গুড্ডুবুড়ার ঈদের চাঁদ দেখা

অলংকরণ : জান্নাতুল ফেরদৌস
অলংকরণ : জান্নাতুল ফেরদৌস

গুড্ডুবুড়ার মা বললেন, ‘কালকে ঈদ হবে না।’ 
গুড্ডুবুড়া মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল, ‘কেন মা? কালকে কেন ঈদ হবে না?’
মা বললেন, ‘আজ চাঁদ দেখা যায়নি তো, তাই কালকে ঈদ হবে না। যেদিন চাঁদ ওঠে, চাঁদ দেখা যায়, তার পরের দিন ঈদ হয়।’
গুড্ডুবুড়া বলল, ‘পাঁচ দিন আগেই তো আমি চাঁদ দেখেছিলাম। তারপরের দিন তো ঈদ হয়নি।’
মা বললেন, ‘চাঁদ দেখলেই হবে না। রমজান মাস শেষ হয়ে যাবে। তারপর নতুন চাঁদ উঠবে। সেই চাঁদ যেদিন দেখা যাবে, তারপরের দিন ঈদ।’
গুড্ডুবুড়া একটা ছোট্ট ছেলে। সে ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া করে না। তাই তার মাথায় বুদ্ধিশুদ্ধি কিছু নেই। এত কঠিন কথার সে কিছুই বুঝল না।
বাবা মোবাইল ফোনে কথা বলছিলেন। কথা শেষ করে তিনি বললেন, ‘গুড্ডুবুড়ার মা শুনেছ! তোমার জন্য ঈদের উপহার আসছে!’
মা বললেন, ‘তাই নাকি! কোত্থেকে?’
‘আমাদের অফিস থেকে। চাঁদ মিয়া নিয়ে আসছে।’
‘কী উপহার?’
‘সেমাই। দুধ। চিনি। গরমমসলা। পোলাওয়ের চাল। ঘি। এই সব আরকি!’
মা খুশি হলেন। বললেন, ‘তাই বলে তুমি কিন্তু চাঁদকে আবার ঘরে ঢুকতে দিয়ো না।’
বাবা বললেন, ‘না না, চাঁদ ঘরে ঢুকবে না। ও আমাদের বাসার নিচতলায় গেটে সিকিউরিটি গার্ডের কাছে প্যাকেটটা রেখে চলে যাবে। দাঁড়াও। আমি বারান্দা থেকে দেখছি।’


বাবা বারান্দায় দাঁড়ালেন। এবারের ঈদ এসেছে করোনার মধ্যে। কেউ কারও কাছে যেতে পারবে না। অন্তত ৬ ফুট দূরে থাকতে হবে। আহা, তাদের অফিসের সহকারী চাঁদ মিয়া বাসা পর্যন্ত আসছে উপহারসামগ্রী নিয়ে। তাকে একটু ঘরে বসতেও দিতে পারবেন না তিনি। 
বাবা বললেন, ‘ওই যে দেখা যাচ্ছে। রাস্তার ইলেকট্রিসিটির আলোয় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। চাঁদ এসে গেছে।’
তারপর বাবা বললেন, ‘গুড্ডুবুড়ার মা শোনো। চাঁদকে উঠতে বলি। আমাদের গেটে ও জিনিসগুলো রেখে দিক। আমি মাস্ক পরে নিই। ওকে পাঁচ শ টাকা দিই। ঈদের আগে বেচারা কষ্ট করে সন্ধ্যার পর এসেছে।’
মা বললেন, ‘আচ্ছা চাঁদকে উঠতে বলো।’
বাবা ফোন করলেন, ‘হ্যালো, চাঁদ। ওপরে ওঠো।’


চাঁদ মিয়া তেতলায় উঠলেন। বাবা মাস্ক পরে দরজার খুলে তাকে পাঁচ শ টাকা দিলেন।
গুড্ডুবুড়াও দরজার কাছে গেল। চাঁদ মামাকে দেখল। চাঁদ মামাও মাস্ক পরেছেন। তার গায়ে হলুদ একটা জিনিস, রেইনকোটের মতো। হাতে আবার দস্তানা। মানে গ্লাভস।
চাঁদ মিয়া সালাম দিয়ে বিদায় নিলেন।

গুড্ডুবুড়া বলল, ‘মা। কাল ঈদ।’
মা বললেন, ‘না। পরশু।’
গুড্ডুবুড়া বলল, ‘আমি নিজে দেখেছি। চাঁদ মামা উঠেছেন। এবং আমি তাঁকে নিজের চোখে দেখেছি।’

মা বিস্মিত। চাঁদ উঠেছে! দেখা গেছে। হতেও পারে। এর আগে দুই–তিনবার এ রকম হয়েছে। রাত ১১টায় বলেছে, কালকে ঈদ। তিনি টেলিভিশন খুললেন। টেলিভিশনে পর্দায় লেখা উঠছে, ‘দেশের কোথাও চাঁদ দেখা যায়নি। পরশু ঈদ।’
তিনি মোবাইল ফোনে প্রথম আলো ডট কম খুললেন। বড় করে লেখা, ‘চাঁদ দেখা যায়নি। পরশু ঈদ।’
মা ফোন করলেন ছোট খালাকে। ‘এই সিমি, চাঁদ কি উঠেছে?’
‘না তো আপা।’
‘তাহলে গুড্ডু যে বলছে...এই গুড্ডু...গুড্ডু...কই টেলিভিশনে বলছে, চাঁদ দেখা যায়নি। চাঁদ ওঠেনি। প্রথম আলো বলছে, চাঁদ ওঠেনি। তোর ছোট খালা বলছেন, চাঁদ ওঠেনি। তুই কোত্থেকে খবর পেলি চাঁদ উঠেছে?’
গুড্ডু বলল, ‘আমি খবর পাইনি। আমি দেখেছি। চাঁদ মামা উঠেছেন। তিনি তিনতলায় নিজে উঠে এসেছেন। বাবা তাকে পাঁচ শ টাকা দিয়েছেন। তিনি আমাদের সেমাই, চাল, ঘি দিয়ে গেছেন।’

গুড্ডুবুড়ার বাবা হাসতে লাগলেন। ওর কী দোষ। চাঁদ মিয়ার নাম চাঁদ হলে গুড্ডুবুড়া তো এই কথা বলতেই পারে!