ঘুমবাবুদের পরিচিতি

স্কুল, কোচিং, প্রাইভেট টিউটর, হোমওয়ার্ক—কত চাপ আমাদের। মাত্র ছয়-সাত ঘণ্টার ঘুমে কি মন ভরে? তাই তো মাঝেমধ্যেই ব্যাকরণ ক্লাসে ঘুমিয়ে পড়ে অনেকেই। শুধু কি আমরা? আমাদের শিক্ষকেরাও কিন্তু মাঝেমধ্যেই টেবিলে মাথা রেখে একটু ঘুমিয়ে নেন। আমরা যখন এই সুযোগে একটু কথাটথা বলি, তখনই ধমক দিয়ে বলেন, ‘অ্যাই চুপ, তোরা কি ভেবেছিস আমি ঘুমাচ্ছি? আমি মোটেও ঘুমাচ্ছি না। ঠিকই দেখছি কে কে কথা বলে। অ্যাই, সেকেন্ড বেঞ্চের কর্নারে বসা নবাব, উঠে দাঁড়া...!’

তোমাদের কথা জানি না, আমার তো মাঝেমধ্যেই মনে হয়, ইশ্! এসব ছুড়ে ফেলে সারা দিন আরাম করে যদি ঘুমাতে পারতাম! তোমরা হয়তো ধমক দিয়ে বলবে, ‘আরে ধুর, সারা দিন আবার কেউ ঘুমায় নাকি?’ উত্তরে আমি বলব, ‘ঘুমায়। অবশ্যই ঘুমায়।’ চলো দেখি, কারা সেই সৌভাগ্যবান!

কোয়ালা

অত্যন্ত কিউট ধাঁচের এই প্রাণীকে ছোট সাইজের ভালুক মনে করে অনেকে। কিন্তু এরা ভালুক নয়। নিজেদের ‘কোয়ালা’ হিসেবে পরিচয় দিতেই পছন্দ করে এই স্তন্যপায়ী প্রাণীরা। তোমরা যখন স্কুল, কোচিং, টিচার আর হোমওয়ার্কের জালে আটকে থাকো, এরা তখন গাছের ডালে শুয়ে-বসে আরাম করে ঘুমায়। দিনে ১৮-২০ ঘণ্টা ঘুমানো এদের কাছে কোনো ব্যাপারই না। কোয়ালারা থাকে অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন এলাকায়।

শ্লথ

ভাগ্য ভালো যে শ্লথদের স্কুলে যেতে হয় না। কারণ, তারা এতই অলস এবং ধীরস্থির যে কোনো দিনই সঠিক সময়ে স্কুলে পৌঁছাতে পারত না। কে জানে, হয়তো নিজস্ব স্কুল আছে তাদের, যেখানে যে যত দেরি করে আসবে, সেই পাবে পুরস্কার! আগে এলে নম্বর কাটা! ‘শ্লথগতি’ কথাটা বোধ হয় তাদের সম্মানেই বলা হয়। এরা এতই অলস যে প্রতিদিন নির্বিঘ্নে ২০ ঘণ্টা ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিতে পারে। এলোমেলো লোমশের অলস এই স্তন্যপায়ী প্রাণীটির প্রিয় খাবার আম। দক্ষিণ আমেরিকায় গেলে দেখা পাবে শ্লথের। নড়াচড়া করাকেও বেশ পরিশ্রমের কাজ মনে করে এরা। আসলে, এটা শ্লথদের একধরনের কৌশল বলে মনে করেন অনেকে। শিকারিদের কবল থেকে বাঁচতেই চুপচাপ এক জায়গায় ঘুমিয়ে থাকে এরা। সঞ্চয় করে শক্তি। সেই শক্তি দিয়ে অত্যন্ত ধীরগতিতে আম পেড়ে খায় শ্লথ।

আমার বন্ধুদের অনেকেই বোধ হয় বড় হয়ে শ্লথ হতে চায়।

লেমুর

ল্যাটিন ভাষায় নাম পাওয়া এই বিড়ালদের বলা হয় রাতের আত্মা। এরা সাধারণত মাদাগাস্কারের অধিবাসী। একটি লেমুর তার বন্ধু লেমুরের সঙ্গে আলাপচারিতা গড়ে তোলে ঘ্রাণেন্দ্রিয়র মাধ্যমে। নিশাচর হলেও প্রয়োজনের খাতিরে তারা দিনেও সক্রিয় হতে পারে। এদের গড় ঘুমের পরিমাণ প্রতিদিন ১৬ ঘণ্টা!

পান্ডা

পান্ডা যে অলস, তা তো সবাই জানে। কুংফু পান্ডা পো ছাড়া দুনিয়ার সব পান্ডাই ঘুমপাগল। দেড় মিটার উচ্চতা ও প্রায় ৭০-১০০ কেজি ওজনের এই প্রাণী প্রতিদিন গড়ে ১০ ঘণ্টা ঘুমায়। আমরা মাঝেমধ্যে পরীক্ষায় বাঁশ খাই, তবে পান্ডার প্রধান খাদ্যই বাঁশ। এক নাগাড়ে ১২ কেজি পর্যন্ত বাঁশ খাওয়ার রেকর্ড আছে তাদের। বাঁশ খাওয়া আর ঘুম—এই নিয়েই পান্ডার জীবন!

জলহস্তী

জলহস্তীরা সাঁতারে যেমন দক্ষ, তেমনি দক্ষ ঘুমেও। প্রতিদিন গড়ে ১৬-১৮ ঘণ্টা ঘুমানো কোনো সহজ ব্যাপার নয়। অবশ্য এমন বিশাল দেহ থাকলে আমিও বোধ হয় ১৬-১৮ ঘণ্টা ঘুমাতাম। জলহস্তীরা দিনের অধিকাংশ সময় কাটায় পানিতে। এমনকি পানির নিচে হেঁটে বেড়াতেও জুড়ি নেই জলহস্তীদের। একটি বিশাল পুরুষ জলহস্তীর নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ঘুরে বেড়ায় জলহস্তীর দল। তবে ঘুমের সময় বিরক্ত করলে তারা বেশ আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। অতএব সাবধান। তোমরা যদি না জাগো ভাই কেমনে সকাল হবে—টাইপ কথা তাদের বলতে যেয়ো না।

সিংহ

সিংহকে বলা হয় বনের রাজা। রাজাদের কাজই তো প্রজাদের ওপর ছড়ি ঘুরিয়ে আরাম-আয়েশে দিন কাটানো। সিংহও তা-ই করে। খুব বেশি কাজ না থাকলে দিনে গড়ে ১৮-২০ ঘণ্টা ঘুমায় সিংহ। বনে কোনো কাজ না থাকলে তো কথাই নেই, তখন সারা দিনই ঘুমাতে পছন্দ করে সিংহ। তবে খবরদার! সিংহ মামার ঘুম ভাঙাতে যেয়ো না, রেগে গেলে সিংহ যে চিত্কার দেয়, তা কিন্তু পাঁচ মাইল পর্যন্ত পৌঁছে যায়!

সূত্র: ব্রাইট সাইড, ন্যাটজিও কিডস