আমার নাম রঙিন।
আমার একটা বকমামা আছে।
বকমামা বক পাখি না, আমার মামা।
আমি আর আমার দিপ ভাই তাকে বকমামা ডাকি।
আমার দিপ ভাই হলো রূপকথা। দিদি ভাই। আমি ডাকি দিপ ভাই।
দিপ ভাই আর্ট করতে পারে।
আমার বাবাইও আর্ট করতে পারে।
মাও পারে।
বকমামাও পারে।
আমিও পারি।
কোন দিন আমার একটা জন্মদিন ছিল। সবাই এসেছিল। তারা আমাকে কত রঙের বাক্স আর কত ড্রয়িং খাতা যে দিয়েছে! চকলেটের বাক্স আর জামা আর প্যান্টও দিয়েছে। কিন্তু একটা দুঃখের কথা আর কী বলব? আমার জন্মদিনে আমার বকমামা আসেনি। এখনো একবারও আসেনি।
মা বলেছে, বকমামা গেছে কিউবায়।
‘কিউবা কী, মা?’
‘কিউবা একটা দেশ।’
‘আমাদের দেশ?’
‘আমাদের দেশ হতে যাবে কেন? আমাদের দেশ তো বাংলাদেশ।’
আমাদের দেশ বাংলাদেশ। এই কথা তো আমি জানি।
‘কিউবা তবে কাদের দেশ মা?’
‘কিউবার মানুষদের।’
‘বকমামা কি কিউবার মানুষ?’
‘ওহ্! এই মেয়েটা এত প্রশ্ন করে কেন? রূপকথা তো এত প্রশ্ন করত না। রূপকথা! রূপকথা! রঙিনকে এখান থেকে নিয়ে যাও তো। আমাকে কাজ করতে দিচ্ছে না।’
মার এই কথাটাই আমি বুঝি না! রান্নাবান্না করা কি কাজ? ঘরের ঝুল ঝাড়া কি কাজ? ছবি আর্ট করা কি কাজ? মা তো শুধু এই সবই করে। বাবাকে না অফিসে যেতে হয়, অফিসে অনেক কাজ করতে হয়। দিপ ভাইও সকালে ইশকুলে যায়। মা তো অফিসেও যায় না, ইশকুলেও যায় না। শুধু শুধু আমাকে বলে।
দিপ ভাই পড়ে নালন্দা ইশকুলে। আমিও পড়ব। দিপ ভাই এখন আমাকে পড়ায়। আমি অ আ ক খ পারি। এ বি সি ডি, এক দুই তিন, ওয়ান টু থ্রি পারি। আমার নাম রঙিন, বলতে পারি। মাই নেম ইজ রঙিন, বলতে পারি। বাংলায় আর ইংলিশে বানান করে রঙিন লিখতে পারি। বাংলায়, র, ঙ-এ হ্রস্ব ই-কার আর দন্ত্য-ন। ইংলিশে, আর ও এন জি আই এন।
কাল দুপুরে খুব বৃষ্টি হয়েছিল। আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। এখন উঠলাম। উঠে দেখি মা আমার পাশে নেই। দিপ ভাইও নেই। ড্রয়িং রুমে কারা অনেক হাসছে। কারা হাসছে?
ড্রয়িং রুমে ঢুকে দেখলাম, এইরে! চুল অনেক লম্বা হয়ে গেছে, দাড়ি অনেক লম্বা হয়ে গেছে, কিন্তু এটা তো বকমামা, হ্যাঁ। বকমামার পাশে ও কে? এলিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ডের এলিস? বাবাইয়ের ল্যাপটপে ‘এলিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড’ আমি আর দিপ ভাই দেখেছি একদিন।
ড্রয়িং রুমে বাবাইও আছে। মাও আছে। দিপ ভাইও আছে।
তারা হাসছে।
আমাকে দেখলই না।
আমি বললাম, ‘বকমামা!’
তারা আর হাসল না একটুও।
বকমামা আমাকে দেখল।
‘আররে! রঙিন বিবি!’
আররে, আমি দেখি বকমামার কোলে!
বকমামা বলল, ‘রঙিন বিবি দেখি এই কদিনে রূপকথার থেকেও বড় হয়ে গেছেন। ক্লাউডিয়া, শি ইজ রঙিন। কালারফুল।’
এলিসের নাম কাউপিয়া তবে।
কাউপিয়া বলল, ‘হ্যালো রঙিন।’
আমি বললাম, ‘হ্যালো কাউপিয়া।’
সঙ্গে সঙ্গে সবাই হেসে উঠল এত।
কী হলো?
আমি একদম কিছু বুঝতেই পারলাম না।
দিপ ভাই বলল, ‘র-ঙি-ন!’
কী হয়েছে?
‘কাউপিয়া না, ক্লাউডিয়া বলো। ক্লাউডিয়া আন্টি।’
ও-ও-ও। কাউপিয়া না কাউডিয়া তবে। আমি বললাম, ‘কাউডিয়া আন্টি।’
আবার তারা হাসল। বকমামা, বাবাই আর মা। কাউডিয়া আর দিপ ভাই হাসল না।
দিপ ভাই বলল, ‘ওহেহা রে! ক্লাউডিয়া আন্টি, রঙিন। ক্লাউডিয়া আন্টি বলো।’
কী মুশকিল। আমি তো কাউডিয়া আন্টিই বললাম।
বকমামা বলল, ‘ও তো ঠিকই বলেছে, রূপকথা।’
দিপ ভাই বলল, ‘কী-ই-ই? কাউডিয়া আন্টি ও?’
বাবাই বলল, ‘কেন? মেঘলা আন্টি বললেই হয়।’
দিপ ভাই বলল, ‘মেঘলা আন্টি?’
আমিও বললাম, ‘মেঘলা আন্টি।’
কাউপিয়া বা কাউডিয়ার থেকে আমার মেঘলা আন্টিই ভালো।
বকমামা বলল, ‘দারুণ-তো! দারুণ-তো! আমার তো মাথায়ও আসেনি একবারও। দারুণ তো! হেই ক্লাউডিয়া, ডু ইউ নো দ্য বাংলা মিনিং অব ইয়োর নেম? মেঘলা। ক্লাউড, মেঘ। ক্লাউডিয়া, মেঘলা।’
কাউডিয়া...না, মেঘলা আন্টিও বলল, ‘মেঘলা!’
মেঘলা আন্টি বকমামার বন্ধু। সুইটজারল্যান্ড বলে একটা দেশের মানুষ।
বাবাই বলল, ‘মিষ্টি যার মাটি, সেই দেশটা, বুঝলি তো মেয়েরা?’
দিপ ভাই বলল, ‘হুঁ।’
আমিও বললাম, ‘হুঁ।’
বুঝেছি তো। মিষ্টি মাটির একটা দেশ আছে, সেই দেশটা হলো সুইটজারল্যান্ড। সেই দেশের মানুষ মেঘলা আন্টি। আশ্চর্যের কথা, আর্ট করতে পারে মেঘলা আন্টিও। আর কত কিছু বানাতেও পারে। সবচেয়ে আশ্চর্যের কথা হলো কী, সব সময় সবুজ রঙের কিছু মাটি থাকে তার ব্যাগে। চকলেটের কৌটার মতো একটা কৌটায়। সেই মাটি দিয়ে কত কি যে আমাকে আর দিপ ভাইকে বানিয়ে দেখাল মেঘলা আন্টি। আমি আর দিপ ভাই তো অবাক।
বাবাই বলল, ‘এই মাটিকে বলে মডেলিং ক্লে।’
মডেলিং কে। আচ্ছা। মেঘলা আন্টি অল্প অল্প আমাদের মতো কথা বলতে পারে। দিপ ভাইকে আর আমাকে বলল, ‘তোমরা দুই বোন মি-ষ্টি মি-ষ্টি আচে।’
আমাদের সঙ্গে রাতের খাবার খেয়ে চলে গেল বকমামা আর মেঘলা আন্টি। এর মধ্যে বৃষ্টিও হলো একবার। আমি বলললাম, ‘কাল দুপুরে বৃষ্টি হয়েছিল। আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।’
দিপ ভাই বলল, ‘ওহ হো রে! কাল দুপুরে না, রঙিন। বৃষ্টি আজ দুপুরে হয়েছে।’
আমি বললাম, ‘ইহ্! বৃষ্টি কাল দুপুরে হয়েছে।’
দিপ ভাই বলল, ‘তোমার মাথা! তুমি তাহলে দুই দিন ঘুমিয়েছ নাকি?’
দিপ ভাই যে কী বলে না বলে।
আজ আমি দিপ ভাইয়ের সঙ্গে ঘুমাব। দিপ ভাইয়ের ঘরে। না, বাবাই বলেছে, ঘরটা আমারও। আমার আর দিপ ভাইয়ের ঘর। আমরা আমাদের ঘরে এখন। বকমামা আর মেঘলা আন্টি যে কত কত কিছু দিয়ে গেছে আমাদের। রঙের বাক্স, চকলেটের বাক্স তো আছেই, সবচেয়ে মজার হয়েছে দিপ ভাইয়ের জন্য অ্যাংরি বার্ডস আর আমার জন্য একটা রোবট। সবুজ রঙের রোবটটা বাচ্চা। ছোটমোট একটা বাবুর মতো দেখতে। আমাদের মতো কথা বলতে পারে। অ্যাংরি বার্ডস নিয়ে কাল খেলব, দিপ ভাই আর আমি অনেকক্ষণ রোবটটার সঙ্গে কথা বললাম
দিপ ভাই বলল, ‘হ্যালো রোবট।’
আমিও বললাম, ‘হ্যালো রোবট।’
রোবট বলল, ‘হ্যালো রূপকথা। হ্যালো রঙিন।’
‘এমা! তুমি আমাদের নাম জানো নাকি?’
‘তোমাদের সম্পর্কিত সব তথ্য আমি জানি। এসব তথ্য এবং তোমাদের ভাষা, বাংলা, আমার মেমরিতে ইনস্টল করিয়ে আনা হয়েছে।’
এসব আবার কি রকম কথারে, বাবা! আমি তো একদম কিছুই বুঝলাম না। দিপ ভাই মনে হয় বুঝল। আমার দিপ ভাই সব বোঝে। ইশকুলে পড়ে তো। আমি ইশকুলে পড়লে সব বুঝব।
দিপ ভাই বলল, ‘বকমামা ইনস্টল করিয়েছে?’
‘হ্যাঁ, তোমাদের বকমামা।’
রোবট বলল।
‘ইস্! বকমামার কী বুদ্ধি!’
আমি বললাম।
রোবট বলল, ‘হ্যাঁ। তোমাদের বকমামার অনেক বুদ্ধি। বকমামিরও অনেক বুদ্ধি।’
দিপ ভাই বলল, ‘বকমামি! বকমামি কে?’
‘ওই তো তোমাদের মেঘলা আন্টি।’
‘মেঘলা আন্টি বকমামি!’
দিপ ভাই আর আমি একসঙ্গে মনে হয় চেঁচিয়ে উঠলাম।
বাবাই আর্ট করে অনেক রাত অব্দি। আর্ট করার ঘরটা হলো স্টুডিও। বাবাই স্টুডিও থেকে বলল, ‘এই মেয়েরা! কী হয়েছে?’
দিপ ভাই বলল, ‘কিছু না, বাবাই।’
বাবাই বলল, ‘কিছু না বাবাই! রাত বাজে এখন বারোটা তেতাল্লিশ, ঘুম ধরে না কেন রে তোদের?’
‘ধরবে না, বাবাই।’
দিপ ভাই বলল। এত আস্তে বলল, বাবাই শুনল না। কথাটা বলে দিপ ভাই হাসল। এত আস্তে হাসল বাবাই শুনল না। আমি হাসলাম। আস্তেই তো হাসলাম। কিন্তু বাবাই শুনে ফেলল যে।
‘হাসে কে রে? কোন মেয়েটা?’
বাবাই বলল।
দিপ ভাই বলে দিল, ‘তোমার ছোট মেয়ে হাসে, বাবাই।’
বাবাই আমাকে বকল না মোটেও। বলল, ‘ভালো। ঘুমের আগে একটু হেসে নেওয়া ভালো। এতে করে ঘুম ভালো হয়। এখন আপনাদের ভালো ঘুম হোক।’
দিপ ভাই বলল, ‘বাবাই?’
‘কী?’
‘তুমি ঘুমের আগে হাসো?’
‘হাসি তো। তোদের মাকে দেখি আর হাসি।’
‘মা হাসে?’
‘হ্যাঁ-এ-এ, হাসে। আমাকে দেখে আর হাসে।’
দিপ ভাই আস্তে করে বলল, ‘এ কিরে বাবা!’
বাবাই বলল, ‘যথেষ্ট হয়েছে। খেলা বন্ধ করে এখন ঘুম দেন আপনারা। রোবটকে বলেন, শুভরাত্রি, রোবট।’
আমরা বাবাইয়ের কথা শুনি। রোবটকে বললাম, ‘শুভরাত্রি, রোবট।’
রোবট বলল, ‘শুভরাত্রি, রূপকথা। শুভরাত্রি, রঙিন।’
আমি কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম।
ঘুমিয়ে পড়ার আগে দিপ ভাই বলল, ‘আমি এখন তোর দিকে তাকিয়ে হাসি?’
‘কেন রে, দিপ ভাই?’
‘তুইও আমার দিকে তাকিয়ে হাসি দে।’
‘কেন-ও?’
‘ঘুম ভালো হবে।’
বলে দিপ ভাই আস্তে হাসল। আমিও আস্তে হাসলাম। বাবাই শুনল না। হেসে দিয়েই ঘুম ধরে গিয়েছিল। রোবটের বাংলা যন্ত্রমানব। দিপ ভাই বলেছে। আর রোবট বানান হলো, আর ও বি ও টি। বকমামা বলেছে আমি যখন ঘুমাব তখন জিরিয়ে নেবে আমার রোবটটা। সিস্টেম করে দেওয়া আছে। সুইচ অফ করে দিতে হবে শুধু। দিপ ভাই অফ করে দিয়েছে।
ঘুমিয়ে আমরা ঘুমের দেশে থাকি। ঘুমপাড়ানি মাসি কি পিসির বাড়িতে। এই দুজন তো ঘুমের দেশে থাকেন। থুত্থুরে দুই বুড়ি। বাচ্চা-কাচ্চারা সবাই ঘুমিয়ে পড়লে পরে এরা দুজন বসে পান দোক্তা খান। বাবাই বলেছে। ঘুমপাড়ানি মাসি হলেন মায়ের বড়দি। ঘুমপাড়ানি পিসি হলেন বাবার বড়দি। আমি সেই মাসি কি পিসির কাছে ছিলাম। ডাক দিল কে?
‘রঙিন! রঙিন! রঙিন, শুনছ?’
আরে! আরে! রোবটটা দেখি। কিন্তু সবুজ না, এ দেখি হলুদ। ঘুমিয়েছিল নাকি? ঘুমিয়ে সবুজ থেকে হলুদ হয়ে গেছে? দিপ ভাইকে বলব? দিপ ভাই তো ঘুমাচ্ছে।
হলুদ রোবটটা বলল, ‘রঙিন!’
কী বলব? বললাম, ‘কী? বল?’
‘আমি চলে যাচ্ছি।’
‘চলে যাচ্ছ? কোথায়?’
‘আমাদের গ্রহে।’
‘তোমাদের গ্রহে? তোমাদের গ্রহ আবার কোনটা?’
‘সে অনেক দূরে, রঙিন। তোমাদের এই ছায়াপথে না।’
‘ছায়াপথ! ছায়াপথ কী?’
‘ছায়াপথ? কী করে বোঝাই? বড় হলে তুমি নিজেই জানতে পাবে।’
‘আমি তো বড় হয়ে গেছি।’
‘আরও বড় হবে।’
‘আরও বড় হব? কত বড় হব? দিপ ভাইয়ের সমান?’
‘আরও বড়।’
‘যাহ! দিপ ভাইয়ের চেয়ে বড় আমি কোন দিনই হতে পারব না।’
‘তোমার দিপ ভাইও আরও বড় হবে। তুমিও আরও বড় হবে। যাক, আমার সময় কম। যাই, রঙিন।’
বলে হাঁটা দিচ্ছিল রোবটটা। আমি বললাম, ‘এই! এই! এই! চলে যাচ্ছ কেন? চলে যাচ্ছ কেন? বকমামা না তোমাকে এনে দিয়েছে। তুমি চলে গেলে আমি আর দিপ ভাই কাকে নিয়ে খেলব, বল?’
‘তোমাদের রোবটটা থাকবে, রঙিন। এই যে দেখ।’
আমি দেখলাম। দিপ ভাইয়ের বইয়ের র্যাকে রোবটটা। কিন্তু এ-ও তো সবুজ রঙের না দেখি। নীল রঙের। বকমামা এই রোবটটা দিয়েছে? সবুজ রঙের ছিল তো এ। সত্যি সত্যি সবুজ রঙের ছিল। নীল হয়ে গেল কী করে আবার? আর এই হলুদ রোবটটা, এটা তো বকমামা দেয়নি, কোত্থেকে এল এ?
‘তোমাকে তো বকমামা দেয়নি। তুমি এলে কোথা থেকে?’
আমি বললাম।
হলুদ রোবট বলল, ‘আমি ছিলাম তোমাদের রোবটের মধ্যে।’
‘কী-ই-ই-ই?’
‘হ্যাঁ, তোমাদের রোবটটা সবুজ ছিল না বলো? আমি তো তার ভেতর থেকে বের হয়ে গেছি, এ জন্য না নীল হয়ে গেছে বেচারি। নীল রং আর হলুদ রং মিলে সবুজ রং হয় না? হলুদ রং না থাকলে সবুজ রং আর সবুজ রং থাকে? শুধু তো নীল রংটাই থাকবে, বল।’
‘ইসরে, হলুদ রোবট! আমি তো তোমার কথা তো একটুও বুঝতে পারছি না, হ্যাঁ?’
‘এই দেখ।’
কী দেখব?
দেখি দিপ ভাইয়ের বইয়ের র্যাকে নীল রোবটের পাশে হলুদ রোবটটা। মাত্র না সে ছিল এখানে! আবার বলল, ‘দেখ।’
যা দেখলাম খুবই আশ্চর্যের কথা। সুইচ অফ করা নীল রোবটের ভেতর ঢুকে গেল হলুদ রোবটটা। আর নীল রোবট সবুজ হয়ে গেল। আর বলল, ‘বিশ্বাস হলো?’
আমি বললাম, ‘কোথায় তুমি?’
বলল, ‘দেখলে তো। নীল রোবটের ভেতর ঢুকে গেছি।’
‘সত্যি? সত্যি?’
‘সত্যি, সত্যি। আবার দেখ।’
হলুদ রোবটটা দেখলাম বের হয়ে এল সবুজ রোবটের ভেতর থেকে। সবুজ রোবটটা আবার নীল হয়ে গেল। কী ক্লা!
‘আমাদের বিজ্ঞানীদের ভুলে এ রকম বিচ্ছিরি ক্লাটা ঘটে গেছে, বুঝেছ? এখন টনক নড়েছে ওনাদের। স্পেসশিপ পাঠিয়ে দিয়েছেন, আমাকে তোমাদের গ্রহ থেকে নিয়ে যেতে। চলে যাচ্ছিলাম, ভাবলাম তোমার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে যাই।’
‘দিপ ভাইয়ের কাছ থেকে বিদায় নেবে না?’
‘স্বপ্নে নিয়েছি। তোমার দিপ ভাই ঘুমাচ্ছে, ঘুমাক। যাই, রঙিন। বিদায়, রঙিন।’
কী যে ঘটল, কিছুই বুঝলাম না। অদ্ভুত রঙের একটা আলো কোত্থেকে দিপ ভাই আর আমার ঘরে ঢুকে পড়ল। নিমেষের জন্য। এই দেখলাম, এই নেই। আলোও নেই, রোবটও নেই। হলুদ রোবট। কী করি? কী করব? আমার আবার ঘুম ধরে গেল।
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি দিপ ভাই আর মা কথা বলছে।
‘রোবটটা সবুজ ছিল না, মা?’
দিপ ভাই বলল।
মা বলল, ‘কি জানি, বাবা! নীলই ছিল মনে হয়, নীলই আছে।’
‘না মা, সবুজ ছিল।’
‘আচ্ছা সবুজ ছিল। নীল হয়ে গেছে।’
আমিও নীল রোবটটা দেখলাম। আমার কিচ্ছু মনে পড়ল না।