তল্লাশি চালিয়ে ঘোষণা করল—ক্লাসরুম ইঁদুরমুক্ত। সবাই এবার নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে। আমার পাশ দিয়েই ওরা পেছনের বেঞ্চে বসতে যাচ্ছিল। টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে কেনা ইঁদুরটা এভাবে গায়েব হয়ে যাওয়ায় ফারুকের মুখটা কালো। আরেকটু হলেই কেঁদে দেবে। ফিসফিস করে বিটলা মামুন ওকে আশ্বস্ত করে, ‘নো টেনশন, তোর ট্যাকা ফিরত দিমু।’

যেন ছোটখাটো একটা যুদ্ধের পর ক্লাসের সবাই থিতু হওয়া শুরু করল। স্যারও রাগ-উত্কণ্ঠা ঝেড়ে ফেলে হঠাত্ কেমন যেন হাসিখুশি হয়ে যান। আমাদের কারও কারও কাছে ব্যাপারটা কেমন যেন রহস্যময় ঠেকে। স্যারের তো এত তাড়াতাড়ি মুড বদলানোর কথা না! কিন্তু রহস্যের খেইটা ঠিক ধরতে পারি না।

টেবিলে চক-ডাস্টার রেখে স্যার আবার গাল ফুলিয়ে কমান্ড শুরু করলেন—স্ট্যান্ড আপ! ক্লাসের সবাই একযোগে দাঁড়াল। হূষ্টচিত্তে স্যার বললেন—সিট ডাউন! সবাই একতালেই বসে পড়ল। এরপর যথারীতি হুকুম এল—সিট প্রোপারলি! বেঙ্গল টাইগার যেমন সোজাসুজি সাঁতরে নদী পার হতে গিয়ে একটু বেলাইন হলেই আবার প্রথম থেকে শুরু করে, এখানেও সে রকম ব্যাপার হচ্ছে। আগেরবার স্ট্যান্ড আপ, সিট ডাউন ঠিকমতো হয়নি কি না! মফিজ স্যার নিজেকে বাঘ ভাবতে পছন্দ করেন।

স্যার নিজেও বালু দিয়ে দাঁত মাজেন কি না কে জানে! ঝকঝকে দাঁতের পাটি বের করে হাসতে হাসতে বললেন— 

: শুনেছি, সাদা ইঁদুর ঘরে থাকলে দেশি ইঁদুরের উপদ্রব থাকে না। বিরাট উপকারী। কথাটা কি সত্য?

: ‘জি স্যার। পুরাই সত্য।’ বিটলা মামুন গদগদ হয়ে যায়।

: তুমি শিয়োর? কীভাবে জানলা?

: আমি বাসায় পুষি।

: বেশ। ভাবছি, আমিও বাসায় নিয়ে পুষব। কোথায় পাওয়া যাবে?

: আমি দেব, স্যার।

এবার রহস্যের সুতা খুঁজে পেলাম। সেই সুতা বেয়ে যেন ধেয়ে আসছে বজ্রপাত! বিটলা মামুইন্যা তো খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে! আরেকটু অসাবধান হলেই একেবারে পপাত ধরণিতল!

পাকা শিকারির মতো বড়শি খেলিয়ে যাচ্ছেন স্যার—

: তোমার কি যথেষ্ট ইঁদুর আছে?

: ‘অবশ্যই স্যার। এই ক্লাসেই তো কয়েকজনকে দিয়েছি।’ ফাঁদে পা দিয়ে ফেলেছে মামুইন্যা।

: ‘এত বেশি হয়ে গেছে?’ স্যারের চোখ জ্বলজ্বল করছে আবিষ্কারের আনন্দে।

: ‘বলব কী স্যার, চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়ে।’ বলেই জিব কাটে মামুন। স্যারের খেতাবটাই মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে যে! আমার পাশে বসা দিদারুলকে ফিসফিসিয়ে বললাম, ‘মামুইন্যা ফেঁসে গেছে রে। স্যারের টোপটা ও ভ্যাদা মাছের মতো গিলে ফেলেছে।’

ভিলেনের মতো হাসিমাখা মুখে স্যার এবার বললেন, ‘এই তো ধরা পড়লা। তাহলে ক্লাসে তুমিই ইঁদুর আমদানি করো?’ মামুনের চেহারার বাতিটা যেন এক ফুঁতে নিভিয়ে দিল কেউ। অন্ধকার মুখে বেচারা দাঁড়িয়ে আমতা-আমতা করতে থাকে। এবার স্যার চিবিয়ে চিবিয়ে বলেন, ‘এই স্কুল অনলি ফর মেরিটোরিয়াস স্টুডেন্ট। আমি চাই তোমাদের হাত শুঁকলে জিরার ঘ্রাণ বের হবে। আর তোমরা কিনা হাতে চিকা নিয়া ঘোরো! স্কুলটাকে চিড়িয়াখানা বানাতে চাও?’

ক্লাস ক্যাপ্টেন আলিনূরকে ডাকলেন স্যার। বললেন, ‘মোটা দেখে দুইটা বেত আনো তো, আজকে ইঁদুরের চোরাচালানি বন্ধ করে দেব। পাঁচ হাজার বেত্রাঘাত।’

হঠাত্ মরিয়া হয়ে মামুন শেষ চেষ্টা করে—

: স্যার, আপনার ইঁদুর পোষার সঙ্গে আজকের ঘটনার কী সম্পর্ক?

: ‘আবার কথা বলে! দশ হাজার বেত!’ শুরু হয়ে গেল চক্রবৃদ্ধি।

: না স্যার, দশ হাজার নয়, পুরো এক লাখ করে দেন। কিন্তু...

এবার স্যার নিজেই ভড়কে যান। পঁচিশ হাজার, পঞ্চাশ হাজারের কোটা ডিঙিয়ে একেবারে এক লাখ বেত্রাঘাতের ঘোষণা! তা-ও আবার আসামির নিজের মুখেই!

: ‘কিন্তু আবার কী? কী বলতে চাও তুমি?’ স্যার দোটানায় পড়ে যান।

: ‘আপনি বলছেন আমি আজ ক্লাসে ইঁদুর এনেছি। ক্লাসের কেউ দেখেছে?’ খুব ঠান্ডা মাথায় চাল দিল মামুন।

: টাটকা ঘটনাটাই তুমি ঘুরিয়ে ফেলতে চাও? সবাই বেঞ্চের ওপর দাঁড়াল কেন?

: ‘ভয়ে এ রকম করেছে। কেউ ইঁদুর দেখেনি, শোনা কথায় কান দিয়ে অস্থির হয়ে গেছে।’ এবার মামুনের গলায় বেশ আত্মবিশ্বাস। শেষ চালটাও দিল পাকা খেলোয়াড়ের মতো, ‘সবাই যখন বেঞ্চের ওপর দাঁড়িয়ে, তখন ফারুক, আলমগীর আর বনি আমিনকে নিয়ে আমি পুরো ক্লাসরুম চেক করেছি। আমরা কোনো ইঁদুরের ছায়াও দেখিনি। বিশ্বাস না করলে স্যার ওদের জিজ্ঞেস করুন।’

এবার আমি মনে মনে বিটলা মামুনের কদমবুসি করে ফেললাম। কী চমত্কারভাবেই না বলটা বাকি তিন বন্ধুর কোর্টে ঠেলে দিল। এই তিনজনই আজকের ইঁদুরকাণ্ডের সাক্ষী। আর কেউ ইঁদুরটা দেখেনি। সুতরাং রাজসাক্ষীদেরই মামুন হাত করে ফেলেছে। স্যার তাকালেন ওই তিনজনের দিকে। কিন্তু ওদের মস্তিষ্কে তো মামুনের মেসেজ ডাউনলোড হয়ে গেছে। ওই তিনজনের মধ্যে বনি আমিনটা পরিস্থিতি সামাল দিতে পারে ভালো। সুবোধ বালকের মতো ও বলল, ‘মামুনের কথাই সত্য স্যার। মেয়েদের চিত্কার শুনে, বিশেষ করে মিনা বেঞ্চে উঠে চিল্লানোর পর আমরা চারজন মিলে আনাচকানাচে অনেক খুঁজেও ইঁদুর পাই নাই।’ বুঝলাম, মিনা যে ঝগড়া করতে চেয়েছিল, তার প্রতিশোধও এবার নেওয়া হবে।

স্যার পুরো বিভ্রান্ত হয়ে গেলেন। মেয়েদের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘ইশ্্ কী সাহসী রে! না দেখেই ভয়ে আধমরা।’ তারপর মিনাকে বললেন, ‘আর যদি কখনো মিছামিছি আতঙ্ক ছড়াও, তাহলে এক হাজার বেত।’

: ‘স্যার, এইখানে কারচুপি...’ মিনা বলতে গিয়েও থেমে যায় স্যারের ধমকে—

: ‘আবার কথা বলে! দশ হাজার বেত্রাঘাত!’ রেগে বললেন চক্রবৃদ্ধি স্যার।

অথচ ক্লাসে তিনি বেত ছাড়াই এসেছেন!

 অলংকরণ : মাহফুজ রহমান