কিশোর মুক্তিযোদ্ধা সমগ্র

কিশোর বয়সে আমরা কী করি? ব্যাগ কাঁধে স্কুলে যাই, ব্যাট হাতে ক্রিকেট খেলতে যাই মাঠে। কেউ দিনরাত ঘরে শুয়েবসে গল্পের বই পড়ি। কেউ আবার ফিফা গেমসে গোলের পর গোল দিয়ে উল্লাসে মাতিয়ে তুলি পুরো বাড়ি। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের মতো বয়সী অনেক কিশোরই অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিল। অনেক কিশোর যোদ্ধা একাই কাঁপিয়ে দিয়েছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ভিত। আমরা কি জানি সেই কিশোর যোদ্ধাদের কথা? স্কুলপড়ুয়া কিশোরেরা দেশকে স্বাধীন করার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করছে—এমন ইতিহাস পৃথিবীতে খুব বেশি নেই। ভেবে দেখো, স্কুলের তিন শিক্ষার্থী কোনো রকম অস্ত্র ছাড়াই ফেরি অচল করে দিয়েছিল পাকিস্তানি সেনাদের ঠেকানোর জন্য। কী সাহস ছিল সেই কিশোরদের, কল্পনা করা যায়? কতটা সাহসী হলে প্রচণ্ড গুলির মুখে শত্রুর বাঙ্কারে গ্রেনেড হামলা করতে পারে, তাদের ঘায়েল করতে পারে নবম শ্রেণিপড়ুয়া একজন ছাত্র? অবিশ্বাস্য, বিস্ময়কর মনে হলেও ঠিক এই ঘটনাগুলো ঘটেছিল আমাদের মুক্তিযুদ্ধে। অসংখ্য শিশু-কিশোর অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিল দেশকে শত্রুমুক্ত করতে। অনেকেই খেতাবপ্রাপ্ত হয়েছে তাদের অসীম সাহসিকতার জন্য। তেমন ৭৫ জন কিশোর মুক্তিযোদ্ধার অভিজ্ঞতা নিয়েই সাজানো হয়েছে ডেইলি স্টার বুকস থেকে প্রকাশিত কিশোর মুক্তিযোদ্ধা সমগ্র বইটি। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে ঘুরে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করে বইটি লিখেছেন লেখক মোস্তফা হোসেইন। ৭১টি শিরোনামে ৭৫ জন মুক্তিযোদ্ধার সাহসিকতার কথা আছে এই বইয়ে। ‘ফেরি অচল করে দিল স্কুলছাত্র সোলাইমান মিয়া’, ‘চার রাজাকার ধরা পড়ে মানিকের হাতে’, ‘ব্রিজ উড়িয়ে দিলেন রফিকুল ইসলাম বীর প্রতীক’, ‘সম্মুখসমরে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র আব্দুল খালেক’—এই শিরোনামগুলো দেখলে বইটি না পড়ে রেখে দেওয়া খুব কঠিন। আর একবার পড়তে শুরু করলে চোখের সামনে যেন ভেসে ওঠে সেই উত্তাল সময়। তোমরাও পড়ে ফেলো বইটি। কিশোর মুক্তিযোদ্ধাদের দেশপ্রেম আর সাহসিকতা যে তোমাদের দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করবে, সে কথা লিখে দেওয়াই যায়।